দখল হয়ে গেছে ২ লাখ ৫৭ হাজার একর বনভূমি

এক লাখ ৬০ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সারাদেশে দুই লাখ ৫৭ হাজার একর বনভূমি দখল করে রেখেছে বলে সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে বন বিভাগ।
দখল করা এই বনভূমি রয়েছে ২৮টি জেলায়। বন বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি কক্সবাজারে। এই জেলায় মোট দখল হওয়া জমির পরিমাণ ৫৯ হাজার ৪৭১ একর।
দখলকৃত জমির মধ্যে এক লাখ ৩৮ হাজার একর সংরক্ষিত বন ৮৮ হাজার ২২৫ জন ব্যক্তি ও সংস্থার দখলে ছিল।
গতকাল রোববার এক বৈঠকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে দখলদারদের নামসহ তথ্য-উপাত্ত জমা দিয়েছে বন বিভাগ।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এক লাখ ৬০ হাজার একর বনভূমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশনও রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে দেওয়া হয়েছে ৪৩ হাজার ৯৫ একর জমি। এ ছাড়াও, অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে ২৩ হাজার ২২১ একর বনভূমি।
সংসদীয় কমিটির কাছে দাখিলকৃত নথি অনুসারে, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯৩ হাজার ৯২৩ একর বনভূমি।
জাতীয় সংসদ ভবনে বৈঠক শেষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, কমিটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বনভূমি দখলকারীদের নাম প্রকাশ করতে বলেছে। যাতে করে জনগণ তাদের শনাক্ত করতে পারে এবং দখলদারদের তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়।
দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমরা বনভূমি দখলকারীদের একটি সম্পূর্ণ এবং বিস্তারিত তালিকা পেয়েছি। এটি পাঁচ হাজার পৃষ্ঠার এক বিশাল নথি।’
দখলকৃত এসব বনভূমি দ্রুত উদ্ধারে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।
সাবের হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, ‘মন্ত্রণালয় স্থায়ী কমিটিকে জানিয়েছে যে, তারা দখলদারদের কাছ থেকে বনভূমি উদ্ধার করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি দিয়েছে।’
আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে যেন ‘ভালো পরিমাণ’ বনভূমি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
বন বিভাগ জানিয়েছে, গত অক্টোবর থেকে শুরু করে তিন মাসে ইতোমধ্যে ৫৩৪ একর বনভূমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বনভূমি হস্তান্তর সম্পর্কে এই সংসদ সদস্য বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ ছাড়া কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে উন্নয়নের নামে বনভূমি বরাদ্দ দেওয়া বন্ধ করতে সুপারিশ করেছে কমিটি।
গত ডিসেম্বরে সাঙ্গু-মাতামুহুরি বনভূমি দখলের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্য ডেইলি স্টার। এরপর এই জমিতে বসবাসকারী প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।
Comments