সবই খোলা, বন্ধ শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

ধাপে ধাপে সাবধানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা উচিত: রাশেদা কে চৌধুরী, বালুর মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে ভালো আছি ভাবাটা খুবই দুঃখজনক: অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী আরও পিছিয়ে যাচ্ছে: অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস
রাশেদা কে চৌধুরী, অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন ও অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। (বাম দিক থেকে)

হাট-বাজার, অফিস-আদালত সবই খুলে দেওয়া হয়েছে। রাস্তা-ঘাট কিংবা গণপরিবহন, সবই আগের মতো। বিয়েসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানও হচ্ছে। কিন্তু, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ। যদিও বলা হচ্ছে, দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীই দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নেয়নি।

বর্তমানে পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন এখনো বন্ধ? সরকার বলছে, করোনার সংক্রমণ-ঝুঁকির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিন্তু, এই একটাই ব্যবস্থা? আর কোনো বিকল্প নেই? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার প্রভাবটা কতটা মারাত্মক? বর্তমানে করণীয় কী?, দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঙ্গে।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘সবাই চাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলুক। কিন্তু, এখনো কেন বন্ধ? এখানে ধারণাগত দুটো উত্তর রয়েছে। প্রথমত, বাকি সব খোলাটা ব্যক্তিগত পছন্দ। আমি শপিং মল, চিড়িয়াখানা কিংবা সিনেমা হলে যাব কি না, সেটা আমার ইচ্ছা। কিন্তু, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে সেটার সব দায়-দায়িত্ব কিন্তু সরকারের ওপর বর্তাবে। তখন সবাই কিন্তু সরকারকেই দোষারোপ করবে। শুরুর দিকের পরিস্থিতি মনে করলে দেখবেন, তখন সবাই কিন্তু বলেছিল যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন এখনো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে না। সরকার দায়িত্ব নিয়ে খুলতে গেলে তিনটি বিষয় বিবেচনা করতে হচ্ছে। সেগুলো হলো— স্বাস্থ্যঝুঁকি, করোনার সংক্রমণ লাগামের মধ্যে এসেছে কি না ও স্বাস্থ্যবিধি মানা যাবে কি না। সত্যি বলতে আমরা সবাই ভালোভাবে জানি যে, অনেক প্রতিষ্ঠানের সেই (স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার) সক্ষমতা নেই। দ্বিতীয়ত হলো এটাই যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে গেলে সেই প্রস্তুতিগুলো নিয়েই খুলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে, স্টেক হোল্ডাররা চাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হোক। আমরা এ পর্যন্ত যতটুকু আভাস পেয়েছি, আমি মনে করি সরকারও তাই চাচ্ছে। কিন্তু, একটা কথা বলা হচ্ছে, পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। এখন সেই সময়টা কখন হবে, সেই প্রশ্ন আমাদের সবারই। তাই আমরা পরামর্শ দিচ্ছি যে, যেখানে যেখানে সংক্রমণের হার কম, সেখানে সেখানে আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক। সেই তথ্য তো সরকারের হাতে আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে তো একটা ম্যাপিং থাকার কথা। সেটা বিবেচনা করে করোনা বিষয়ক কারিগরি কমিটি সরকারকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারে যে, যেখানে সংক্রমণের হার কম, সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যেতে পারে। দুই সপ্তাহ চালালেই অবস্থা বোঝা যাবে। পরে সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এগোতে পারি।’

‘আশার কথা হচ্ছে, আমাদের এখানে সংক্রমণের কার্ভটা নিম্নমুখী। সেখানে সরকার যদি মনে করে যে, যেসব এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে, সেখানে র‍্যানডম টেস্টিং করে ফেলবে, সেটাও করতে পারে। আমাদের পরামর্শ হলো, যত তাড়াতাড়ি ঘোষণা আসবে, তত ভালো। কিন্তু, কত তাড়াতাড়ি করবে, সেটা আমরা বলিনি। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে খোলার কথা বলেছি। এই প্রস্তুতি নিতে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে’, বলেন তিনি।

নিজেদের গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিশুরা দূরশিক্ষণের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বেশি বঞ্চিত হচ্ছে। এখন সেসব জায়গায় সংক্রমণের হার কম কি না, সেটা আমরা বলতে পারব না। সেটা সরকার বলতে পারবে। কাজেই যদি দেখা যায়, সেসব জায়গাতে সংক্রমণের হারও কম, তাহলে সেখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যেতে পারে। তাই আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব ঘোষণা দিয়ে দেওয়া যায় যে, কবে, কোথায়, কীভাবে খোলা হবে এবং পূর্ব প্রস্তুতিগুলোর বিষয়ে জানানো। শিফট বাড়ানো, সময় কমানোসহ নানা পরামর্শ আমরা সরকারকে দিয়েছি। আরেকটা জিনিস হচ্ছে উপরের লেভেল থেকে এগোনো। আগে নবম-দশম শ্রেণির ক্লাস খোলা। এরপর ধীরে ধীরে অন্যগুলো। কারণ, শিশু শিক্ষার্থীরা এতদিন পর বন্ধুদের দেখবে, তারা তো কাছে যাবেই, সেটা আমরা ঠেকাতে পারব না। আবার তারা দীর্ঘক্ষণ মাস্কও পরে থাকতে পারবে না। এজন্য আগে বোধহয় হাইস্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া দরকার।’

