রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ বলেছে ‘ধীরে’ চলতে

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হাসপাতালের একজন নার্সকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। সেইসঙ্গে অভিযোগ উঠেছে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত চিকিৎসককে আইনের হাত থেকে বাঁচাতে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের আরএমসিএইচ কমিটি। ছবি:সংগৃহীত (দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালা অনুযায়ী ছবিতে অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করা হলো না)

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হাসপাতালের একজন নার্সকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। সেইসঙ্গে অভিযোগ উঠেছে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত চিকিৎসককে আইনের হাত থেকে বাঁচাতে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

ঘটনার প্রতিবাদ এবং চিকিৎসকের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের আরএমসিএইচ কমিটি।

কমিটি জানায়, ঘটনার পরপরই একটি তদন্ত কমিটি করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত তারা রিপোর্ট দিতে পারেনি। অন্যদিকে এই ঘটনার সংবাদ যাতে ক্যাম্পাসের বাইরে না যায় সেজন্য ওই নার্সকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তারা।

আরএমসিএইচের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি জানিয়েছেন, যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে যার বিরুদ্ধে তিনি একজন অনুমোদিত চিকিৎসক এবং এই হাসপাতালে অ্যানাস্থেশিয়া সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

আরএমসিএইচের পরিচালক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি কোনক্রমেই ছোট করে দেখছি না। তবে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি খুব ছোট একটি ঘটনা। সেটা পুলিশ বা আদালতে নিয়ে যাওয়ার মতো নয়।’

আইনি ব্যবস্থা না নিতে নার্সকে বলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ার কথা কখনও বলিনি, তবে আমরা তাকে বিষয়টি নিয়ে ধীরে চলতে বলেছি এবং বলেছি আমরা কী করতে পারি সেটা আগে দেখে নিতে।’

‘তাছাড়া, ঘটনাটা আদালতে প্রমাণ করা কঠিন,’ বলেও মন্তব্য করেন রামেক হাসপাতালের পরিচালক।

তিনি বলেন, অভিযুক্ত চিকিৎসককে তার কর্তব্য থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ হাবিবুল্লাহ সরকারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারির মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো যৌন হয়রানির শিকার নার্সের অভিযোগের একটি অনুলিপি আজ ডেইলি স্টার প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৮ জানুয়ারি সকালে হাসপাতালের আইসিইউতে কাজ করার সময় যৌন হয়রানি করেন অভিযুক্ত চিকিৎসক। আইসিইউতে নতুন ডিউটি হওয়াতে ঘটনাটি কারও কাছে জানাতে পারেননি ওই নার্স। পরদিন আবার ডিউটিতে গেলে চিকিৎসক আবারও যৌন হয়রানি করেন।

এ বিষয়ে সিনিয়র নার্সদের জানানো হয় এবং নার্সদের অ্যাসোসিয়েশনে একটি অভিযোগ জমা দেওয়া হয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও অভিযোগ জানানো হয়।

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহাদাতুন নূরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজী হননি। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে চাকরি করি এবং আমাদের কিছু বিধি আছে, কথা বলতে পারি না। আমাদের প্রকাশ্য ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করে আপনাকে আমাদের পরিস্থিতি বুঝতে হবে।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা যৌন হয়রানির ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে রাজশাহীতে মহিলা ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর ইসমত আরা বেগম বলেন, আর্থিক জরিমানা ছাড়াও যৌন হয়রানির সর্বোচ্চ শাস্তি দশ বছর কারাদণ্ড এবং কমপক্ষে তিন বছর সাজা।

তিনি বলেন, কোন কর্তৃপক্ষ তার প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ যৌন হয়রানির ঘটনা তদন্ত ও দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে, তবে সেটা সত্বেও যৌন হয়রানির শিকার কোন ব্যক্তির আইনের আশ্রয় নেয়ার পূর্ণ অধিকার আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago