নবম-দশম শ্রেণির পৌরনীতি ও নাগরিকতা বইয়ের অসঙ্গতি সংশোধনের দাবিতে ২১ নাগরিকের বিবৃতি

নবম-দশম শ্রেণির পৌরনীতি ও নাগরিকতা বইয়ের প্রচ্ছদ ও সম্পাদনা পাতা। ছবি: সংগৃহীত

নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পৌরনীতি ও নাগরিকতা পাঠ্যবইয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয় পর্বে অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করে তা অনতিবিলম্বে সংশোধন করার দাবি জানিয়েছেন দেশের ২১ নাগরিক।

শিক্ষাবিদ, লেখক, নাট্যব্যক্তিত্বসহ ২১ নাগরিক গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সব পাঠ্যবই যথাযথভাবে পুনর্বিবেচনা করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক তৎপরতা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিদাতারা হলেন--আবদুল গাফফার চৌধুরী, হাসান আজিজুল হক, অনুপম সেন, শামসুজ্জামান খান, রামেন্দু মজুমদার, ডা. সারোয়ার আলী, ফেরদৌসী মজুমদার, আবদুস সেলিম, মামুনুর রশীদ, মফিদুল হক, শফি আহমেদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবীর, সারা যাকের, লাকী ইনাম, গোলাম কুদ্দুছ, শিমূল ইউসুফ, মুহাম্মদ সামাদ, হাসান আরিফ ও নির্মলেন্দু গুণ।

তারা জানান, দেশের নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পৌরনীতি ও নাগরিকতা পাঠ্যবইয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয় পর্বে গুরুতর অসঙ্গতি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। রাজনৈতিক দলের পরিচিতিতে যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল "বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী"কে রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে দলটির ঘৃণিত মানবতাবিরোধী অপরাধের কোন উল্লেখ নেই।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'ইতিহাস এ কথা বলে যে জামায়াত ইসলামী ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সশস্ত্র অবস্থান নেয় এবং মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের নির্মম হত্যাকান্ড ও চার লক্ষাধিক নারী ধর্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তাদের যুদ্ধাপরাধের কারণে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল জামায়াতে ইসলামকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসাবে শনাক্ত করেছে এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালত গণহত্যার দল হিসাবে জামায়াতের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছে। তাই কোন অবস্থাতেই "জামায়াতে ইসলাম"কে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করা যায় না।'

'এই বিকৃত তথ্যমূলক পাঠ্যবই আমাদের কোমলমতি ছাত্রদের শুধুমাত্র বিভ্রান্তই করবে না, একইসাথে সত্য জানা থেকে বিরত রাখবে,' বিবৃতিদাতারা বলেন।

তারা বলেন, 'জামায়াতে ইসলাম মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবি হত্যার প্রধান ঘাতক দল ছিল, এই বইয়ে তার উল্লেখ নাই। উপরন্ত ১৯৭১ এর জামায়াতের মানবতাবিরোধী কার্যকলাপেরও উল্লেখ নাই। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে প্রণীত সংবিধানে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়েছিল, বাংলার মাটিতে জামায়াতে ইসলামের কোন স্থান ছিল না। বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে পরবর্তীকালে দলটি আত্মপ্রকাশ করে। যা উল্লেখ থাকা বাঞ্ছনীয় এবং উল্লেখ না থাকাটা বড় ধরনের অন্যায় বলে আমরা মনে করি।'

বিবৃতিদাতারা বলেন, 'আমাদের দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে গঠিত সম্পাদনা পরিষদ কীভাবে এ ধরনের পাঠ্যবই রচনা ও সম্পাদনা করেন তা ভেবে আমরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ।'

এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জবাবদিহিতা দাবি করে তারা বলেন, 'এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক অসত্য ও অর্ধসত্য তথ্য দিয়ে রচিত ও সম্পাদিত পাঠ্যবই অনতিবিলম্বে সংশোধন করা হোক। সেই সঙ্গে সব পাঠ্যবই যথাযথভাবে পুনর্বিবেচনা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঘিরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বহুবিধ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক তৎপরতা জোরদার করার দাবি আমরা জানাই।'

Comments

The Daily Star  | English

US halts new student visa interviews

The State Department prepares to expand social media vetting of foreign students.

9h ago