চীনকে পেছনে ফেলে ভারতের ভ্যাকসিন কূটনীতির সাফল্য

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্টাজেনেকার ভ্যাকসিন নেপালেও পৌঁছেছে। ২১ জানুয়ারি ২০২০। ছবি: রয়টার্স

আগামী কয়েক সপ্তাহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে করোনাভাইরাসের কয়েক মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন দেবে ভারত। যে কারণে বর্তমানে প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রশংসায় ভাসছে ভারত। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারকারী দেশ চীনের ওপর।

আজ শুক্রবার ভারতীয় সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে মালদ্বীপ, ভুটান, বাংলাদেশ ও নেপালে সেরাম ইনস্টিটিউট কর্তৃক উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের বিনামূল্যে দেওয়া চালান পাঠানো শুরু হয়েছে।

জেনেরিক ওষুধ উৎপাদনের শীর্ষে থাকা ভারতের দেওয়া এই ভ্যাকসিন পাওয়ার পরবর্তী তালিকায় শুরুতেই রয়েছে মিয়ানমার ও সিসিলি। ভারত নিজেদের সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করছে।

নেপালের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হৃদয়েশ ত্রিপাঠি রয়টার্সকে বলেন, ‘ভারত সরকার অনুদানের ভ্যাকসিন সরবরাহ করে সদিচ্ছার পরিচয় দিয়েছে।’

আঞ্চলিক বিরোধের কারণে ভারত-নেপালের সম্পর্কে যখন টানাপোড়েন চলছে এবং সেখানে চীনের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন, ঠিক সেই সময়েই ভারত সম্পর্কে নেপাল এমন ইতিবাচক মন্তব্য করল।

করোনা মোকাবিলায় নেপালকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। নেপাল কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিলেই চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিন দেশটিতে পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে নেপালের ওষুধ প্রশাসনের মুখপাত্র সন্তোষ কে সি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘অনুমোদন দেওয়ার আগে আমরা তাদেরকে আরও নথি ও তথ্য জমা দিতে বলেছি।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা সংস্থা সিনোভ্যাকের কাছ থেকে বিনামূল্যে এক লাখ ১০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু, বাংলাদেশ ভ্যাকসিনটির উন্নয়ন ব্যয়ে অবদান রাখতে অস্বীকৃতি জানানোয় বর্তমানে এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি নেই।

এর পরিবর্তে ভ্যাকসিনের জরুরি সরবরাহের জন্য ভারতের সঙ্গে আলোচনা এগিয়েছিল বাংলাদেশ। যার ফলশ্রুতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ভারত থেকে উপহার হিসেবে পাঠানো অক্সফোর্ড-অ্যাস্টাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘ভারত অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে, যা সব ধরনের পার্থক্যই তৈরি করছে। এটা সাধারণ ফ্রিজের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ ও পরিবহন করা যায়। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এ ধরনের সংরক্ষণ-পরিবহন ব্যবস্থা আছে।’

অন্যদিকে চলতি মাসের শেষের দিকে বিনামূল্যে পাঁচ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় গতকাল মৈত্রী রাষ্ট্র চীনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ পাকিস্তান।

শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালদ্বীপে বন্দর, সড়ক ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে চীন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে চীনের বিনিয়োগের যে গতি, তার সঙ্গে তাল মেলাতে বেশ কয়েক বছর ধরেই আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত।

কূটনীতিকরা রয়টার্সকে বলেছেন, এই দেশগুলো তাদের পর্যটন-নির্ভর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফলে তাদের ভ্যাকসিনের চাহিদা মোদি সরকারের জন্য একটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।

ভারত সরকারের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, সহায়তার প্রথম ধাপে আগামী তিন বা চার সপ্তাহে ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোকে এক কোটি ২০ লাখ থেকে দুই কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, সেসব দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও সেখানে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনায় অবকাঠামো স্থাপনেও সহায়তা করছে ভারত।

Comments

The Daily Star  | English
free 1gb data for all users

BTRC directs telcos to provide 1GB free internet on July 18

Mobile phone operators have been instructed to notify users in advance via SMS

2h ago