সেনা অভ্যুত্থান

মিয়ানমারে চীনের বিনিয়োগে বিলম্ব ঝুঁকি

China coup
ছবি: এপি

চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সবার জানা। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে সেখানে চীনের বিনিয়োগ বিলম্বিত হওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে আজ বুধবার চীনের সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এ তথ্য জানিয়েছে।

সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে সেনা শাসকরা দেশটির শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের সরিয়ে সেসব পদে জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় চীনের বিনিয়োগকারীদের মিয়ানমারে আসতে দেরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, অর্থমন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, বৈদেশিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়গুলোতে সেনা অভ্যুত্থানের খারাপ প্রভাব পড়বে।

বেইজিং-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক তাইহি ইনস্টিটিউটের মিয়ানমার-বিষয়ক গবেষক ইয়েন ইহাং সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন, চীনের প্রকল্পগুলো নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দেওয়ায় মিয়ানমারের কয়েকজন কর্মকর্তা চীনের বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলেছেন।

‘অর্থনৈতিক সহযোগিতার কাজে নিয়োজিত ছিলেন এমন অনেককে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে’ উল্লেখ করে ইয়েন বলেছেন, ‘এর মানে হচ্ছে কিছু চুক্তি নিয়ে আবার আলোচনা হতে পারে।’

এ কারণে অনেক চীনা বিনিয়োগকারী নিরুৎসাহিত হতে পারেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

এসব বড় প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মানদালে থেকে বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী কিয়াউকপিউ শহর পর্যন্ত রেল সংযোগ ও মিয়ানমার থেকে চীনের ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত তেল-গ্যাসের পাইপলাইন ও টার্মিনাল।

চীনের অর্থায়নে মিয়ানমারে গভীর সমুদ্র বন্দর ও কিয়াউকপিউ শহরে বেশ কয়েকটি শিল্প-প্রকল্প স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

সম্প্রতি, প্রতিবেশী দেশ দুটি চায়না-মিয়ানমার ইকোনোমিক করিডরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্যে সমঝোতা স্মারক সই করেছে। এই করিডোরের মাধ্যমে চীনের ইউনানকে মিয়ানমারের কিয়াউকপিউ শহরকে সংযুক্ত করা হবে। এটি মূলত ভারত মহাসাগরের সঙ্গে চীনের সংযোগ স্থাপন করবে।

বিশ্লেষক ইয়েন ইহাং মনে করেন মিয়ানমারে এক বছরের জন্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণার কারণে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে পারে।

তিনি বলেছেন, ‘এমনকি, সামনে কোনো নতুন বড় প্রকল্প আসছে বলেও আমি মনে করি না।’

গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মিয়ানমারের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দিলেও তা মিয়ানমারের ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক। ‘কারণ, মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ খুবই সামান্য,’ যোগ করেন তিনি।

গত পাঁচ বছর থেকে মিয়ানমারে কাজ করছেন চীনের এমন এক বাণিজ্য-বিষয়ক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যে উদ্বেগের বিষয় তবে এশীয় বিনিয়োগকারীদের জন্যে আতঙ্কের তেমন কিছু নেই।’

তিনি মনে করেন, ‘সামরিক সরকারের আমলে কাজগুলো দ্রুতই হয়ে থাকে এবং মন্ত্রীর পদে যারা নুতন নিয়োগ পাচ্ছেন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের কাছে তাদের সুনাম রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, নতুন মন্ত্রীরা বিনিয়োগকারীদের প্রতি বন্ধু-ভাবাপন্ন হবেন।’

মিয়ানমারের বিনিয়োগ ও কোম্পানি প্রশাসন অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে ২০১১ ও ২০১২ সালে চীনের বিনিয়োগ ছিল ৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু, এর পরের অর্থবছরে তা হঠাৎ করে ২৩১ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

প্রতিবেদন মতে, সে বছর থেকেই চীনের পরিবর্তে মিয়ানমারে বৃহৎ বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে রয়েছে সিঙ্গাপুর।

আরও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ ঝুঁকিতে মিয়ানমার

‘সু চি সরকারের বেশিরভাগ ক্ষমতা সামরিক বাহিনীর হাতেই ছিল’

রোহিঙ্গা প্রতিক্রিয়া: সু চি-সেনাবাহিনী একই

অভ্যুত্থান মেনে না নেওয়ার আহ্বান সু চির

যে কারণে সু চিকে সরিয়ে ক্ষমতা নিলো সেনাবাহিনী

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দায় বিশ্ব সম্প্রদায়

‘নির্বাচনে কারচুপি’র অজুহাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান

মিয়ানমারে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র চায় বাংলাদেশ

ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে মিয়ানমারের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ

ধীর গতির ইন্টারনেট, মিয়ানমারে ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান, সু চি আটক

Comments

The Daily Star  | English

Israel launches major attack on Iran

‘Nuclear plant, military sites’ hit; strikes likely killed Iranian chief of staff, top nuclear scientists; state of emergency declared in Israel, fearing Iranian retaliation

41m ago