বরাদ্দের ১২০ শতাংশ বৃদ্ধি, আরও বাড়ানোর প্রস্তাবনা

মোংলা-খুলনা রেল লিংক প্রকল্প ব্যয় বেড়েই চলেছে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে মোংলা বন্দর-খুলনা রেললাইন প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পের অধীনে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল।

মোংলা-খুলনা রেল লিংক প্রকল্প ব্যয় বেড়েই চলেছে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে মোংলা বন্দর-খুলনা রেললাইন প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পের অধীনে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল।

তবে জমি অধিগ্রহণ এবং নকশা পরিবর্তন সংক্রান্ত জটিলতায় প্রকল্প অনুমোদনের প্রায় ছয় বছর পরে প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ শতাংশ। এরই মধ্যে প্রকল্পের ব্যয় প্রাথমিক ধার্যকৃত বাজেটের চেয়ে ১২০ শতাংশ বেড়ে তিন হাজার ৮০১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

এখানেই শেষ নয়, চলতি বছরের জুনে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে একটি সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবে প্রকল্পের বর্তমান সময়সীমার আরও এক বছর বাড়ানোর পাশাপাশি চাওয়া হয়েছে আরও ৯৯৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি দেখতে যান রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। পরিদর্শন শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যে কোনোভাবে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

খুলনায় নির্মাণাধীন রূপসা রেল সেতু পরিদর্শন করে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘সমস্যা যাই হোক না কেন, সেগুলো সমাধান করে এই সময়ের মধ্যেই (ডিসেম্বর ২০২১) কাজ শেষ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় জনশক্তি নিযুক্ত করুন।’

তিনি আরও বলেন, খুলনা-মোংলা রুটটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই রুটে রেল যোগাযোগ চালু হয়ে গেলে মোংলা বন্দর দিয়ে আসা বিভিন্ন পণ্য দেশের অভ্যন্তরে পরিবহন করা যাবে। প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটানের সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ এবং এই দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে পাড়বে। চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকার বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। মোংলা বন্দরকে একটি রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা তার মধ্যে অন্যতম।’

খুলনা ও মোংলার মধ্যে ব্রডগেজ রেললাইন স্থাপন সম্পন্ন হলে বন্দরটির সঙ্গে সরাসরি রাজধানীর সংযোগ স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে খুলনার সঙ্গে যশোরের রেল যোগাযোগ রয়েছে এবং পদ্মা সেতুর মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে খুলনার সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে। সে হিসেবে মোংলা-খুলনা রেললাইনটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে রাজধানীর সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর মোংলা-খুলনা রেল লিংক প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। সে সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৭২১ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়সীমা বাড়িয়ে প্রথমে ২০১৪ সালে ডিসেম্বর, এরপর ২০১৮ সালের জুনে, এরপর ২০২০ সালের জুন এবং সর্বশেষ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।

ভারতের প্রথম লাইন অব ক্রেডিটে নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীর পর ব্যয় দাঁড়ায় তিন হাজার ৮০১ কোটি টাকায়। যার মধ্যে ভারতের সহজ শর্তের ঋণের পরিমাণ দুই হাজার ৩৭১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। রেললাইন ছাড়াও এই প্রকল্পের অধীনে নির্মিত হচ্ছে ২১ দশমিক ১১ কিলোমিটার লুপ লাইন, আটটি স্টেশন, ৭১৬ মিটার রূপসা সেতু এবং আরও ৩১টি বড় ও ছোট সেতু।

কেন দ্বিতীয় সংশোধনী?

প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এই প্রকল্পটির একটি সংশোধনী প্রস্তাব জমা দিয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারি প্রকল্পটির মূল্যায়ন কমিটি এ বিষয়ে একটি সভা করেছে। প্রস্তাব অনুসারে, প্রকল্প ব্যয় পৌঁছে যাবে চার হাজার ৭৯৯ কোটি টাকায়। নথি অনুযায়ী, বিদ্যমান ব্যয়ের পর আরও ৯৯৭ কোটি টাকা বাড়তি চাওয়া হয়েছে প্রকল্পের জন্য।

অতিরিক্ত ব্যয়ের এই ৭৪১ কোটি টাকা আসবে প্রকল্প সহায়তা থেকে এবং বাকি ২৫৬ কোটি টাকা আসবে সরকারি কোষাগার থেকে। সেতুগুলোর নকশায় পরিবর্তন এবং আরও জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয়তাসহ ব্যয় বৃদ্ধির বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবনাপত্রে।

প্রকল্পের অন্যতম বড় কাজ রূপসা রেল সেতু নির্মাণ। পূর্বের নকশা অনুযায়ী, পাইলগুলো নির্ধারিত লোড বহন করতে সক্ষম না হওয়ায় সেগুলোর দৈর্ঘ্য বাড়াতে হবে। নথিতে আরও বলা হয়েছে, মাটির মান ভালো না হওয়ায় ৩১টি সেতু এবং ১০৭টি কালভার্টের পাইলের দৈর্ঘ্যও বাড়াতে হয়েছে। এতে করে এই কাঠামোগুলোর নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে। সেতু, স্টেশনের ভবন এবং প্ল্যাটফর্মের নকশায় আরও কিছু পরিবর্তন করতে হবে। যে কারণে ব্যয় বাড়বে বলে সংশোধনী প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও ৯১ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করেছে কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান জানান, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সংশোধিত প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে। এখনো সংশোধিত ব্যয় চূড়ান্ত হয়নি। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবটি চূড়ান্ত হওয়ার পরে তা অনুমোদনের জন্য শিগগির রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

3 quota protest leaders held for their own safety: home minister

Three quota protest organisers have been taken into custody for their own safety, said Home Minister Asaduzzaman Khan

5m ago