সিনিয়রদের সবাইকে পেয়েও যেন পেলেন না মুমিনুল
টেস্টে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর এই প্রথমবার কোন ম্যাচে সিনিয়র আর অভিজ্ঞ সব তারকাকে একাদশে পেয়েছিলেন মুমিনুল হক। অধিনায়কত্বে আনকোরা মুমিনুল ‘বড় ভাইদের’ পরামর্শের গুরুত্ব সিরিজের আগেও বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু উইন্ডিজের বিপক্ষে রোববার শেষ দিনে দলের চরম সংকট মুহূর্তে বেশ কিছুটা সময় যেন একা হয়ে গেলেন তিনি।
অধিনায়কত্বের চাপটা ফিল্ডিংয়ের সময়েই বেশি, মুন্সিয়ানা দেখানোর জায়গাও তখনই। চূড়ান্ত বিপদ ঘনীভূত হলে অধিনায়ক দলের অভিজ্ঞদের শরণ নেন কিংবা অভিজ্ঞরাই নিজে থেকে এগিয়ে এসে অধিনায়কের ভার কমানোর দায় নেন।
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে উইন্ডিজের রোমাঞ্চকর রান তাড়ার দিনে প্রথম দুই সেশনেই এই দৃশ্য একদম দেখা যায়নি।
ম্যাচের দ্বিতীয় দিনেই চোটে পড়ে ছিটকে গিয়েছিলেন সাকিব আল আসান। পরে তার বোলিং-ব্যাটিং কিছুই পাওয়া যায়নি। ফিল্ডিংয়ে নামার প্রশ্নই উঠে না। সাকিব ছিলেন না। কিন্তু শেষ দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে থাকলেন না তামিম ইকবালও।
আগের দিনে ফিল্ডিং করতে গিয়ে আঙুলে চোট পেয়েছিলেন। খালি চোখে সেটা খুব গুরুতর মনে হয়নি। শেষ সেশনে তার ফিল্ডিংয়ে নামা নিশ্চিত করে এই চোট আসলে তেমন বড় কিছু ছিল না। কিন্তু পঞ্চম দিন সকালের সেশনে তামিম সতর্কতামূলক হিসেবে স্ক্যান করাতে গিয়েছিলেন। প্রথম সেশনে তার না থাকার একটা কারণ বোঝা যায়।
ওই সেশনে উইন্ডিজের কোন উইকেটই ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ। ভয় ধরানোর মতোন ব্যাট করে যাচ্ছিলেন কাইল মায়ার্স আর এনক্রুমা বোনার। দ্বিতীয় সেশনেও তামিম নামলেন না মাঠে। এই সেশনেও কোন উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ। বোলিং, ফিল্ডিং আর শরীরী ভাষা ছিল আরও বাজে।
একজন সিনিয়র অবশ্য পুরোটা সময় মাঠেই ছিলেন। সেই মুশফিকুর রহিম ফাইন লেগ, থার্ড ম্যান আবার কখনো মিড উইকেটে ফিল্ডিং করেছেন। লম্বা সময়ে উইকেট পড়ছে না দেখেও অধিনায়ক মুমিনুলের সঙ্গে আলাদা পরামর্শ দিতে দেখা যায়নি তাকে। ছিলেন অনেকটা নিজের মতো, বিচ্ছিন্ন।
শেষ সেশনে গিয়ে ভয় যখন অনেকটাই চড়া। তৎপর হন সিনিয়ররা। তামিম ফেরেন মাঠে, মুশফিককেও এগিয়ে যেতে দেখা যায়। ২১৬ রানের জুটির পর বোনার আউট হলেও ম্যাচ তখন উইন্ডিজের হাতে। বাকি দুই ফলের চেয়ে বাংলাদেশের জয় অনেক দুরূহ। শেষ দিকে হাতে বল লাগায় তামিম আবারও মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন। তবে এর আগে মুশফিকসহ মুমিনুলকে নিয়ে উদ্বিগ্ন আলাপ আলোচনা চালিয়েছেন মাঠে। মায়ার্স তখন বিস্ফোরক। ক্রিকেট বল দেখছেন ফুটবলের আকারে। শেষ সময়ের এই শলা পরামর্শে কোন উপায় আর বের করা হয়নি বাংলাদেশের।
আরেক সিনিয়র সাকিব চা-বিরতির সময় স্পিনারদের ডেকে পরামর্শ দিয়েছেন। বার কয়েক মেহেদী হাসান মিরাজ বেরিয়ে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন। কাজ হয়নি কিছুই।
এমনিতে শেষ ঘন্টার আগে আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়েছিলেন মুমিনুল। কিন্তু পরিস্থিতির দাবি ছিল ‘আউট অব দ্য বক্স’ কিছু করা। সেটা তার মাথা থেকে বের হয়নি। নিয়মিত বোলারদের দিয়ে কাজ না হলে সাধারণত অনিয়মিত বোলার দিয়ে চেষ্টা চালানো হয়। মুমিনুল নিজে বল হাতে নিতে পারতেন। সেদিকে যাননি তিনি
৩৯৫ রানের লক্ষ্য দিয়েও তাই অভিষিক্ত বোনার্সের ডাবল সেঞ্চুরিতে ৩ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে হারের বোঝা কাঁধে দিয়ে দলবল নিয়ে মুমিনুলের মাঠ ছাড়ার সময় বিমর্ষ চেহারায় ‘আসল সময়ে’ একা হয়ে পড়ার একটা হাহাকারও বোধহয় ধরা পড়ল।
Comments