তিন বছরে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত বেড়েছে প্রায় ২০০ ভাগ

ধূমপায়ীদের সংখ্যা ও বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঘটনা বাড়ছে।
বিশ্বের তৃতীয় দূষিত শহর ঢাকা
ঢাকায় বায়ুদূষণ। স্টার ফাইল ছবি

ধূমপায়ীদের সংখ্যা ও বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঘটনা বাড়ছে।

গত তিন বছরে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ২০০ ভাগ বেড়েছে বলে সম্প্রতি হাসপাতালের ক্যান্সার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট থেকে জানা গেছে।

এই মাসের শুরুতে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, ‘জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০১৭ অবধি জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ও হাসপাতালের (এনআইসিআরএইচ) বহির্বিভাগে ৭৬ হাজার ৫৪৩ জন নতুন রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এর মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার ৩৬৯ জনের শরীরে ক্যান্সার শনাক্ত হয় এবং এগুলো চূড়ান্ত বিশ্লেষণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

এই তিন বছরে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত মোট ৫ হাজার ৮৮৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৯৮৩, যা মাত্র তিন বছরে প্রায় ২০০ ভাগ বেড়েছে। পুরুষদের ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্তের হারই ছিল বেশি। এরপর নারীদের স্তন ক্যান্সারের হার। ২৪.৭ ভাগ পুরুষ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং নারী ছিলেন ৫.২ ভাগ।

এনআইসিআরএইচে যাওয়ার আগে ৭৭.২ ভাগ রোগী ক্যান্সারের কোনো চিকিৎসা পাননি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাশাপাশি ৪ হাজার ৯৯৮ জন স্তন, ২৭১৯ জন জরায়ু, ১ হাজার ৫৮২ জন খাদ্যনালী, ১ হাজার ৩৬৬ জন পাকস্থলী, ১ হাজার ২২৪ জন লিভার, ১ হাজার ১৭৭ জন লিম্ফোমা, ১ হাজার ৫৪ জন মলদ্বার, ৮৮৪ জন গাল/ওরাল মিউকোসা এবং ৪৮৫ জন পিত্তথলি ক্যান্সারের রোগী এনআইসিআরএইচে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন।

অন্যদিকে, ২০১৪ সালের ক্যান্সার রেজিস্ট্রি প্রতিবেদনের তথ্য থেকে দেখা গেছে যে, নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ফুসফুসের ক্যান্সারই প্রধান সমস্যা ছিল।

২০১৪ সালের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২৭.৪ ভাগ নারী মারা গেছেন, আর জরায়ু ক্যান্সারে মারা গেছেন ১৭.৯ ভাগ নারী।

বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ক্যান্সারের ঘটনায় ধূমপান এবং বায়ুদূষণকে দায়ী করছেন।

এনআইসিআরএইচ ক্যান্সার এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেছেন, ‘কারখানা ও যানবাহন থেকে নিঃসরণ হওয়া ধোঁয়া বাংলাদেশে ক্যান্সারের সংখ্যা বৃদ্ধির দুটি প্রধান কারণ। দূষণ রোধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’

‘বাংলাদেশের ক্যান্সার রোগীদের এক তৃতীয়াংশ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আমরা বাকি রোগীদের সম্পর্কে জানি না। জনগণকে এই রোগ থেকে রক্ষা করতে এবং চিকিৎসা সুবিধা বাড়াতে সরকারকে অবশ্যই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যদি প্রথম পর্যায়ে কোনো ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়, তবে রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। সুতরাং, মানুষের মধ্যে সচেতনতাও প্রয়োজন’, বলেন তিনি।

ডা. হাবিবুল্লাহর মতে, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ৫৬ হাজার রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

সরকারকে একটি উপযুক্ত বাজেট বরাদ্দ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দেশেরই একটি জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কৌশল এবং কার্যকরভাবে ক্যান্সার থেকে মৃত্যুহার এবং অসুস্থতা হ্রাস করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। আমরা এখনও এই প্রয়োজনীয় কৌশলগুলোর অভাব বোধ করছি।’

হাসপাতালের অপর ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ক্যান্সারের ঘটনা বৃদ্ধির জন্য খাদ্যে ভেজাল, পরিবেশ দূষণ এবং জিনগত অবস্থাকেও দায়ী করেছেন।

‘বাংলাদেশে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী রয়েছেন এবং প্রতি বছর এই তালিকায় ২ লাখ রোগীর সংখ্যা যুক্ত হয়। প্রায় ৫০ ভাগ ক্যান্সার রোগী এখানে স্বাস্থ্যসেবার অভাবে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান’, বলেন তিনি।

বিএসএমএমইউ’র গাইনি-অনকোলজি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুনও বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘সরকারের উচিত অবিলম্বে ক্যান্সার রোগীদের একটি সঠিক ডাটাবেস তৈরি করা।’

কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘৯৯ ভাগ জরায়ু ক্যান্সার রোগীকে কিশোর বয়সে ভ্যাকসিন দিয়ে নিরাময় করা যায়।’

‘তবে এটি বাংলাদেশে করা হয় না। জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার সম্পর্কেও নারীদের সচেতন করতে হবে’, বলেন তিনি।

অধ্যাপক ডা. সাবেরা বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৭ জন জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং তিন লাখেরও বেশি এই রোগে মারা যান। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে প্রায় ৮ হাজার ৬৮ জন নারী এই রোগ আক্রান্ত হন এবং এ থেকে প্রতি বছর ৫ হাজার ২১৪ জন মারা যান।’

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি বলেছেন যে, সরকার ২০২২ সালের মধ্যে আট বিভাগের প্রতিটিতে একটি করে ১৫ তলা ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে।

‘এই হাসপাতালগুলোতে ক্যান্সার, কিডনি এবং হৃদরোগের চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে কমপক্ষে ৩০০ শয্যা থাকবে। বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার দরকার হবে না’, বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
BGMEA to sit at 7.30pm to decide on factory reopening

Owners threaten to shut garment factories from tomorrow if unrest continues

The garment factory owners today decided to shut down their production units from tomorrow under “no work no pay” policy for an indefinite period if the labour unrest continues further

17m ago