৪০ বছর ধরে ‘রুশ সম্পদ’ হিসেবে ট্রাম্পকে তৈরি করেছে কেজিবি: সাবেক গুপ্তচর

Donald Trump
রয়টার্স ফাইল ফটো

চার দশকের বেশি সময় ধরে ‘রুশ সম্পদ’ হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তৈরি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি। কেজিবির এক সাবেক গুপ্তচর ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে এ কথা জানান।

গতকাল শুক্রবার গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রাশিয়ার সম্পদ হিসেবে তৈরি করেছে কেজিবি। ট্রাম্প পশ্চিমা বিরোধী প্রচারণা ছড়িয়ে দিতে এতোটাই উৎসাহী ছিলেন যে- এটি মস্কোতে রীতিমতো আনন্দের জোয়ার বইয়ে দেয়।

গার্ডিয়ানকে সাক্ষাৎকার দেওয়া ৬৭ বছরের ইউরি শেভেৎস ১৯৮০’র দশকে ওয়াশিংটনে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তিনি ট্রাম্পকে ‘কেমব্রিজ ফাইভ’ হিসেবে পরিচিত এক গুপ্তচর চক্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ বলে উল্লেখ করেছেন। এই চক্রটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে এবং স্নায়ুযুদ্ধের শুরুর দিকে ব্রিটিশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মস্কোতে পাচার করত।

শেভেৎসের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেই ‘আমেরিকান কম্প্রোমাত’ নামের একটি নতুন বই লিখেছেন মার্কিন সাংবাদিক ক্রেইগ উঙ্গার। এর আগে তিনি ‘হাউজ অব ট্রাম্প, হাউজ অব পুতিন’ নামে একটি বই লেখেন।  ‘আমেরিকান কম্প্রোমাত’ বইয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কিত অর্থদাতা জেফ্রি এপসটেইনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। 

শেভেৎস বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বসবাস করছেন। গত সোমবার নিজ বাসভবন থেকে এক ফোনকলে গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, ‘এটি হলো ছাত্রাবস্থাতেই কাউকে নিয়োগ দেওয়ার একটি আদর্শ উদাহরণ। সেই ছাত্রদের অনেকেই পরে গুরুত্বপূর্ণ পদ লাভ করে। ট্রাম্পের সঙ্গে অনেকটা এমনই ঘটেছে।’

১৯৮০’র দশকে কেজিবির তৎকালীন এই মেজর ওয়াশিংটনে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকাকালে রুশ বার্তা সংস্থা তাস- এর একজন মার্কিন প্রতিনিধির ছদ্মপরিচয় ব্যবহার করতেন। ১৯৯৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাকে সাহায্য করার শর্তে স্থায়ীভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব নেন।

উঙ্গারের নতুন বইটিতে ১৯৭৭ সালে ট্রাম্প কীভাবে রুশ গোয়েন্দাদের নজরে আসেন- সেই তথ্য উঠে আসে। ওই সময় ট্রাম্প প্রথম বিয়ে করেন ইভানা জেলিনিকোভা নামের চেক মডেলকে। তখন কেজিবির সহযোগিতায় চেকোস্লোভাকিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার একটি টার্গেটে পরিণত হন ট্রাম্প।

এর তিন বছর পর ট্রাম্প তার সবচেয়ে বড় আবাসন প্রকল্প; গ্র্যান্ড হায়াত নিউইয়র্ক হোটেল তৈরির কাজ শুরু করেন। হোটেলটির জন্যে সিমন কিসলিন নামের এক সোভিয়েত অভিবাসীর কাছ থেকে ২০০টি টেলিভিশন সেট কেনেন ট্রাম্প। কিসলিন জয়-লাড ইলেকট্রনিক্স নামের একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

