চট্টগ্রামে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে ৬ পুলিশ গ্রেপ্তার

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় গভীর রাতে বাড়ি থেকে এক ঠিকাদারকে তুলে নিয়ে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ছয় কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গতকাল তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছে আদালত ও পুলিশ সূত্র।

গ্রেপ্তার ছয় জন হলেন- আব্দুল নবী, মো এস্কান্দর হোসেন, মনিরুল ইসলাম, শাকিল খান, মো. মাসুদ এবং মোরশেদ বিল্লাহ। এরা সবাই সিএমপির এসএএফ শাখার সদস্য।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত দুইটার দিকে আনোয়ারা বৈরাগ ইউনিয়নের পূর্ব বৈরাগ এলাকার শফি তালুকদারের বাড়ি হিসেবে পরিচিত বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

পরে শনিবার ভুক্তভোগী ঠিকাদার আবদুল মান্নান (৩০) আনোয়ারা থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং ঘটনার সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা পায়। তবে, এ ব্যাপারে সিএমপি বা জেলা পুলিশের কোনো কর্মকর্তা বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি। কিন্তু, আজ সোমবার ঘটনা জানাজানি হলে নগরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার এসএম রাশিদুল হক আজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে এবং ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

মামলার বাদী মো. আব্দুল মান্নান এজাহারে নিজেকে একজন ঠিকাদার হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

মামলার এজাহারে বাদী জানান, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে কাজ শেষে গ্রামের বাড়িতে পরিবারসহ ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। আনুমানিক রাত দুইটার দিকে কয়েকজন মানুষ তার ঘরের দরজায় কড়া নাড়েন এবং তার নাম ধরে ডেকে ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য বলে। ডাকাডাকিতে পরিবারের সদস্যদের ঘুম ভেঙে যায় এবং মান্নান ঘরের দরজা খুলতেই দুই জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তাকে ধরে ফেলে। তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে ঘর থেকে বের করে ২০০ ফুট দূরে নিয়ে যায়।’

সেখানে দুষ্কৃতদের মোটরসাইকেলে অন্যরা অবস্থান করছিল বলে জানায় সূত্র।

পরবর্তীতে তাকে একটি মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে সেই আটজন চারটি মোটরসাইকেল আনোয়ারা সদরের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা পটিয়া উপজেলার ভেল্লাপাড়া ব্রিজের পূর্বপাশে কৈয়গ্রাম রাস্তার মাথা এলাকায় একটি চায়ের দোকানের সামনে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় একজনের গায়ে ডিবি জ্যাকেট ছিল। আটজনের মধ্যে ছয়জন পুলিশ ও দুইজন সিভিল বলে সূত্র জানায়।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সেখানে তাকে নানান ভয়-ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা। একইসঙ্গে আত্মীয়-স্বজনকে টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দিতে থাকে। এ ঘটনার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে তাকে গুলি করার হুমকিও দেওয়া হয়।

পরে ফোনে আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে এক লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা তাদের হাতে দিলে ভোর পাঁচটার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়। এরপর মোটরসাইকেলযোগে ওই আট জন পটিয়ার দিকে পালিয়ে যায় বলে জানায় স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র।

চারটি মোটরসাইকেলের মধ্যে একটি ছিল লাল রঙের পালসার ব্রান্ডের এবং বাকি তিনটি রেজিস্ট্রেশনবিহীন।

এ ঘটনায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি আনোয়ারা থানায় অভিযোগ করা হলে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সৈয়দ ওমর ঘটনা তদন্ত শুরু করেন।

সিএমপির কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর দ্যা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অপরাধের সঙ্গে যে জড়িত হোক না কেন কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। সে পুলিশ সদস্য হলেও, আইন সবার জন্য সমান। যারাই অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবেই।’

কমিশনার আরও জানান, তাদের সাময়িকভাবে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং বিভাগীয় মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন।

এর আগে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর অস্ত্র বিক্রি করার সময় চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের কনস্টেবল স্বরূপ বড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এর একদিন আগে সীতাকুণ্ডে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে এক ড্রাইভারের কাছ থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সীতাকুণ্ড মডেল থানার এস আই সাইফুল ইসলাম ও কনস্টেবল সাইফুল আলম।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago