ঘোরের মধ্যে আছেন রাজ্জাক

২০০১-০২ মৌসুমে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল আব্দুর রাজ্জাকের। সময়ের হিসেবে তাই পাক্কা ২০ বছর। দুই যুগ থেকে বহন করা ‘বর্তমান ক্রিকেটার’ পরিচয়টা শনিবার থেকে আর নেই তার। ২০০৪ সালে শুরু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও খেলছেন এক দশকের বেশি। তবে সব ধরণের ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়াটা হলো আজই। নিতে যাচ্ছেন জাতীয় নির্বাচকের দায়িত্ব। জীবনের এই পালাবদলের সময় আবেগাক্রান্ত রাজ্জাক জানালেন, তিনি আছেন ঘোরের মধ্যে।
শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারের সামনে সতীর্থ শাহরিয়ার নাফীসের সঙ্গে বিদায় ঘোষণা দেন তিনি। তাদের সম্মানে ছোট এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন।
বিসিবি সভাপতির কাছ থেকে সম্মাননা স্মারক নিয়ে গণমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না রাজ্জাক, ‘গতকাল পর্যন্ত আমি ছিলাম ক্রিকেট খেলোয়াড়। আর এখন আমার আরেকটা পরিচয় বলতে হবে। যতটা সহজে বলছি আমার জন্য ততটা সহজ না। আমি এখনো ঘোরের মধ্যে আছি। ৯৪ থেকে আমার মূলত ক্রিকেটে আসা। যখন আমি বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছি। সে জিনিসটাকে বিদায় বলা।’
‘খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। সময়ের দাবিতে মানুষকে ছেড়ে দিতে হয়। আবেগ বলে যে ব্যাপারটা আছে, আমার মধ্যে সেটা কাজ করছে।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২৭৯ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার। তবে ওয়ানডেতেই ছিলেন সবচেয়ে সফল। একদিনের ক্রিকেটে দেশের সব সময়ের সেরাদের একজন মনে করা হয় তাকে। এই সংস্করণেই নিয়েছেন ২০৭ উইকেট। দেশের অনেক সাফল্য এসেছে তার হাত ধরে।
টেস্ট ক্যারিয়ার খুব সমৃদ্ধ না হলেও প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে রাজ্জাক ছিলেন ভীষণ সফল। ১৩৭ ম্যাচে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬৩৪ উইকেট তার। বিদায় বেলায় জানালেন ক্যারিয়ারের সবগুলো মুহূর্তই তার কাছে বিশেষ, ‘আমার এই ক্যারিয়ারটা আমার জীবনে বিশেষ। আমার মনে হয় না কখনো ভুলতে পারব। এটা ভুলার মতো না। আমার কাছে স্মরণীয় থাকবে। ’
কম গুরুত্ব দিয়ে চলে দেশে ঘরোয়া ক্রিকেট। কিন্তু রাজ্জাক এই সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে খেলতেন প্যাশন নিয়ে। তার আশা আগামীতে তারচেয়েও বেশি প্যাশন নিয়ে খেলবেন তরুণরা, ‘আমি আশা করব আমার থেকে আরও গুরুত্ব দিয়ে খেলবে। সেভাবে খেলে জাতীয় দলে আসবে। এটা না হলে আসলে আমাদের ক্রিকেটের জন্য ভাল কিছু হবে না।’
মাঠ থেকে বিদায় নিতে না পারলেও আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় পাওয়ায় ভীষণ তৃপ্ত রাজ্জাক আশাবাদী ক্রিকেটারদের বিদায়ের সুন্দর সংস্কৃতিও তৈরি হবে দেশে, ‘আমাদের দেশে অনেক টেস্ট খেলোয়াড় ছিলেন। যারা এই সুযোগ পাননি। আস্তে আস্তে আশা করি সেই সংস্কৃতি হবে। জাতীয় দলে খেলা অনেক ত্যাগের ব্যাপার। ভালোর হত শেষ নেই। এরপর যেন মাঠ থেকেও বিদায় নেওয়া হয়। কারণ হঠাৎ অনেক খেলোয়াড় বিদায় নিত, কেউ জানত না। আপনারাও জানতেন না হয়ত। এরপর যেন সেই পরিস্থিতি তৈরি হয় (মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার)।’
Comments