শেভেৎসের মতে, জয়-লাড কেজিবির নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান ছিল এবং কিসলিন টার্গেট শনাক্ত করার জন্য এক জন ‘স্পটার এজেন্ট’ হিসেবে কাজ করতেন। তিনিই উদীয়মান ব্যবসায়ী হিসেবে ট্রাম্পকে সম্ভাব্য ‘সম্পদ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তবে কেজিবির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করেছেন কিসলিন।  

১৯৮৭ সালে ট্রাম্প ও ইভানা প্রথম বারের মতো মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে সফরে যান। শেভেৎস জানান, সে সময় কেজিবির সদস্যরা তার ব্যাপক প্রশংসা করেন। কেজিবি অপারেটররা তাকে রাজনীতিতে যেতেও প্ররোচিত করেছিলেন।

কেজিবির সাবেক মেজর আরও বলেন, ‘কেজিবির পক্ষে এটি ছিল চমৎকার একটি পদক্ষেপ। তারা ট্রাম্প সম্পর্কে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্প কেমন সেটা তারা জানতেন। তাদের ধারণা হয়েছিল যে, বুদ্ধিমত্তা ও মানসিক দিক থেকে ট্রাম্প ততোটা অগ্রসর নন, এবং তাকে সহজেই চাটুকারিতার মাধ্যমে প্রভাবিত করা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘এটাই তারা কাজে লাগিয়েছিল। তারা নাটকটি এমনভাবে সাজিয়েছে যেন তারা ট্রাম্পের ব্যক্তিত্বে অনেক মুগ্ধ। তারা বলেছে যে, তাদের বিশ্বাস এই মানুষটিরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া উচিত। তার মতো মানুষই এই পৃথিবী পরিবর্তন করতে পারে। তারা এমনভাবে ট্রাম্পের প্রশংসা করেছেন যে একসময় ট্রাম্পও এতে প্ররোচিত হন। কেজিবির তৎকালীন সক্রিয় ব্যবস্থার পক্ষে এটি একটি বড় অর্জন ছিল।’

এর পর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পরই রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন নিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীতা লাভের চেষ্টা করতে থাকেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি নিউ হ্যাম্পশায়ারের পোর্টসমাউথে একটি ছোটোখাটো প্রচারণা র‍্যালিও করেন তিনি।

সে বছরের ১ সেপ্টেম্বর তিনি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট ও বোস্টন গ্লোবের মতো প্রভাবশালী দৈনিক পত্রিকাগুলোতে পুরো এক পাতার বিজ্ঞাপন দেন। বিজ্ঞাপনের শিরোনাম ছিল, ‘আমেরিকার পররাষ্ট্র প্রতিরক্ষা নীতির শিরদাঁড়া আরও মজবুত করার চেষ্টায় কোনো ক্ষতি নেই।’

রোনাল্ড রিগ্যানের শাসনামলে ওই বিজ্ঞাপনে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটো জোটে অংশ নিয়ে সমালোচনা-সহ, মিত্র জাপানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অন্যায্য সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

শেভেৎস বলেন, এটা নজিরবিহীন ছিল। আমি ৭০ ও ৮০’র দশকের গোড়ার দিকে কেজিবির কর্মকাণ্ড ও রাশিয়ার সক্রিয় পদক্ষেপগুলোর সঙ্গে বেশ ভালোভাবে পরিচিত। ট্রাম্প এই দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত আমার এটা বিশ্বাস হয়নি। এটি বিশ্বাস করা খুব কঠিন ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটাই হয়েছে, এই লোকটিই প্রেসিডেন্ট হয়েছেন।

২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর ওই নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগ তদন্তে বিশেষ কাউন্সেল রবার্ট মুলারকে নিয়োগ করা হয়। তবে তিনি ট্রাম্পের প্রচারণা টিমের সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগের কোনো প্রমাণ পাননি।

Comments

The Daily Star  | English

This time our fight is against corruption

From its mammoth rally in Dhaka yesterday, the Jamaat-e-Islami vowed to wage war on corruption if it gets the people’s mandate in the next general election.

4h ago