সবশেষে তিনি বলেন, ‘সবমিলিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করে ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে খুলে দেওয়ার পরামর্শই দিয়েছি আমরা। এখানে আরেকটা বিষয় হলো, স্থানীয় এনজিও ও কমিউনিটিকেও সাহায্য করতে হবে। গ্যাস চলে গেলে যেমন মাইকিং করা হয়, তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে, শিশুদের পাঠান, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করুন, এগুলোও তো মাইকিং করে বলা যায়। এগুলো সরকার করতে পারবে না। স্থানীয় সরকারকে এখানে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। মোদ্দা কথা, ধাপে ধাপে সাবধানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা উচিত। এবং খোলার পরে পাওয়া শিক্ষাটা নিয়ে পরবর্তীতে এগোতে হবে। সব দেশই তাই করেছে। পরে যদি দেখা যায় করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে, তাহলে তো আবার বন্ধ করে দেওয়া যাবে।’

সবকিছুই যেখানে স্বাভাবিক, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো কেন বন্ধ? একই প্রশ্ন রেখে অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলছিলেন, ‘অন্যান্য যেসব দেশে করোনা পরিস্থিতি আমাদের চেয়ে ভয়াবহ, সেখানেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা। পরিস্থিতি অতিরিক্ত খারাপ হলে কিংবা লকডাউন থাকা ছাড়া সেসব দেশের সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে কীভাবে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে রাখা যায়। কিন্তু, আমাদের দেশে করোনা পরিস্থিতি তেমন খারাপ না হওয়া সত্ত্বেও সেরকম চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে যা বলা হচ্ছে, সেই অনুযায়ী তো আমাদের পরিস্থিতি তেমন খারাপ না। পথে-ঘাটে বের হলেও তাই মনে হয়। তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো প্রচেষ্টা কেন দেখছি না?’

‘এই বয়সেই ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের সামাজিকতা শেখার কথা। কিন্তু, দীর্ঘ প্রায় এক বছর ঘরে বসে থেকে তাদের যে মেন্টাল ট্রমা তৈরি হয়েছে, তারা যে ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে, এই ক্ষতি অপূরণীয়। ভবিষ্যতে কীভাবে এই ক্ষতি পূরণ করবে? শিক্ষার্থীদের নিয়ে যে সরকার সেভাবে ভাবছে, সেই ভাবনাটাই তাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সরকার নিরাপদে থাকছে। ভাবছে, যদি সংক্রমণ বেড়ে যায়, তাহলে বিপদে পড়তে হবে। তারচেয়ে বন্ধ করে রাখাই উত্তম। কিন্তু, এভাবে বালুর মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে আমি ভালো আছি ভাবা, এটা তো খুবই দুঃখজনক’, বলেন তিনি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে এগোনোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শুরুতে যদি সপ্তাহে দুই বা তিন দিন স্কুল খোলা রাখা হয়; দুই বা তিন শিফটে ক্লাস হয়, যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যায়; কিংবা ক্লাসের সময় কমানো হয়, তাহলে আমার মনে হয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কেউই আপত্তি করবেন না। এখন সবাই এটাই চাচ্ছে। আমার মনে হয় তাৎক্ষণিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত। দিয়ে দেখা যে, পরিস্থিতি কেমন হয়। শিক্ষার্থীরা তো এখনো বের হচ্ছে। যারা বাজারে যাওয়ার, যাচ্ছে। আড্ডা দেওয়ার, দিচ্ছে। এটা কি মঙ্গলজনক? কিংবা যারা সারাদিন বাসায় থেকে গেমস খেলছে, ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়ছে, হয়তো অনেকে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে, এটা কি মঙ্গলজনক?’

