ঋণ পরিশোধের মেয়াদ দীর্ঘ করতে ব্যাংক পরিচালকদের তদবির

মেয়াদী ও চলতি মূলধন ঋণ পরিশোধের মেয়াদ আরও শিথিল করতে বাংলাদেশে ব্যাংকের কাছে তদবির করছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিএবির চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদারের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে করোনা মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এসব ঋণ পরিশোধের মেয়াদ শিথিল করার আহ্বান জানান।

কিন্তু, ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে করে ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটবে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক বিএবির প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে।

এ ব্যাপারে জানতে বিএবির চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মেয়াদী ঋণ পরিশোধের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিল করা সময় আরও দুই থেকে তিন বছর সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়েছে বিএবি।

এক বছরের বেশি মেয়াদের জন্য নেওয়া ঋণ মেয়াদী ঋণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

করোনা মহামারি অব্যাহত থাকায় ঋণগ্রহীতারা যাতে কিস্তি পরিশোধ করতে পারেন সেই লক্ষ্যে গত ৩১ জানুয়ারি মেয়াদী ঋণ পরিশোধের সুবিধা সহজ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত বছর মেয়াদী ঋণের যে কিস্তি পরিশোধ করার কথা ছিল সেগুলো ঋণগ্রহীতাদের নেওয়া মূল অংকের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। এতে করে সমস্যায় পড়বেন ঋণগ্রহীতারা। কারণ এতে করে কিস্তির আকার আরও বেড়ে যাবে। ফলে, গত ৩১ জানুয়ারি ঋণ পরিশোধের সুবিধা সহজ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিএবি চলতি মূলধন ও তলবি ঋণ পরিশোধের মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে তিন বছর করার অনুরোধ জানিয়েছে।

ব্যবসা পরিচালনার জন্য অল্প সময়ের নোটিশে যে ঋণ নেওয়া হয় সেটাই তলবি ঋণ। ঋণগ্রহীতাকে এক বছরের মধ্যেই এর আসল ও সুদ পরিশোধ করতে হয়।

চলতি মূলধনও স্বল্প মেয়াদী ঋণ। ব্যবসা পরিচালনার জন্যও ঋণগ্রহীতারা ব্যাংক থেকে এই ঋণ নিয়ে থাকেন। এই ঋণ পরিশোধের জন্য সর্বোচ্চ সময় নির্ধারণ করা হয় এক বছর।

এর পাশাপাশি তলবি ও চলতি মূলধন ঋণ পুনঃতফশিল করতে ব্যাংকগুলোকে কোনো ডাউন পেমেন্ট না নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছে বিএবি।

চলতি মূলধন ও তলবি ঋণ পুনঃতফশিল করতে ব্যাংকগুলো সাধারণত ঋণগ্রহীতার মোট ঋণের ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নেয়।

বিএবির প্রস্তাব সম্পর্কে চারটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার। তারা সবাই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেছেন, এর ফলে ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার অবনতি হবে।

তারা বলেন, ব্যাংক তলবি ও চলতি মূলধন ঋণ যদি মেয়াদী ঋণে পরিণত করে তাহলে ব্যাংকিং খাত ভবিষ্যতে তারল্য সংকটে পড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে বিতরণ করা ঋণের  ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকার ৭০ শতাংশই মেয়াদী ঋণ।

ব্যাংকিং খাতের বর্তমান এই উদ্বৃত্ত তারল্য দীর্ঘস্থায়ী হবে না এবং অর্থনীতি এগোলে ব্যাংকগুলো তহবিল সংকটে পড়তে পারে।

একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘যদি চলতি মূলধন ও তলবি ঋণকে মেয়াদী ঋণে পরিণত করা হয় তাহলে ব্যাংকগুলোর নগদ প্রবাহ কমে যাবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকায় বিএবি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এ জাতীয় প্রস্তাব দিতে পারে না, যেহেতু তারা ব্যাংকের পরিচালক।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজে পরিচালকদের জড়িত হওয়ার সুযোগ নেই। তবে এই প্রস্তাবগুলো স্পষ্টতই দেখিয়ে দিচ্ছে যে ব্যাংকের প্রতিদিনের কাজকর্ম এবং নিয়ম লঙ্ঘনে তারা জড়িত।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত বিএবির সুপারিশগুলোর কঠোর বিরোধিতা করা।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

2h ago