রপ্তানি পণ্য হয়ে উঠতে পারে টিউলিপ

বাংলাদেশের আবহাওয়ায় টিউলিপ ফুল ফোটানো সম্ভব বলে প্রমাণ করেছেন ফুলচাষি মো. দেলোয়ার হোসেন। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া দক্ষিণখণ্ড গ্রামে টিউলিপ ফুলের এক হাজার বাল্ব রোপণের ২২ দিনের মাথায় তার বাগানে টিউলিপ ফুল ফোটে।
Tulip-1.jpg
ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেনের বাগানে টিউলিপের হাসি। ছবি: স্টার

বাংলাদেশের আবহাওয়ায় টিউলিপ ফুল ফোটানো সম্ভব বলে প্রমাণ করেছেন ফুলচাষি মো. দেলোয়ার হোসেন। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া দক্ষিণখণ্ড গ্রামে টিউলিপ ফুলের এক হাজার বাল্ব রোপণের ২২ দিনের মাথায় তার বাগানে টিউলিপ ফুল ফোটে।

চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের বাগানে টিউলিপ ফুটেছে দেখে অন্যদের চেয়ে আমরাই বেশি খুশি। প্রায় ১৫ বছর আগে থেকে আমরা ফুল চাষ শুরু করি। প্রথমে বাণিজ্যিকভাবে পরিকল্পনা করিনি। কিন্তু প্রথম বছরেই উৎপাদন ভালো হওয়ায় পর গ্লাডিউলাস ফুল চাষের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করি। নেদারল্যান্ডস থেকেই ফুলের চাষ প্রক্রিয়া, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তির ব্যবহার, ফুল গাছ রোপণ ও পরিচর্যা প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তিগত পণ্য সংগ্রহ করি। গতবারের মতো এবারও আমার বাগানে বিরল প্রজাতির টিউলিপ ফুল ফুটেছে।’

দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী শেলীও ফুল চাষে সমানভাবে জড়িত। শেলী বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস থেকে ২০১৭ সালে রয়েল ভ্যান জেন্টেন নামক একটি কোম্পানি থেকে লিলিয়াম ফুলের ৬০ হাজার বাল্ব এনে চাষ শুরু করি এবং সফল হই। দুই বছর লিলিয়াম উৎপাদন করি। তৃতীয় বছরে লিলিয়ামের বাল্বগুলো সংরক্ষণ করি ও পরে সেগুলো বিক্রি করে দেই।’

Tulip-2.jpg
টিউলিপ বাল্ব থেকে দুটি পাতা বেরোনোর পরই ফুল ফুটে উঠে। ছবি: স্টার

তিনি বলেন, ‘গত বছরের শেষের দিকে একই দেশ থেকে ফুল গাছ ও বাগানের প্রযুক্তিগত কাঁচামাল সংগ্রহ করি। তখন সে দেশ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে আমাদের টিউলিপ ফুলের এক হাজার বাল্ব ওই কোম্পানি থেকে বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়।’

‘রোপণের ২২ দিনের মাথায় টিউলিপ বাল্বগুলো থেকে দুটি পাতা বেরোনোর পরই ফুল ফুটে উঠে। জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ফুলের দেখা মেলে। একে একে প্রায় প্রতিদিন এক হাজার বাল্ব থেকে ফুল ফুটতে থাকে’, বলেন শেলী।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপিরচালক ড. মো. আব্দুল মুঈদ বলেন, ‘বাংলাদেশে টিউলিপ চাষ সফলভাবে করা সম্ভব। চাষি দেলোয়ার হোসেন তা করে দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের মাটিতে টিউলিপ ফুল ফুটতে দেখা আমার এটিই প্রথম। সাধারণত বরফ প্রধান দেশসমূহে টিউলিপ ফুলের চাষ হয়। ইউরোপের দেশগুলোতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকায় সেসব দেশে টিউলিপের অহরহ চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু টিউলিপ ফুলের সফল চাষ করে চাষি দেলোয়ার হোসেন অবাক করে দিয়েছেন। আমরা এ নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলব। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসেবে টিউলিপ ফুলের চাষ করতে পারবে।’

ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘টিউলিপ গাছের ফলন ও ফোটার জন্য কমপক্ষে ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রার প্রয়োজন। সেখানে আমাদের এলাকায় সর্বনিম্ন ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে।’

‘এর মধ্যেই স্বপ্নের এ ফুলটি ফুটেছে। অনেকে ৮০ টাকা পিস কিনে নিতে চেয়েছিলেন, বিক্রি করিনি’, যোগ করেন তিনি।

Tulip-3.jpg
দেশে বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। ছবি: স্টার

দেলোয়ার বলেন, ‘দেশে যেহেতু আমার বাগানেই প্রথম ফলন, সেহেতু আমি বিক্রি করব না। অনেক দর্শনার্থী এসে ফুলগুলো দেখছেন। এটি আমাদের অর্জন, দেখতে ভালো লাগে, মানুষ আসছে দেখার জন্য। এতেই আমাদের আনন্দ। ফুলটি না ফুটলে হয়তো এ আনন্দ আমি টাকা দিয়ে কিনতে পারতাম না।’

‘ভবিষ্যতে টিউলিপের চাষ বাণিজ্যিকভাবে করার পরিকল্পনা রয়েছে। চাষের বিষয়ে নেদারল্যান্ডস থেকে আরও জ্ঞান নিয়ে বৃহৎ পরিসরে টিউলিপের চাষ করার আশা রয়েছে’, বলেন তিনি।

দেলোয়ার হোসেন দুই একরের বেশি জমিতে ফুলের চাষ করে আসছেন। প্রায় ১৫ বছর যাবত ফুলের চাষ করছেন তিনি। এবার স্ট্রবেরি এবং ক্যাপসিকামের আবাদও করেছেন। তার কাছ থেকে ফুল চাষের আদ্যোপান্ত জেনে নিয়ে ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ, সাভার, কাপাসিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেকে ফুল চাষে এগিয়ে এসেছেন।

চাষে প্রযুক্তিগত কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা পেলে ফুল চাষ আরও বিস্তৃতি লাভ করবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন:

প্রথমবার টিউলিপ ফুটল বাংলাদেশে

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago