মিয়ানমারে সেনাবিরোধী বিক্ষোভ চলছে
মিয়ানমারে সেনাবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনীর জলকামান ব্যবহার ও রাবার বুলেট ছোড়ার পর আজ বুধবার সকালে আবারও রাস্তায় নেমেছে বিক্ষোভকারীরা।
জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ওপর বল প্রয়োগের নিন্দা জানিয়ে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার ও এনএলডি নেতা অং সান সু চিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
আজ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এক তরুণ নেতা এসথার জে নাও বার্তা সংস্থাটিকে বলেছে, ‘আমরা নীরব থাকতে পারি না। আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যদি রক্তক্ষয় হয় তাহলে সেনাদের ক্ষমতায় থাকতে দিলে আরও বেশি রক্তক্ষয় হবে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির প্রধান শহর ইয়াঙ্গুন। রাজধানী নেপিডোতে কয়েক শ সরকারি কর্মচারী জান্তাবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। দেশটির স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রথম এই অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছিলেন।
গতকালকের বিক্ষোভে নিরাপত্তা রক্ষীদের গুলিতে এক আন্দোলনকারী গুরুতর আহত হয়েছেন বলে এক চিকিৎসক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। নেপিডোতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছোড়লে তিনি গুরুতর আহত হন। চিকিৎকসদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য রাবার বুলেটে আহত আরও তিন জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মিয়ানমারের জনগণের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকারের প্রতি দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রতিনিধি ওলা আলমগ্রিন বলেছেন, ‘বিক্ষোভকারীদের ওপর বাড়তি বল প্রয়োগ করলে তা মেনে নেওয়া হবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা মিয়ানমারের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করছে যাতে অভ্যুত্থানের জন্যে দায়ী ব্যক্তিদের ‘বিচারের মুখে’ আনা যায়।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস ওয়াশিংটনে বলেছেন, ‘আমরা আবারও সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা ছাড়ার ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানাচ্ছি। আটক সবার মুক্তি, টেলিযোগাযোগ স্বাভাবিক ও সংঘাত এড়িয়ে চলার আহ্বানও জানাচ্ছি।’
‘মিয়ানমারকে বিচ্ছিন্ন রাখা যাবে না’
সামরিক শাসন থেকে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনতে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সেনা কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে অতীতে দেশটিকে অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছিল। কিন্তু এবার সে রকম সম্ভব হবে বলে মনে করছেন না অনেক বিশ্লেষক।
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য ও আফ্রিকা শিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক অবিনাশ পালিওয়াল রয়টার্সকে বলেছেন, ‘অতীতের মতো মিয়ানমারকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা যাবে না।’
তিনি মনে করেন, চীন, ভারত, জাপান ও আসিয়ান-ভুক্ত দেশগুলো মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে রাজি নাও হতে পারে।
‘ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে মিয়ানমার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের অন্যান্য দেশ এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। কিন্তু, মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও এর প্রভাব একটি এশিয়ান বিষয়, পাশ্চাত্যের নয়’, যোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন:
মিয়ানমারে বিক্ষোভ দমনে জলকামান, গ্রেপ্তার
মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিত করল নিউজিল্যান্ড
মিয়ানমারের আকাশসীমায় নিরাপদ উড়োজাহাজ পরিচালনায় সহায়তা করছে বাংলাদেশ: বেবিচক
ভোট কারচুপি করে জিতেছিলেন সু চি: মিয়ানমারের সেনাপ্রধান
অভ্যুত্থান মেনে না নেওয়ার আহ্বান সু চির
যে কারণে সু চিকে সরিয়ে ক্ষমতা নিলো সেনাবাহিনী
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দায় বিশ্ব সম্প্রদায়
‘নির্বাচনে কারচুপি’র অজুহাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান
Comments