গণস্বাস্থ্যের অ্যান্টিবডি কিটের ট্রায়ালে বিএমআরসির অনুমোদন

মহামারিকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিবডি কিটের অনুমোদনের প্রক্রিয়া অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। বাংলাদেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত আন্টিবডি কিট অনুমোদনের প্রক্রিয়া প্রায় এক বছর ধরে চলমান। তবে, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) গণস্বাস্থ্যের অ্যান্টিবডি কিটের ট্রায়াল আইসিডিডিআর,বিতে করার অনুমোদন দেওয়ায় অনেকটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Dr_Zafrullah
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

মহামারিকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিবডি কিটের অনুমোদনের প্রক্রিয়া অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। বাংলাদেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত আন্টিবডি কিট অনুমোদনের প্রক্রিয়া প্রায় এক বছর ধরে চলমান। তবে, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) গণস্বাস্থ্যের অ্যান্টিবডি কিটের ট্রায়াল আইসিডিডিআর,বিতে করার অনুমোদন দেওয়ায় অনেকটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বিএমআরসির অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক দেরি হয়ে গেল। এতে একদিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো, অপরদিকে আমরা মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। এরপরও বিএমআরসি অনুমোদন দেওয়ায় তাদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। মনে হচ্ছে, গণস্বাস্থ্যের অ্যান্টিবডি কিটের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় গতিশীলতা ফিরে এসেছে। বিএমআরসি আমাদের কিটের ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়েছে। বর্তমানে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন। আমরা প্রত্যাশা করছি, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরও অতি দ্রুততার সঙ্গে আইসিডিডিআর,বিকে ট্রায়ালের অনুমোদন দেবে এবং আইসিডিডিআর,বিও অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ট্রায়াল সম্পন্ন করে আমাদের কিটের অনুমোদন দেবে। যা দিয়ে আমরা দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করতে পারব।

ভ্যাকসিন দেওয়ার এই সময়ে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করাটা অত্যন্ত জরুরি বলে উল্লেখ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আরও বলেন, ‘দেশের মানুষের কল্যাণে অত্যন্ত জরুরি এই কাজটি আমরা করতে চাই। দেশের মানুষের পাশে থাকতে চাই। সুতরাং আমরা প্রত্যাশা করছি, দেরিতে হলেও যেহেতু ট্রায়ালের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেই গতিটা অব্যাহত থাকবে। একদিনের মধ্যে যেরকম ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেওয়া হলো, সেই একই রকমের গতিতে আমরা আমাদের অ্যান্টিবডি কিটের অনুমোদন পাব বলে আশা করছি।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, তাদের অ্যান্টিবডি কিটের পরীক্ষা শেষে এটির কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ উল্লেখ করে তা অনুমোদন দেওয়ার সুপারিশ করেছিল বিএসএমএমইউ। কিন্তু, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অনুমোদন না দিয়ে কার্যকারিতা বাড়ানোর পরামর্শ দেয়। সেই অনুযায়ী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কাজ করে। নিজেরা পরীক্ষা করে কিটের কার্যকারিতা ৯৭ শতাংশে উন্নীত করে গত বছরের ২৪ জুলাই পুনরায় অনুমোদনের আবেদন করে। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এফডিএ’র ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করতে বলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। কিন্তু, এই ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী পরীক্ষার কোনো ল্যাব বাংলাদেশে ছিল না। মাস দুয়েক আগে আইসিডিডিআর,বি তাদের ল্যাবকে সেই মানে উন্নীত করেছে। বর্তমানে সেখানেই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যান্টিবডি কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বিজ্ঞানকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার কাজে গতিশীলতা প্রত্যাশিত। বিজ্ঞানকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সামনে আনা উচিত নয়। মহামারির সময়ে যে দ্রুত গতিতে পৃথিবীতে ভ্যাকসিন আসলো, সেটা যদি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকা পড়ত, তাহলে এটা আসতে ১০ বছর সময় লাগত। ১০ বছরের কাজকে তারা এক বছরে নিয়ে এসেছে। আর আমাদের যে কাজের অনুমতি এক মাসের মধ্যে পাওয়ার কথা, সেই কাজকে এক বছর বা তার চেয়ে বেশি সময়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হলো। এই যে আমাদের উল্টো চলার গতি, সেই গতি এতদিন পর্যন্ত দৃশ্যমান ছিল। কিন্তু, ড. বিজনকে বাংলাদেশে কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া এবং বিএমআরসি কর্তৃক আমাদের অ্যান্টিবডি কিটের ট্রায়ালের অনুমোদন দেওয়া, এই দুটো ঘটনা বাংলাদেশে একসঙ্গে ঘটল। আমরা মনে করছি এটা অত্যন্ত ইতিবাচক। এজন্য আগেও ধন্যবাদ জানিয়েছি, আবারও জানাচ্ছি। একইসঙ্গে প্রত্যাশা রাখছি, এই গতিটা অব্যাহত থাকবে।’

সবশেষে তিনি বলেন, ‘মহামারিকালে আমরা যেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা না দেখি। আমাদের অ্যান্টিবডি কিট অত্যান্ত মানসম্পন্ন। আমাদের কিটটির কার্যকারিতা প্রায় ৯৭ শতাংশ। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং মূল্যও অত্যন্ত কম। আমাদের কিটটি দিয়ে অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে অ্যান্টিবডি শনাক্ত করা যাবে। সুতরাং, যে জিনিসের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকর দিক নেই, সেই জিনিসের অনুমোদন দেওয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা, তা দেশের মানুষের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এখন যে অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু হলো, আমরা সেটাকে অভিনন্দন জানাই।’

আরও পড়ুন:

ভ্যাকসিন, অ্যান্টিবডি পরীক্ষা ও গণস্বাস্থ্যের কিট

করোনার নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত হয় না বাংলাদেশের পিসিআর পরীক্ষায়

ভ্যাকসিন কবে পাব এবং অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ‘ভুল ডোজ’র আশাবাদ

মত-দ্বিমত ‘করোনাভাইরাসে দ্বিতীয়বার আক্রান্তের সম্ভাবনা নেই?’

‘সবার জন্যে ভ্যাকসিন’ স্লোগান ও বাংলাদেশের সক্ষমতা

এবার গণস্বাস্থ্যের অ্যান্টিবডি কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা হবে আইসিডিডিআর,বিতে

এফডিএ’র গাইডলাইন অনুযায়ী অ্যান্টিবডি কিটের কার্যকারিতা খুব সহজে প্রমাণ হবে: গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র

গণস্বাস্থ্যের কিট কার্যকর নয়: বিএসএমএমইউ, কিট কার্যকর- প্রতিবেদন পেয়ে প্রতিক্রিয়া: ড. বিজন

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের অনুমোদন দেয়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর

বিএসএমএমইউর প্রতিবেদন বলছে গণস্বাস্থ্যের কিট কার্যকর

গণস্বাস্থ্যের কিটে নয়, ত্রুটি নমুনা সংগ্রহ প্রক্রিয়ায়

আমরা যা আজ ভাবছি, পশ্চিমা বিশ্ব তা আগামীকাল ভাবছে: ড. বিজন

আমাদেরই সবার আগে এই কিট বিশ্ববাসীর সামনে আনার সুযোগ ছিল: ড. বিজন

ড. বিজনের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে ৩৫০ টাকায় ১৫ মিনিটে করোনা শনাক্ত সম্ভব

মুক্তিযুদ্ধ, গণস্বাস্থ্য, ডা. জাফরুল্লাহ ও মাছ চোর

গণস্বাস্থ্যের কিট, বিজ্ঞানের বিশ্লেষণে দেশীয় রাজনীতি

২৫ দিনে ৩০১ শয্যার করোনা হাসপাতালের জন্ম অথবা অপমৃত্যু!

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এবারের উদ্যোগ ‘প্লাজমা ব্যাংক’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago