নাটোরের চিনিকলগুলোর প্রধান মাথাব্যথা অবৈধ আখ মাড়াই

চিনিকলগুলো অত্যন্ত ধীর গতিতে আখ কেনায় বিকল্প হিসেবে মাড়াই কলে যাওয়া ছাড়া তাদের বিকল্প থাকে না। ছবি: স্টার

নাটোরে ‘নাটোর সুগার মিল’ এবং ‘নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল’ নামে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল রয়েছে দুইটি। পাওয়ার ক্রাশারে অবৈধভাবে মাড়াইয়ের ফলে আখের ঘাটতির ঝুঁকিতে পড়েছে সুগার মিল দুটি।

আখের ঘাটতি হলে চিনিকল দুটি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের আগেই আখ মাড়াই বন্ধ হয়ে যাবে।

চিনিকল এলাকার ভেতরে এই বিপুল অবৈধ কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হুমায়ন কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নর্থবেঙ্গল সুগার মিল জোনে এ বছর প্রায় ৪৪৫টি অবৈধ পাওয়ার ক্রাশার (যান্ত্রিক মাড়াইকল) চলছে। এরা প্রায় দেড় লাখ টন আখ মাড়াই করেছে। মৌসুমের বাকী সময়ে আরও প্রায় এক লাখ টন মাড়াই করবে। অর্থাৎ প্রায় আড়াই লাখ টন আখ মাড়াই কলে চলে যাচ্ছে। যেখানে সুগার মিল কর্তৃপক্ষ ১ দশমিক ৮২ লাখ টন আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে।’

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল সাধারণত নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মাড়াই শুরু করে। কিন্তু এ বছর তারা এক মাস পিছিয়ে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কাজ শুরু করেছে। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে অবৈধ মাড়াই কলের মালিকরা। তাছাড়া সরকার এবার বেশিরভাগ চিনিকল বন্ধ করে দেওয়ায় নাটোরের চিনিকল দুটির ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তায় ছিলেন আখ চাষিরা।

নাটোর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নাটোর সুগার মিল জোনেও ২৪৩টি অবৈধ মাড়াইকল গত এক মাসে প্রায় ৫৪ হাজার টন অবৈধভাবে মাড়াই করেছে।

আগামী এক মাসে তারা আরও ৫০ হাজার টন আখ মাড়াই করবে। আখ থেকে চিনি উৎপাদনের হারও কমেছে। পাঁচ-সাত বছর আগেও যেখানে উৎপাদন হতো ৭ শতাংশ সেখানে এখন চিনি উৎপাদন কমে ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এখন আখ সংকটে মিল বন্ধ হয়ে গেলে লোকসান এড়ানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।’

তিনি জানান, নাটোর সুগার মিলের এ বছর ১ দশমিক ৩২ লাখ টন আখ মাড়াইয়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু আখ সংকটের কারণে লক্ষ্য অর্জিত হবে না। মাড়াইকল বন্ধ করা গেলে নাটোর সুগার মিল আরও প্রায় ১ দশমিক ৪০ লাখ টন আখ মাড়াই করতে পারত।

কিন্তু, আখ চাষিরা বলছেন চিনিকলগুলো অত্যন্ত ধীর গতিতে আখ কেনায় বিকল্প হিসেবে মাড়াই কলে যাওয়া ছাড়া তাদের বিকল্প থাকে না। নাটোরের লালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল জোনের রায়পুর গ্রামের আখ চাষি মাসুদ রানা জানান, এবার তিনি ১০ বিঘা জমি থেকে আখ পেয়েছেন ১০২ টন। কিন্তু সুগার মিল সপ্তাহে তার আখ নেয় মাত্র ১ দশমিক ২ টন। এই গতিতে বিক্রি করলে ১০০ সপ্তাহ লাগবে সম্পূর্ণ আখ বিক্রি হতে। যেখানে এক দিনেই মাড়াই কলে সম্পূর্ণ আখ বিক্রি করে দেওয়া যায়। জমিতে অন্য ফসল ফলানো যায়।

তার প্রশ্ন, মাড়াই কলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় আছে?

মাসুদ রানা আরও জানান, সুগার মিলে আখ বিক্রি করে মণ প্রতি দাম পাওয়া যায় ১৪০ টাকা। কিন্তু নিজে মাড়াই করে গুড় তৈরি করলে মণ প্রতি ২২০ টাকা পাওয়া যায়।

লালপুরের কেশবপুর এলাকার আখ মাড়াইকারী মোজদার হোসেন বলেন, ‘আমি জানি পাওয়ার ক্রাশারে মাড়াই করা অবৈধ। কিন্তু এ বছর কোনো ঝামেলা ছাড়াই নিয়মিত আখ মাড়াই করে যাচ্ছি।’

উত্তরবঙ্গ চিনিকল আখচাষি সমিতির সভাপতি ইব্রাহিম খলিল বলেন, নিজের জমির আখ মাড়াই করা কৃষকের অধিকার। তবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ চিনিকলগুলোকেও বাঁচাতে হবে। পাকিস্তান আমলের আখ মাড়াই নিরোধ আইনকে ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে এটি বাতিল করার দাবি জানান তিনি।

নাটোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ বলেন, চিনিকল কর্তৃপক্ষ যখনই সহযোগিতা চায় তখনই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ মাড়াইকল বন্ধ ও জব্দ করা হয়। চিনিকলে আখ ঘাটতি কমাতে সব ধরনের সহযোগিতা করতে জেলা প্রশাসন সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

5h ago