তৃতীয় দফায় ভাসানচরের উদ্দেশে রোহিঙ্গারা

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসন ব্যবস্থার একাংশ। ছবি: স্টার

তৃতীয় দফায় নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার ভাসানচরে নিয়ে যেতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ২০টি বাসের বহর উখিয়া থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করেছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টায় উখিয়া ডিগ্রী কলেজ মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার-টেকনাফ ও কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে বাসযোগে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া হয়।

তবে আজ কতজন রোহিঙ্গা ভাসানচরে যাবেন সে সম্পর্কে কেউই কোনো তথ্য দেয়নি।

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামসুদ্দৌজা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আজ ও আগামীকাল দুই দিনে স্বেচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’

আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোশারফ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আজ সকালে উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয় শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সড়ক পথে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের আজ চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নৌ-বাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাখা হবে। আগামীকাল তাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে।’

স্থানীয় অধিবাসী ও রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টরা জানান, গতকাল সন্ধ্যায় উখিয়া উপজেলার বালুখালী এলাকায় অবস্থিত আটটি রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির থেকে বেশ কিছু রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুকে অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্প উখিয়া ডিগ্রী কলেজ মাঠে নিয়ে আসা হয়। স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের ২০টি মিনিবাস যোগে শিবির থেকে এনে ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়। তাদের মালামাল আনা হয় ডাম্পার ট্রাকযোগে।

ট্রানজিট পয়েন্টে গতকাল রাতে ও আজ সকালে তাদের তৈরি খাবার দেওয়া হয়। এরপর তাদের করণীয় বিষয়ে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিয়ে বাসে ওঠানো হয়।

গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় এক হাজার ৬৪২ জন এবং ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় এক হাজার ৮০৪ জনসহ ৪০৬ পরিবারের মোট তিন হাজার ৪৪৬ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ জন। এই হিসাব ২০২০ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে সাত লাখ ৪১ হাজার ৮৪১ জন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।  এতিম রোহিঙ্গা শিশু রয়েছে ৩৯ হাজার ৮৪১ জন।

কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার ৩৪টি অস্থায়ী শিবিরে তারা বসবাস করছে। প্রায় ১০ হাজার একর বন ও সমতল ভূমিতে তাদের বসবাস। ৩৪টি রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির ঘিরে ১৪২ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেষ্টনী নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ইতোমধ্যে ১১১ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেষ্টনীর কাজ শেষ হয়েছে। এই কাঁটাতারের চারপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। শিবিরগুলোতে নজরদারির জন্য বসানো হচ্ছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্লোজসার্কিট টেলিভিশন ক্যামেরা (সিসিটিভি ক্যামেরা)।

৪৯৫টি শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গা নাগরিক ও তাদের সন্তানদের ইংরেজি ও মিয়ানমারের ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে ১৩৪টি।

আশ্রয় শিবিরের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিনটি ব্যাটালিয়ন স্থাপন করা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে। এ ছাড়াও স্থানীয় পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও সেনাসদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে, গঠন করা হয়েছে কুইক রেসপন্স টিম।

গত ১৯ জানুয়ারি দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল উখিয়ার চার আশ্রয় শিবিরের ১০০ মাঝির (নেতা) সঙ্গে বৈঠক করেন। একই দিন রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে একটি থানা উদ্বোধন করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Türk concerned over changes in Bangladesh's legislation banning activities of parties

"This [the changes in legislation] unduly restricts the freedoms of association, expression, and assembly," says the UN high commissioner for human rights

51m ago