পরমাণু চুক্তি: নতুন আলোচনার প্রস্তাব ইরানের প্রত্যাখান

ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে সই করা পরমাণু চুক্তিকে ‘অপরিবর্তনীয়’ হিসেবে উল্লেখ করে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে তারা এ বিষয়ে নতুন করে আলোচনা অথবা চুক্তিটিতে নতুন কোনো দেশকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে রাজি নয়।
Iran
ছবি: এএফপি ফাইল ফটো

ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে সই করা পরমাণু চুক্তিকে ‘অপরিবর্তনীয়’ হিসেবে উল্লেখ করে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে তারা এ বিষয়ে নতুন করে আলোচনা অথবা চুক্তিটিতে নতুন কোনো দেশকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে রাজি নয়।

গতকাল শনিবার সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, চুক্তিতে সৌদি আরবকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে ইরান এমন মন্তব্য করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরমাণু চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা অথবা চুক্তিতে অংশগ্রহণকারীদের কোনো সংযোজনের প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে।

এর আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, চুক্তি নিয়ে নতুন করে কোনো আলোচনা হলে সেখানে সৌদি আরবকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

এর জবাবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবজাদেহ গতকাল দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘পরমাণু চুক্তিটি বহুপাক্ষিক আন্তর্জাতিক চুক্তি। এটি জাতিসংঘ অনুমোদন দিয়েছে। এর রেজুলেশন নম্বর ২২৩১। এটি নিয়ে নতুন করে আলোচনার কিছু নেই। চুক্তিতে যেসব দেশ সই করেছে তা পরিষ্কার করে বলা রয়েছে। এটি পরিবর্তনযোগ্য নয়।’

সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর অবরোধ আরোপ করলে উপসাগরীয় দেশটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা সংক্রান্ত চুক্তির শর্ত ভাঙতে শুরু করে।

নতুন বাইডেন প্রশাসন পরমণু চুক্তিতে ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করে বলেছে, চুক্তিতে ফিরে আসা হবে কেবল চুক্তিটি ইরানের পুরোপুরিভাবে মেনে চলার পর।

কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের সেই দাবিও প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। বলেছে, ওয়াশিংটন ইরানের ওপর অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে তা করা হবে না।

প্রতিবেদন মতে, সৌদি আরব ও এর মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত বলেছে, পরমাণু চুক্তি নিয়ে নতুন কোনো আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোকে রাখতে হবে।

এছাড়াও, দেশ দুটি ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ‘ছায়াযুদ্ধ’ নিয়েও আলোচনার দাবি জানিয়েছে।

ইয়েমেনসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে সৌদি আরব ইরানের ‘ছায়াযুদ্ধে’ আটকে পড়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইরানের ওপর বিগত ট্রাম্প প্রশাসনের ‘সর্বোচ্চ চাপ’কে সমর্থন দিয়েছিল সৌদি আরব।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া

গত শুক্রবার সৌদি-ভিত্তিক আল আরাবিয়া টেলিভিশনে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছিলেন, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে না রাখাটা ভুল হয়েছিল। চুক্তিতে সৌদি আরবকে যুক্ত করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, পরমাণু চুক্তি নিয়ে কোনো নতুন আলোচনা হলে তা খুব ‘কড়াভাবে’ হতে হবে। পরমাণু অস্ত্র বানানো থেকে ইরানকে সরাতে খুব বেশি সময় হাতে নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবজাদেহ বলেছেন, ফরাসি প্রেসিডেন্টের ‘আত্মসংবরণ’ করে কথা বলা উচিত।

তিনি আরও বলেছেন, ‘যদি ফ্রান্সের কর্মকর্তারা মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন তাহলে তারা তাদের নীতি বদলানোর কথা ভাবতে পারেন।’

তার মতে, ‘ফ্রান্সসহ পশ্চিমের দেশগুলোর অস্ত্র দিয়ে শুধু যে ইয়েমেনে গণহত্যা চালানো হচ্ছে তা নয়, সেসব অস্ত্র উপসাগরীয় অঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মূল কারণ।’

সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ইরান চলতি মাসের প্রথম দিকে ইউরেনিয়াম ২০ শতাংশ সমৃদ্ধকরণ শুরু করেছে।

ইরানের কট্টরপন্থিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পার্লামেন্ট গত মাসে একটি আইন পাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি দুই মাসের মধ্যে ইরানের ওপর থেকে অবরোধ তুলে না নেয় তাহলে ইরান সরকারকে পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করতে হবে।

আরও পড়ুন:

ইরান ইউরেনিয়াম ২০ শতাংশ সমৃদ্ধ করছে

Comments

The Daily Star  | English

Army given magistracy power

The government last night gave magistracy power to commissioned army officers with immediate effect for 60 days in order to improve law and order.

8h ago