‘বাংলাদেশের সঙ্গে পুরনো সব যোগাযোগ পুনরুজ্জীবিত করতে চায় পাকিস্তান’

বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি বলেছেন যে, তার দেশ সম্পর্ক উন্নয়ন ও অব্যবহৃত সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশের সঙ্গে পুরনো সব যোগাযোগ পুনরুজ্জীবিত করতে চায়। যাতে করে বাংলাদেশের উন্নয়ন থেকে পাকিস্তানও লাভবান হতে পারে।
Imran Ahmed Siddiqui.jpg
ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি বলেছেন যে, তার দেশ সম্পর্ক উন্নয়ন ও অব্যবহৃত সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশের সঙ্গে পুরনো সব যোগাযোগ পুনরুজ্জীবিত করতে চায়। যাতে করে বাংলাদেশের উন্নয়ন থেকে পাকিস্তানও লাভবান হতে পারে।

সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘আমি পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি যে, আমাদের নেতৃত্ব সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের নেতৃত্ব থেকে আমি নির্দেশনা পেয়েছি।’

দু’দেশের মধ্যে ঘন ঘন উচ্চ-পর্যায়ের সফরের ওপর জোর দিয়ে হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাঠানো এক আমন্ত্রণের কথা জানান।

দু’দেশের মধ্যে বৈসাদৃশ্যের চেয়ে সাদৃশ্য বেশি রয়েছে। সবগুলো শাখাই অব্যবহৃত রয়েছে। তবে বিশাল এক সম্ভাবনা আছে উল্লেখ করে হাইকমিশনার সিদ্দিকি বলেন, ‘উভয় পক্ষেরই রাজনৈতিক দৃঢ় সংকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে এবং বাংলাদেশের বেশকিছু মানুষকে জানেন তিনি। আমরা প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নির্দেশনায় অনেক মাইলফলক অর্জন করতে পারি। সদিচ্ছা তৈরিতে কাজ করতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়াসহ দেশটির সঙ্গে থাকা অসমাপ্ত দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় সমাধানে পুনরায় গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি সম্প্রতি উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে আটকা পড়া পাকিস্তানিদের তাদের দেশে প্রত্যাবাসন এবং সম্পদ বণ্টনের বিষয়টি নিষ্পত্তিরও আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা। সেই সঙ্গে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে যে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের অত্যাচার বাংলাদেশ ভুলতে পারবে না এবং এ ক্ষত চিরকাল থাকবে।

এক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, ‘তিনি সবার আগে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পররাষ্ট্র সচিব-পর্যায়ের আলোচনার মতো পুরনো সব সম্পর্ক স্থাপন ও পুনরুদ্ধারে মনোযোগ দিচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের আলোচনা অনেক দিন ধরে হচ্ছে না এবং এটা ফের শুরু হলে আলোচনা করার মতো অনেক প্রকল্প পাওয়া যাবে।’

হাইকমিশনার করাচির সঙ্গে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সফর বিনিময় এবং সরাসরি বিমান ও জাহাজ চলাচলের ওপর জোর দেন। ‘আমরা যৌথভাবে অনেক কিছুই করতে পারি।’

‘আমাদের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের সাফল্যে খুশি। আমরা এ সাফল্যকে আমাদের নিজেদের মনে করি, কারণ এই উন্নয়ন থেকে লাভবান হওয়ার বিশাল সম্ভাবনা আছে’, বলেন হাইকমিশনার সিদ্দিকি।

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) ১৯তম শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনে পাকিস্তানের প্রস্তাব আবারও নাকচ হয়েছে। তারা দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তানের হাইকমিশনার বলেন, ‘আমরা সার্কের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তবে সব দেশকেই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা একচেটিয়া হতে পারে না এবং এটাই ইতিহাস ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির শিক্ষা। এটা অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে।’

হাইকমিশনারের দাবি, একটি দেশকে ‘বিচ্ছিন্ন করার কৌশল’ কখনই কাজ করে না।

আস্থার ঘাটতি এবং আত্মবিশ্বাসের কমতির বিষয়ে বলতে গিয়ে হাইকমিশনার সিদ্দিকি বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আন্তরিকতা। এ অঞ্চলে অনেক সমস্যা আছে। এ জন্য আমাদের একসঙ্গে বসে সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে হবে। এই বিষয়গুলো মেনে নেওয়া এবং তা সমাধান করতে হবে।’

হাইকমিশনার সিদ্দিকি বলেন, ‘এ অঞ্চলের পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে এবং বিদ্যমান সদিচ্ছাকে সামনে রেখে বৈঠকে বসা এবং সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা ছিল খুবই লক্ষণীয় এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রতিনিধি এর প্রশংসা করেছেন। বিষয়টি সমাধান করা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে বিষয়টি সমাধানের পক্ষে পাকিস্তান পুরোপুরি একমত এবং তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের জন্মস্থানে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন। আমরা ওআইসির মধ্যে থেকে জাতিসংঘ ও ওআইসির সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।’

হাইকমিশনার সিদ্দিকি বলেন, ‘তারা বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং চীনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়াকে সমর্থন করেন এবং এর মাধ্যমে ভালো ফলাফল আসার ব্যাপারে আশাবাদী।’

কোভিড-১৯ টিকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান চীনের সঙ্গে কাজ করছে এবং তারা একাধিক উৎস থেকে টিকা পাচ্ছে। চীনের সঙ্গে খুব ভালো অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করা হচ্ছে।’

ক্রিকেট সম্পর্কে পাকিস্তানের হাইকমিশনার বলেন, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে এবং শিগগিরই আবার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। দুই দেশকে একত্রিত করার জন্য আমরা ক্রিকেটকে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করছি।’

তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল বর্তমানে পাকিস্তান সফরে আছে।’

হাইকমিশনার পর্যটন খাতের সম্ভাবনার কথাও বলেন এবং এই খাতে তারা একসঙ্গে কাজ করতে পারেন বলে জানান।

তিনি দুই দেশের মধ্যকার স্মৃতিকাতরতা, শুভকামনা, যোগাযোগ এবং অনলাইনে থাকা গান ও নাটকের বিষয়গুলো উল্লেখ করে বলেন, ‘শিল্পী রুনা লায়লা পাকিস্তানে এখনও অনেক জনপ্রিয়।’

কোনো ফারাক থাকলে তা দূর করতে হবে বলে মত দেন তিনি।

পাকিস্তান হাইকমিশনার বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের তাদের ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনতে পাকিস্তানেও বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারলে খুব খুশি হব।’

হাইকমিশনার সিদ্দিকি বলেন, ‘তারা ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তান সফরের সময় তোলা ছবিগুলো একসঙ্গে করে একটি অ্যালবাম তৈরির কাজ করছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি এগুলো থেকে একটি অ্যালবাম তৈরির জন্য সব ছবি সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। এটি আমাদের দুই দেশের ঐতিহাসিক সংরক্ষণশালার অংশ হয়ে থাকবে।’

Comments

The Daily Star  | English

$8b climate fund rolled out for Bangladesh

In a first in Asia, development partners have come together to announce an $8 billion fund to help Bangladesh mitigate and adapt to the effects of climate change.

10h ago