বাংলাদেশ উদীয়মান বড় অর্থনৈতিক পরাশক্তি: ইরানের রাষ্ট্রদূত

বিশ্বের উদীয়মান বিশেষত এ অঞ্চলের বড় অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে উল্লেখ করে ঢাকায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ রেজা নফর বলেন, ইরান বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে সুদৃঢ়ভাবে যুক্ত হতে চায় এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে চায়।
Reza Nafar.jpeg
ঢাকায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ রেজা নফর। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের উদীয়মান বিশেষত এ অঞ্চলের বড় অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে উল্লেখ করে ঢাকায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ রেজা নফর বলেন, ইরান বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে সুদৃঢ়ভাবে যুক্ত হতে চায় এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে চায়।

এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বিশেষত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের ক্ষেত্রে আরও গভীরভাবে যুক্ত হতে চায় ইরান। আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলার হওয়া উচিত। যা এখন সন্তোষজনক পর্যায়ে নেই।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সম্পর্ক জোরদারে উভয় দেশের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ রয়েছে এবং দুই দেশের নেতারাই এ বিষয়ে অনেক আন্তরিক।’

রেজা নফর বলেন, ‘ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি আগামী মার্চ মাসে ডি-৮ বা উন্নয়নশীল-৮ দেশের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে বাংলাদেশ সফর করবেন এবং এই সফর সম্পর্ককে আরও জোরদার করার দিকে নিয়ে যাবে।’

বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্কের সমন্বয়ে গঠিত ডি-৮ এর শীর্ষ সম্মেলন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে, মার্চ মাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনে আয়োজিত বিশাল ওই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বেশ কয়েকজন বিশ্ব নেতা যোগ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে ইরানি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে সমগ্র বিশ্বে যখন অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজ করছে তখন দক্ষ ও বুদ্ধিমান নেতৃত্বের কারণে সব অর্থনৈতিক সূচকে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধিসহ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’

রাষ্ট্রদূত রেজা নফর বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমরা দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব বলে আশা করছি।’

বাংলাদেশকে পুরানো ও বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের নেতারা এই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কাজ করছেন। আমাদের সম্পর্ক প্রতিদিন আরও সুদৃঢ় হচ্ছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বর্তমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ নিয়ে দুই দেশই অসন্তুষ্ট। আমরা আশা করি, উভয় পক্ষের সাম্প্রতিক উদ্যোগ এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়বে।’

‘উভয় দেশের নেতারা সম্পর্কগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সব সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য ইরান প্রস্তুত রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই।’

রাষ্ট্রদূত রেজা নফর বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কিছুটা হলেও ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করছে।’

দুই দেশের বেসরকারি খাত সম্পর্কে একে অপরের দক্ষতা বিষয়ে জানেন না এবং তারা ভালোভাবে অবহিত না হওয়াকে বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে সম্পর্কের উন্নতির জন্য দুই দেশের আগ্রহ গুরুত্বপূর্ণ। এটা অব্যাহত রয়েছে।’

তিনি জানান, ইরানে নিযুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মিলে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে কাজ করছেন। এ ক্ষেতে কিছুটা উন্নতি হয়েছে তবে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে এখনও পৌঁছানো যায়নি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর চলমান উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

রাষ্ট্রদূত রেজা নফর বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ ও ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পরিকল্পনা করা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘এত বেশি শরণার্থী আশ্রয় দেওয়ার সমস্যার বিষয়টি তারা বুঝতে পেরেছেন। ইরান ৯ লাখ ৫১ হাজার ১৪২ আফগান শরণার্থী এবং ২৮ হাজার ২৬৮ ইরাকি শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে।’

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য মতে, ইরানে ৯ লাখ ৫১ হাজার ১৪২ আফগান শরণার্থী এবং ২৮ হাজার ২৬৮ ইরাকি শরণার্থী রয়েছে। অন্যদিকে কক্সবাজার ও ভাসানচরে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।

ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যাটি একটি মানবিক বিষয়। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশ বিশাল ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার। বাংলাদেশের কাছে সমগ্র বিশ্ব কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের এ ভূমিকা ইতিহাস সবসময় মনে রাখবে।’

কিছু জটিলতার কারণে রোহিঙ্গা বিষয়টি এখনও অমীমাংসিত রয়ে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখের বলে মনে করেন তিনি।

চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ত্রি-পক্ষীয় আলোচনার প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘চীনের নেওয়া উদ্যোগকে আমরা সমর্থন করি। এই ত্রি-পক্ষীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে ভালো ফলাফল দেখতে পাব বলে আশা করছি।’

রাষ্ট্রদূত রেজা নফর বলেন, ‘তারা এমন একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বের উত্থান দেখতে চান যেখানে কোনো শরণার্থী থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা বাস্তবায়নে শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘রোহিঙ্গা সঙ্কটের শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের নীতিকে সমর্থন করে আসছে ইরান। এ বিষয়ে ইরানের মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে।’

রোহিঙ্গারা যারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে তারা প্রত্যাবাসনের এ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের আইন মেনে চলবে এবং শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি তারা শান্তিপূর্ণভাবে বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে।’

ইরান-মার্কিন সম্পর্ক

ইরানি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তারা আশা করে জো বাইডেনের নেতৃত্বে নতুন প্রশাসন এর যৌক্তিক ভিত্তি খুঁজে বের করবে এবং ইরানের যে ক্ষতি হয়েছে পুষিয়ে দিতে নতুন করে মার্কিন নীতির নকশা সাজাবে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘একতরফাভাবে ইরান-চুক্তিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সমাপ্তির সঙ্গে সামনে এক সুন্দর বিশ্ব হাতছানি দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তন খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবে নীতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।’

রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন মার্কিন নীতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কী ধরনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তা দেখার অপেক্ষায় থাকবেন জানিয়ে রাষ্ট্রদূত রেজা নফর আরও বলেন, ‘তারা নতুন করে কোনো চুক্তিতে যাবেন না।’

তিনি বলেন, ‘তারা পূর্ববর্তী চুক্তিতে কীভাবে ফিরে আসবে এবং কীভাবে তারা ইরানকে ক্ষতিপূরণ দেবে তা নিয়েই আলোচনা হতে পারে। আমরা এই চুক্তি থেকে সরে আসিনি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরে গেছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

13h ago