ছাত্রলীগকে চাকরি দিতে ‘সর্বোচ্চ’ অগ্রাধিকারের আশ্বাস রাবি উপাচার্যের

রাবি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান ছাত্রলীগ কর্মীদের আশ্বাস দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ পাবে তারা। চাকরির দাবিতে গত সপ্তাহে রাবি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপাচার্যকে তার বাসভবনে অবরুদ্ধ করার পর, বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছাত্রলীগ কর্মীদের ‘মিস হবে না’ বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

গত ১২ জানুয়ারি বিক্ষোভরত ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে উপাচার্যের এই কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসে পৌঁছেছে।

১১ জানুয়ারি রাতে উপাচার্যের বাসভবনে রাবি উপাচার্য, দুই উপ-উপাচার্য ও প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করে ছাত্রলীগ কর্মীরা।

এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এক তদন্তে দেখতে পায় রাবি উপাচার্য ও কর্মকর্তারা উপাচার্যের মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে নিয়োগ বিধি শিথিল করেছেন।

তদন্তের পর, গত বছর ১০ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখার সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগের খবর জানাজানি হলে বিক্ষোভ শুরু করে রাবি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তারা চাকরির বিষয়ে কথা বলতে ১১ জানুয়ারি রাতে উপাচার্য আবদুস সোবহানের বাসভবনে দেখা করতে যান। রাত দুইটার দিকে উপাচার্য বিক্ষোভরত ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘বিষয়টা (আন্দোলন) যথেষ্ট হয়েছে, আমার মনে হয়, যাদের বোঝার তারা বুঝেছে। এই জিনিসটা নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী বরাবর পৌঁছে গেছে যে, ছাত্রলীগের ছেলেরা অবস্থান নিয়েছে, চাকরির জন্য। তিনি তো অবশ্যই ভাববেন তোমাদের অবস্থানের উদ্দেশ্য।’

অডিও ক্লিপে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘…..আমি সব কথা প্রকাশ করে বলতে পারছি না, বললে আবার অসুবিধা আছে। তবে তোমাদের এই বিষয়টা আমি সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিয়ে দেখবো, ইনশাআল্লাহ। দেখো সেটা, অপেক্ষা করো।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী সরকার নিয়োগ বন্ধ রাখতে পারে না, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এমন বক্তব্যে উপাচার্য বলছেন, ‘আমরা তো চাকরি প্রত্যাশা করি, মূল দাবি এটা। তোমরা ১৯৭৩ এর অ্যাক্ট বলো, যাই বলো না কেন, মূল কাজ হলো চাকরি দরকার। তোমরা কৌশল করে ১৯৭৩ এর অ্যাক্ট টেনে বলছো।’

এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আর কতদিন অপেক্ষা করবে জানতে চাইলে উপাচার্য জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘অপেক্ষা করো। দু-চার দিন দেখো। এরপরেও না হলে, আবার তোমরা আন্দোলন করতে পারবে।’

‘তোমাদের চাকরি মিস হবে না,’ যোগ করেন তিনি।

দ্য ডেইলি স্টার টেলিফোনে উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করলে চাকরির আশ্বাসের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি ঠিক না। তাদের কোনো চাকরির আশ্বাস দেওয়া হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের শুধু চলে যেতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা প্রত্যাহার না করা হলে চাকরির ব্যবস্থা করা সম্ভব না। নিষেধাজ্ঞা যাতে না থাকে, সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আন্দোলনকারীদের চাকরির আশ্বাস দিয়েছেন, এমন অডিও ক্লিপ আছে জানিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘তারা (ছাত্রলীগ কর্মীরা) আন্দোলন করছে। আন্দোলন থেকে তাদেরকে সরাতে তো কত কিছুই বলা হয়।’

তিনি চাকরির আশ্বাসের ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, বিক্ষোভকারীরা সবাই চাকরিপ্রার্থী। ‘প্রার্থীকে তো আশ্বাস সবাই দেয়। এখানে যে শুধু ছাত্রলীগকেই চাকরি দিতে হবে, সেরকম আশ্বাস না। ওখানে তো ছাত্রলীগের বাইরের লোকজনও ছিল।’

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও বিক্ষোভকারী ইলিয়াস হোসেন কথোপকথনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ‘ভিসির সঙ্গে আমাদের এমন কোনো কথা হয়নি,’ বলেন তিনি।

উপাচার্যকে অবরুদ্ধের একদিন পর ১৩ জানুয়ারি রাবি ছাত্রলীগের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার জানান, চাকরির জন্য আন্দোলনকারীরা একসময়ের ছাত্রলীগের নিবেদিত প্রাণ।

তিনি বলেন, ‘তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করেছে। একটা চাকরির প্রত্যাশা থেকে তারা আন্দোলন করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভিসির পাশাপাশি আমরা সবাই, রাজশাহীর মেয়র, সংসদ সদস্য নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে কাজ করবো। এটা হলে আন্দোলনকারীদের জন্য চাকরির দরজা খুলে যাবে।’

Comments

The Daily Star  | English

US tariff talks: First day ends without major decision

A high-level meeting between Bangladesh and the Office of the United States Trade Representative (USTR) ended in Washington, DC, yesterday without a major decision, despite the looming expiry of a 90-day negotiation window on July 9.

3h ago