রাজশাহী বিভাগে পৌঁছেছে ৭ লাখ ২০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন
রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় করোনার ভ্যাকসিন পৌঁছাতে শুরু করেছে আজ শুক্রবার থেকে। তবে, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির কারণে ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরুতে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় বিলম্বিত হতে পারে।
আজ সারাদিনে আট জেলা সদরগুলোর ছয়টি ইপিআই কোল্ড রুমে সাত লাখ ২০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরে যেখানে কোনো কোল্ড রুম নেই সেখানে ভ্যাকসিন ইপিআই কর্মসূচির আইএলআর-এ (আইসলাইনড রেফ্রিজারেটর) সংরক্ষণ করা হয়েছে।
‘আমরা ভ্যাকসিন নিয়ে তাড়াহুড়ো করব না, বরং প্রতিটা উদ্যোগ সতর্কতার সঙ্গে নেব। আমরা কেবল তখনই টিকাদান কর্মসূচি শুরু করব, যখন আমরা নিশ্চিতভাবে জানব আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের এখনো স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং ভ্যাকসিন কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করতে হবে,’ বলেন ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার।
স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ ছাড়াও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এখনো ভ্যাকসিন দিতে স্বাস্থ্যকর্মী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সামরিক বাহিনী, সাংবাদিক এবং অগ্রাধিকারে থাকা অন্যান্য সম্মুখসারির কর্মীদের তালিকা চূড়ান্ত করতে পারেননি।
কর্তৃপক্ষ এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি প্রাপ্ত ভ্যাকসিনের সম্পূর্ণ অংশ, অর্থাৎ মোট ৭.২০ লাখ মানুষ ভ্যাকসিন দেবেন কিনা। নাকি প্রথমবার ভ্যাকসিনপ্রাপ্তদের দ্বিতীয় ডোজের জন্য অর্ধেক ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক জানিয়েছেন, তারা দেশব্যাপী ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরুর জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করবেন।
‘আমাদের প্রস্তুতির গতির ওপর নির্ভর করে আমরা ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু করতে বিলম্ব করতে পারি, তবে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী আমরা নির্ধারিত তারিখের আগে শুরু করতে পারব না,’ তিনি বলছিলেন।
ফেব্রুয়ারির ১ ও ২ তারিখে বিভাগের ৬৭টি উপজেলার প্রত্যেকটি থেকে পাঁচজন করে স্বাস্থ্যকর্মীকে জেলা সদরে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পরের দুই দিনে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজ নিজ উপজেলায় ফিরে এসে বাকি স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবেন। তারপরে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কেন্দ্রগুলি প্রস্তুত করা হবে।
প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল, জেলা ও উপজেলা সদরে ভ্যাকসিন বুথ স্থাপন করা হবে। বিভাগের ৫৬৩টি ইউনিয়ন পরিষদে বুথ স্থাপনের যে পরিকল্পনা ছিল সেটা আরও বিলম্বিত হবে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, ভ্যাকসিন বুথগুলো হবে রাজশাহী, বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জের তিনটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, রাজশাহী, বগুড়া এবং নাটোরের চারটি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে, আটটি জেলার পুলিশ হাসপাতাল, সাত জেলার সদর বা জেনারেল হাসপাতাল এবং ৬৭ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
এ ছাড়াও, আট জেলার সিভিল সার্জনদের অফিসে অতিরিক্ত একটি করে এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনে আরও একটি বুথ থাকবে।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. মো. কাইউম তালুকদার জানান, তিনি ভ্যাকসিনের এক লাখ ৮০ হাজার ডোজ হাতে পেয়েছেন। সেগুলো বেক্সিমকো ফ্রিজার ভ্যান থেকে সরাসরি জেলা ইপিআই কোল্ড রুমে সংরক্ষণ করেন।
তিনি আরও জানান, জেলার নয়টি উপজেলায় প্রায় পাঁচশ স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তারা প্রায় আট হাজার সম্মুখসারির কর্মীর একটি তালিকা পেয়েছেন। যাদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তবে, এই তালিকা এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।
এর আগে, গত ৪ জানুয়ারির সভায় করোনার ভ্যাকসিন কর্মসূচি সম্পাদনের জন্য গঠিত জেলা কমিটি সম্মুখসারির কর্মীদের ১৫টি ক্যাটেগরিতে বিভক্ত করে তাদের অফিস এবং সংস্থার প্রধানদের তালিকা সরবরাহ করতে বলা হয়।
সিভিল সার্জন বলেন, ‘বেশিরভাগ অফিস এবং সংস্থা ইতোমধ্যে তালিকা সরবরাহ করেছে। ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কমিটি যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আবার বসবে তার আগেই তালিকা তৈরির কাজ সম্পন্ন হবে।’
তিনি জানান, সাধারণ মানুষ বিশেষত ৫৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরাও টিকাদান কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার পাবেন। তবে তাদেরকে অনলাইনে সরকারি ওয়েবসাইট https://surokkha.gov.bd/ এ অথবা অ্যান্ড্রয়েড ফোন অ্যাপ্লিকেশন ‘সুরক্ষা’ দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
Comments