৮৫ কেজি ওজনের ১০ বছরের সুমো কুস্তিগীর কিয়োটা

রিংয়ের মধ্যে ভারোত্তোলন করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে ১০ বছর বয়সী সুমো কুস্তিগীর কিয়োটা কুমাগাই। ৮৫ কেজি ওজনের এই ক্ষুদে কুস্তিগীর তার বয়সী অন্য শিশুর চেয়ে আকারে প্রায় দ্বিগুণ। আর এরই মধ্যে তার থেকে পাঁচ-ছয় বছরের বড়দেরও হার মানতে হয়েছে এই ক্ষুদে কুস্তিগীরের কাছে।
প্রশিক্ষকের সঙ্গে কিয়োটা কুমাগাই। ছবি: রয়টার্স

রিংয়ের মধ্যে ভারোত্তোলন করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে ১০ বছর বয়সী সুমো কুস্তিগীর কিয়োটা কুমাগাই। ৮৫ কেজি ওজনের এই ক্ষুদে কুস্তিগীর তার বয়সী অন্য শিশুর চেয়ে আকারে প্রায় দ্বিগুণ। আর এরই মধ্যে তার থেকে পাঁচ-ছয় বছরের বড়দেরও হার মানতে হয়েছে এই ক্ষুদে কুস্তিগীরের কাছে।

মঙ্গলবার বার্তাসংস্থা রয়টার্স ক্ষুদে এই কুস্তিগীরকে নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

রয়টার্স জানায়, গত বছর যুক্তরাজ্য ও ইউক্রেনের মতো দূর দেশে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সবাইকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব -১০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কিয়োটা কুমাগাই।

বাবা তাইসুকে জানিয়েছেন, কিয়োটা নিরলস প্র্যাকটিস করে। সপ্তাহে ছয় দিনই স্থানীয় সুমো ক্লাবে অথবা ভারোত্তোলন করে। সুমো রেসলিংয়ের জন্য যে শারীরিক নমনীয়তা ও গতি প্রয়োজন, সেটির জন্য সে নিয়মিত সাঁতার কাটে, দৌঁড়ায় ও ব্যায়াম করে।

কিন্ডারগার্টেনে পড়ার সময়ই কিয়োটাকে তার বাবা তাইসুকে একটি টুর্নামেন্টে নিয়ে গিয়েছিল। এ পর থেকেই সুমোতে আগ্রহ জন্মে কিয়োটার। তার বাবা তাইসুকেও সুমো কুস্তিগীর ছিলেন। কিন্তু তিনি তেমন সফল হতে পারেননি।

তাইসুকে বলেন, ‘আমি তাকে কিছুই শেখাইনি। সে নিজ থেকেই বিভিন্ন জিনিস করতে পারতো। সুমোর জন্য এক ধরনের বিশেষ প্রতিভা লাগে এবং তার মধ্যে সেই প্রতিভা প্রাকৃতিকভাবেই আছে। সে টুর্নামেন্ট জিতেছে। আমার ধারণা, তার মধ্যে বিশেষ কিছু আছে।’

আকারে দ্বিগুণ, ব্যাপক শক্তিধর হলেও কিয়োটা কথা বলে খুব কম। কেন সে কুস্তিগীর হতে চায় জানতে চাইলে মুচকি হেসে জানায়, ‘আমার নিজের চাইতে বয়সে বড়দের হারানোটা মজার।’

ছেলের প্রতিভা সম্পর্কে ধারণা হওয়ার পরই তাইসুকে পরিবারসহ ফুকাগাওয়া অঞ্চলে চলে যান। এ অঞ্চলটি সুমো রেসলারদের জন্য বিখ্যাত। এ অঞ্চলেই অনেক বাঘা বাঘা কুস্তিগীর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, বড় হয়েছেন।

ফুকাগাওয়ায় অনেক সুমো ক্লাব আছে। ওই অঞ্চলে সুমোর ঈশ্বরের ঘর হিসেবে প্রচলিত নমনোসুকুনে মন্দিরও অবস্থিত। ফলে কিয়োটার বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এ অঞ্চলটি ব্যাপক সাহায্য করেছে।

জানা গেছে, বাবা ও ছেলে ওয়ান-অন-ওয়ান প্রশিক্ষণের জন্য স্থানীয় মন্দিরে যান। প্রধান মন্দিরের সামনে কার্পেটের উপরে ও নিচে কুস্তি চলে।

ছেলের উপর অনেক বেশি চাপ পড়ছে কিনা জবাবে তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, ‘এটিই তার ভেতর থেকে সর্বোচ্চটাকে বের করে আনার একমাত্র উপায়।’

তাইসুকে আরও বলেন, ‘ও অন্যান্য কাজের জন্যও যথেষ্ট সময় পায় বলে আমি মনে করি। বন্ধুদের সঙ্গে খেলার জন্যও যথেষ্ট সময় পায়। ফলে, ওর উপর খুব বেশি চাপ পড়ছে এটা আমি মনে করি না।’

সুমো প্রশিক্ষণ বেশ ব্যয়বহুল। তবে, মা মাকিকোসহ পুরো পরিবারই কিয়োটার ব্যাপারে আশাবাদী।

যে কোনও সুমো কুস্তিগীরের জন্য খাদ্যভাস বড় বিষয়। কিয়োটার খাদ্যাভাসে গড়ে প্রতিদিন এক লিটারেরও বেশি দুধ ও প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন প্রয়োজন হয়। প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৭০০ থেকে ৪ হাজার ক্যালোরি গ্রহণ করে সে। তার প্রিয় খাবার স্টেক।

তাইসুকে জানান, আগামী দুই বছরের মধ্যে যখন সে মিডল স্কুলে যাবে তার আগে কিয়োটাকে আরও ২০ কেজি ওজন বাড়াতে হবে। যদি সে তা করতে পারে তবে আশা করা যায় যে, সে হাই প্রোফাইল কোনো একটি সুমো স্টেবল (যেখানে সুমো কুস্তিগীররা থাকে ও প্রশিক্ষণ নেয়) এ সুযোগ পাবে।

সুমো স্টেবলে থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যাপার কিয়োতার আগ্রহও আছে বলে জানান তিনি।

কিয়োতার বর্তমান কোচ, সাবেক পেশাদার কুস্তিগীর শিনিচি তাইরা জানান, কুস্তিগীর হতে যা প্রয়োজন তার সবই কিয়োটার আছে।

তাইরা বলেন, ‘এই মুহূর্তে, তার দুর্দান্ত প্রতিভা আছে। সে এই খেলায় সর্বোচ্চ স্তর ‘যোকোজুনা’য় পৌঁছাতে চায়। তবে সে এটাও জানে যে, এটা বেশ কঠিন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুমো প্রশিক্ষণ এমন একটি বিষয় যাকে ঠিক আনন্দের বলা যায় না। যখন এটি উপরের স্তরের দিকে যায়, তখন বেশ কঠিন হয়ে ওঠে ... এমনকি আমি নিজেও মাঝে মাঝে এটা ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভেবেছিলাম।’

সাফল্যের শীর্ষে থাকা ক্ষুদে কুস্তিগীর কিয়োটা কুমোগাইকে নিয়ে তার পরিবার ও প্রশিক্ষকরা সবাই ভীষণ গর্বিত।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago