সুনামগঞ্জের মৎস্যজীবী হত্যায় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নাগরিকবন্ধন

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুনই জলমহাল নিয়ে বিরোধের জেরে মৎস‍্যজীবী শ্যামাচরণ বর্মনকে হত্যার ঘটনায় নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছে সিলেটের নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। সেইসঙ্গে হাওরাঞ্চলে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার ভাইদের দৌরাত্মের প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুনই জলমহাল নিয়ে বিরোধের জেরে মৎস্যজীবী শ্যামাচরণ বর্মণকে হত্যার ঘটনায় নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং হাওরাঞ্চলে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার ভাইদের দৌরাত্মের প্রতিবাদে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন, সিলেট আয়োজিত ‘জলমহালে মগের মুল্লুকে সংক্ষুব্ধ নাগরিকবন্ধন’। ছবি: শেখ নাসির

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুনই জলমহাল নিয়ে বিরোধের জেরে মৎস‍্যজীবী শ্যামাচরণ বর্মনকে হত্যার ঘটনায় নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছে সিলেটের নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। সেইসঙ্গে হাওরাঞ্চলে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার ভাইদের দৌরাত্মের প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন, সিলেট আয়োজিত ‘জলমহালে মগের মুল্লুকে সংক্ষুব্ধ নাগরিকবন্ধন’ এ এসব দাবি জানানো হয়। এ সময় সিলেটের বিভিন্ন স্তরের নাগরিক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নিহত শ্যামাচরণ বর্মনের স্বজনেরা।

গত ৭ জানুয়ারি রাতে সুনই মৎস্যজীবী সমিতির ইজারাভুক্ত জলমহাল সুনই নদী (মনাই নামেও পরিচিত) এর দখল নিয়ে সংঘাতের সময় ৬৫ বছর বয়সী মৎস্যজীবী শ্যামাচরণ বর্মনকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

অভিযোগ আছে, এ ঘটনায় তার ছেলে ও ওই মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণ ধর্মপাশা থানায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, তার ভাই ও ধর্মপাশা উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকন এবং এমপির আরো দুই ভাইসহ ৬৩ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা করতে চাইলে তা গ্রহণ করেনি থানা পুলিশ।

পরে ১০ জানুয়ারি এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৬০-৬৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। এ ঘটনায় সংসদ সদস্যসহ ৬৩ জনকে অভিযুক্ত করে ধর্মপাশা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ১৪ জানুয়ারি একটি মামলা করেন চন্দন বর্মণ।

তবে ইতোমধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে এ ঘটনায় মামলা করায় আদালত মামলাটি গ্রহণ করে এর কার্যক্রম স্থগিত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন চন্দন বর্মণ।

নাগরিকবন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০০৮ সালে হঠাৎই আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে সেবছরই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচন করে বিজয়ী হন মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। তারপর থেকে হাওরাঞ্চলের সব ক্ষেত্রে তিনি ও তার ভাইয়েরা প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন এবং এর পরবর্তী দুই নির্বাচনেও তিনি জয়লাভ করেন।

বক্তারা বলেন, হাওরে জলমহাল মৎস্যজীবী সমিতির অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হলেও তাতে সংসদ সদস্য রতন প্রভাব বিস্তার করেন এবং বেশ কিছু জলমহাল দখলে নেয়ার চেষ্টা করেন। এ উদ্দেশ্যেই সুনই জলমহালের ইজারা নেয়া মৎস্যজীবী সমিতির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা হয় এবং সংসদ সদস্য ও তার ভাইয়ের নির্দেশেই জলমহালে হামলা চালিয়ে মৎস্যজীবী শ্যামাচরণকে হত্যা করা হয়।

নাগরিকবন্ধনে বক্তারা মৎস্যজীবী শ্যামাচরণের মৃত্যুতে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান এবং সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিরুদ্ধে সংসদীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান।

জলমহাল নিয়ে সংঘাত ও হত্যা

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের তালিকাভুক্ত সুনই জলমহালটি সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে ২০১৬ সালে পাঁচ বছরের ইজারা দেয়া হয়। সুনামগঞ্জ সমবায় অফিসের তথ্য অনুযায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণ।

তবে ২০১৯ সালের প্রথম থেকেই জলমহালটির দখল নিজেদের পক্ষে নিতে সংসদ সদস্য রতন ও তার ভাই রুকনের অনুসারি একই সমিতির সদস্য সুবল বর্মণ নিজেকে সভাপতি দাবি করতে থাকেন। বিষয়টি আদালতে গড়ালে গতবছর আদালত জলমহালের উপর স্থিতাবস্থা জারি করেন।

স্থিতাবস্থা জারির মধ্যেই গত ৩ সেপ্টেম্বর হামলার অভিযোগে সুবল বর্মণসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে গতবছর ১ অক্টোবর মামলা করেন সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণ।

পরবর্তীতে গত ৩ ডিসেম্বর ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার ভাই মোজাম্মেল হোসেন রুকনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন আয়োজন করে সমিতির সদস্যরা। এ সময় প্রেস কনফারেন্স করেও তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিরাপত্তা দাবি করেন।

গত ৭ জানুয়ারি রাতে বেশ কিছু দুষ্কৃতিকারী অতর্কিতে হামলা করে জলমহালের পাড়ে পাহাড়া দেয়ার ঘরে। এ সময় তারা বেশ কয়েকজনকে মারধর করে এবং শ্যামাচরণ বর্মণকে হত্যা করে।

চন্দন বর্মণ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অন্য একটি পক্ষ তৈরি করে জলমহালটি দখল করতে চাইছেন সংসদ সদস্য ও তার ভাই। তারা প্রভাব বিস্তার করায় আমরা মামলাও করতে পারিনি তাদের বিরুদ্ধে। এখন সঠিক বিচার পাবো কী না তাও জানি না।’

ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ‘মামলাটি তদন্ত চলছে’ বলেই ফোন কেটে দেন এবং পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার কল করলেও তিনি তা ধরেননি।

এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিষয়টি জলমহালের ইজারাদার সমবায় সমিতির নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। দুটি পক্ষই স্থানীয় হিন্দু মৎস্যজীবী এবং ওই সমিতিরই সদস্য। এর সাথে আমার বা আমার ভাইদের কোন সম্পৃক্ততা নেই’।

তিনি বলেন, ‘যেদিন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেদিন আমি ও আমার ভাই রুকন সুনামগঞ্জ শহরে ছিলাম। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারও সারাদিনই আমাদের সাথে ছিলেন। তারা সাক্ষী সেদিনের এ হত্যাকাণ্ডে আমরা জড়িত কী না। স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত ও আমার বিরুদ্ধে থাকা একপক্ষ আমাকে এ হত্যার সাথে জড়িয়ে সমালোচিত করতে চাচ্ছে। আমিও এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago