‘সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভালো টেস্ট ম্যাচ জয়’

গৌরবময় অর্জনের পর ভারতকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটাররা।
india win australia
ছবি: টুইটার

সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তান ও স্ত্রীর পাশে থাকতে আগেই ছুটি নিয়েছিলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। চোট সমস্যার কারণে টেস্ট দলের মূল খেলোয়াড়দের অধিকাংশই ছিলেন না ব্রিসবেনে। তারপরও বারবার রঙ বদলানো ম্যাচে অসাধারণ লড়াই করে আজিঙ্কা রাহানের ভাঙাচোরা দল কেবল অস্ট্রেলিয়ার দর্প চূর্ণই করেনি, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে স্মরণীয় এক জয়ও ছিনিয়ে এনেছে। এমন গৌরবময় অর্জনের পর ভারতকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটাররা।

মঙ্গলবার ৩ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয়ে বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের ট্রফি ধরে রেখেছে ভারত। শেষদিনে ৩২৪ রান তোলার সমীকরণ মিলিয়ে তারা এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যার উপমা দেওয়া কঠিন। শুবমান গিল, চেতেশ্বর পূজারার পর রিশভ পান্তের বীরত্ব তাই অবধারিতভাবে চিরস্থায়ী আসন গড়েছে ইতিহাসের পাতায়।

নিজে একজন অস্ট্রেলিয়ান হলেও হারের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেয়ে টেস্ট ক্রিকেটের রোমাঞ্চে বুঁদ হওয়ার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে জানান শেন ওয়ার্ন, ‘টেস্ট ক্রিকেট দীর্ঘজীবী হোক! গত দুই মাসে আমরা যা দেখেছি, তা আর কোনো বৈশ্বিক ক্রীড়া আপনাকে দেয়নি। সম্পূর্ণভাবে টেস্ট ক্রিকেটকে ভালোবাসি। অস্ট্রেলিয়ার দিক থেকে বললে- নিজেদের চেয়ে ভালো প্রতিপক্ষের কাছে পরাজিত হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অবমাননার অবকাশ নেই। তবে আমি নিশ্চিত যে, পুরো সিরিজে তাদের স্ট্র্যাটেজি ও ট্যাকটিকস নিয়ে বিশাল আলোচনা হবে সামনে।’

তিনি যোগ করেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে এর চেয়ে ভালো টেস্ট ম্যাচ জয়ের কথা আমি স্মরণ করতে পারি না।’

টি-টোয়েন্টির যুগে পাঁচ দিনের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাটা কেন জন্ম হয়, তার উদাহরণ হিসেবে এ টেস্টকে তুলে ধরেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি স্যার ভিভ রিচার্ডস, ‘এমনি এমনি টেস্ট ক্রিকেটকে তো আর ভালোবাসা হয় না। দুর্দান্ত ম্যাচ। জয়ের জন্য অভিনন্দন ভারতীয় দলকে আর অস্ট্রেলিয়াকে অভিনন্দন এমন সিরিজ উপহার দেওয়ার জন্য।’

অজিদের মাটিতে নামানোকে ভারতের অন্যতম সেরা সিরিজ জয় বলছেন দেশটির কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার, ‘প্রতিটা সেশনে আমরা নতুন নায়ক খুঁজে পেয়েছি। যতবার আমরা মার খেয়েছি, ততবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি। ভয়হীন ক্রিকেট খেলতে আমরা বিশ্বাসের সীমানা আরও দূরে ঠেলে দিয়েছি। আঘাত ও অনিশ্চয়তাগুলোকে শান্তি ও আত্মবিশ্বাসে পরিণত করতে উল্টো আঘাত হেনেছি। অন্যতম সেরা সিরিজ জয়! অভিনন্দন ভারতকে।’

এমন জয়ে আহ্লাদিত হয়ে বর্তমান বিসিসিআই সভাপতি ও ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি তো পাঁচ কোটি রূপি পুরস্কারেরই ঘোষণা দেন, ‘অনবদ্য জয়। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে এইভাবে সিরিজ জয় ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দলের জন্য বিসিসিআই ৫ কোটি রূপি বোনাস ঘোষণা করছে। যদিও এই জয়ের তাৎপর্য কোনো সংখ্যা দিয়ে বোঝানো যাবে না। সফরকারী দলের সবাই অসাধারণ করেছ।’

ভারতের জয়ের মাঝে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অ্যাশেজ পুনরুদ্ধারের বীজ খুঁজে পেয়েছেন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভন, ‘সর্বকালের সেরা টেস্ট সিরিজ জয়। সাবাস। ইংল্যান্ডকে অ্যাশেজ ফিরিয়ে আনার পথ দেখিয়ে দিয়েছে ভারত।’

ভারতের নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলি সমালোচকদের একহাত নিয়ে লিখেন, ‘কী দারুণ জয়! অ্যাডিলেডের পরে যারা আমাদের নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিল, তারা প্রত্যেকে উঠে দাঁড়ান এবং খেয়াল করুন। জেদ আর সংকল্পই আমাদের পুরো পথের সঙ্গী ছিল। ছেলদের ও টিম ম্যানেজমেন্টকে সাধুবাদ। ঐতিহাসিক কীর্তি উপভোগ করো তোমরা।’

সাবেক ভারতীয় তারকা বিরেন্দর শেওয়াগ সুযোগ পেয়ে অস্ট্রেলিয়ানদের খোঁচা মারতে ভুল করেননি, ‘ভারতের অনেক খেলোয়াড় আহত হয়েছিল। তবে সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ানদের অহংকার ও গর্ব। টেস্ট সিরিজটি ছিল সিনেমার মতো, যেখানে ভারতের প্রতিটি সদস্য হিরো এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন আবার সুপারহিরো।’

তার পথে হাঁটেন প্রাক্তন ইংলিশ ক্রিকেটার কেভিন পিটারসেনও, ‘অস্ট্রেলিয়াকে  এতটা অবিশ্বাস্যভাবে ভারতের হারানোর ক্ষেত্রে কেবল একটি বিষয়ই আমাকে খোঁচাচ্ছে, ব্রিসবেনে হয়েছে টেস্টটি। এটি এমন একটি শহর, যা এই ঘটনার যোগ্য নয়! হাসতে হাসতে মরেই যাচ্ছি। ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে, পান্ত যেন আজ (মঙ্গলবার) অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বালক থেকে পূর্ণবয়স্ক মানুষে পরিণত হয়েছিল!’

আর প্রোটিয়া কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্সের ভাবনায় ভারতের ক্রিকেট সংস্কৃতির গভীরতার কথা, ‘কী অপূর্ব একটি টেস্ট ম্যাচ! ভারতীয় ক্রিকেটের গভীরতার মাত্রা ভয়ঙ্কর। মিষ্টি সংখ্যা ১৭-এর রিশভ পান্তকে (তার জার্সি নম্বর ১৭) বলব, দারুণ খেলেছ, তরুণ। টেস্ট ক্রিকেটের সেরা বিজ্ঞাপন এটি।’

Comments