‘ইংল্যান্ডের অবস্থা এত খারাপ, অথচ সেখানে কিছুদিন আগেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। সেসব দেশে চিন্তা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবার শেষে বন্ধ করার কথা। কারণ, এই ক্ষতির ভয়াবহতা অনেক বেশি। এর প্রভাব যে কী পরিমাণ, সেটা তো করোনার চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। এ নিয়ে তো কেউ কথা বলছে না। শুধু বন্ধ করে রাখলাম, ঝুঁকি নিলাম না। কিন্তু মাঝেমধ্যে ঝুঁকিও নিতে হবে। ক্যালকুলেটেড ওয়েতে ঝুঁকি নিতে হয়’, যোগ করেন তিনি।

দূরশিক্ষণ কার্যক্রম নিয়ে ঢাবির এই অধ্যাপক বলেন, ‘অনেকে বাসায় বিদ্যুৎ থাকে না, অনেকের ডিভাইস নেই, অনেকের ইন্টারনেট প্যাকেজ কেনার মতো অবস্থা নেই, অনেকে অনলাইনে ক্লাস পছন্দ করে না, অনেক শিক্ষকও এতে অভ্যস্ত না কিংবা কোনো না কোনো কারণে অনেকে দূরশিক্ষণের কার্যক্রম থেকে বাইরে থাকে। ফলে অনলাইন ক্লাস কখনই বিকল্প হতে পারে না। শিশুদের যে সামাজিকীকরণ, সেটা তো অনলাইনে হয় না। অল্প বয়সের শিশুদের জন্য এটা খুবই প্রয়োজন। তা ছাড়া, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যও ব্যাহত হয়। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যে ক্ষতিটা হচ্ছে, সেটা তো অপূরণীয়।’

সবশেষে সরকারের প্রতি আহ্বান রেখে তিনি বলেন, ‘তাৎক্ষণিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে আমরা সরকারের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দেখতে চাই। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার যে প্রভাব, সেটা মারাত্মক ক্ষতিকর। সবমিলিয়ে আমার আহ্বান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার যে আপ্রাণ চেষ্টা, সেটা সরকারের মাঝে দেখতে চাই। সেটা থাকলে অবশ্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব। বলা হয়, আমাদের করোনা পরিস্থিতি অনেক ভালো। তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ থাকবে? এটা হলো গা বাঁচিয়ে চলা। এভাবে চলা একটা সরকারের উচিত না। এতে কোটি কোটি ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসও। তিনি বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ-ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু, এই যুক্তিটা টেকসই না। যদি অন্য সবকিছুই খোলা থাকে, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন খোলা রাখা যাবে না? এ ছাড়া, শিক্ষার্থীদের বয়সও কম, সেক্ষেত্রে তাদের ঝুঁকিও কিন্তু তুলনামূলক কম। আমার মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে না খোলার পেছনে রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে। কারণ, হলগুলো যদি খুলে দেয় এবং কোনো শিক্ষার্থী যদি মারা যায়, তখন মরদেহ নিয়ে মিছিল হতে পারে। তাই সরকার রাজনৈতিকভাবে ভয় পাচ্ছে কি না, এমনটাও হতে পারে। সরকার তো আন্দোলনকে ভয় পায়। ফলে সেটাও একটা কারণ হতে পারে। অন্যথায় খুলে না দেওয়ার কারণ আমি দেখছি না।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় শিক্ষার্থীদের ওপর খুবই নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই ডিভাইস নেই। অনেকের ইন্টারনেট কেনার মতো সামর্থ্য নেই। এখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়তো এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে যাচ্ছে। কারণ, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রান্তিক পরিবারের ছেলে-মেয়েরাই বেশি পড়ে। টেকনোলজিক্যাল ডিভাইডের কারণে আগে থেকেই পৃথিবীতে এক দল এগিয়ে, আরেক দল পিছিয়ে ছিল। এর মধ্যে পিছিয়ে থাকারা বর্তমান পরিস্থিতিতে আরও পিছিয়ে গিয়েছে ও যাচ্ছে বলে আমার মনে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নীতি কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত। ভারত থেকে শুরু করে অনেক জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা। আমাদের এখানে কেন বন্ধ, এর পেছনে কোনো যুক্তি আমি খুঁজে পাই না।’

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রোবায়েত ফেরদৌস আরও বলেন, ‘প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের বাইরে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী আরও পিছিয়ে গিয়েছে, যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, বাল্যবিয়ে বেড়েছে, সব মিলিয়ে ভালো কোনো কিছু হচ্ছে না। সরকারের প্রতি আমার আহ্বান, তাৎক্ষণিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পুরো জাতির জন্য বিশাল ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না।’

আরও পড়ুন:

৬৯.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী দূরশিক্ষণে অংশ নেয়নি: গণস্বাক্ষরতা অভিযান

Comments

The Daily Star  | English

BNP at 47: Caught between prospects and perils

The BNP has survived Sheikh Hasina’s 15-year rule, during which over a million cases were filed against its leaders and activists for trying to launch street agitations demanding elections under a non-partisan government. Thousands were jailed, including Chairperson Khaleda Zia and other top leaders.

12h ago