‘নেতাজির দর্শন ও রণনীতিতে অনুপ্রাণিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু’
উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোগামী নেতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম দিবস উপলক্ষে এক ওয়েবিনারে বক্তারা বলেছেন, উপমহাদেশের এই কিংবদন্তীতুল্য নেতার ধর্মনিরপেক্ষ, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের দর্শন এবং স্বাধীনতার জন্য তার সশস্ত্র রণনীতি ও রণকৌশল বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল, যার উল্লেখ তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে রয়েছে।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মদিন এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আজ বিকেলে ‘নেতাজী ও বঙ্গবন্ধু: ভারতবর্ষের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক এই ওয়েবিনার আয়োজন করে।
নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপুমনি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন, এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর শৈশবের বন্ধু অধ্যাপক ক্ষেত্রেশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র অধ্যাপক মহেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মুখার্জি তদন্ত কমিশনের অন্যতম সাক্ষী ও কলকাতা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নন্দলাল চক্রবর্তী, নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজের গবেষক ও কলকাতার শ্রী শিক্ষায়তন কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক মৈত্রেয়ী সেনগুপ্ত, নির্মূল কমিটির সহ সভাপতি ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের অন্যতম অধিনায়ক লোকমান খান শেরওয়ানীর পৌত্রী শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম ও নির্মূল কমিটি যশোর শাখার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক সাজেদ রহমান।
এই দুই মহান নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে শাহরিয়ার কবির বলেন, ভারতের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অতুলনীয় বীরত্ব ও আত্মত্যাগ ’৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং অন্যান্য রচনা ও ভাষণে উল্লেখ করেছেন কীভাবে অখণ্ড ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সংগ্রামের মহান নেতা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এবং সূর্য সেন, প্রীতিলতা, বাঘা যতীন প্রমুখ অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা তাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক দর্শন ছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও একই দর্শনের বিশ্বাস করতেন, যা প্রতিফলিত হয়েছে দুই ভ্রাতৃপ্রতিম রাষ্ট্রের সংবিধানে।’
ওয়েবিনারের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি বলেন, উপমহাদেশে মানব মুক্তির জন্য যে মহান মানুষরা সংগ্রাম করেছেন—তাদের মধ্যে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম সবার আগে আসে। নেতাজি ঔপনিবেশিক শাসন শোষণের কবল থেকে ভারতবর্ষের মানুষকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিলেন, একইভাবে বঙ্গবন্ধুও বেনিয়া এবং হানাদার পাকিস্তানি শাসকদের কবল থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র জনযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। …এ দুজন মহান নেতার জীবন ও আদর্শ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আমাদের সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। মানব মুক্তির পথ আরও প্রশস্ত করতে হবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনস্বীকার্য ক্যারিশমা এবং তাদের ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা যুগ যুগ ধরে ভারতীয় ও বাংলাদেশীদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আজ ভারত ও বাংলাদেশ কেবল উন্নয়নের নিবিড় অংশীদার নয়, আমরা মানব মুক্তির অভিন্ন সংগ্রামেরও অংশীদার। তিনি উল্লেখ করেন, ‘সর্বাগ্রে প্রতিবেশী’ নীতিতে ভারত কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ২০ লক্ষ ডোজ বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারি মোকাবেলায় এক সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
Comments