শনিবারের ভূমিকম্পে জাপানে বিদ্যুৎ বিপর্যয়
জাপানে শনিবারের ভূমিকম্পে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি না হলেও ব্যাপক বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কবলে পড়ে দেশটি।
জাপান সরকারের মুখপাত্র কাতসুনোবু কাতো জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে প্রায় ৯ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশী পরিবার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলেও অনেক পরিবারকে বিদ্যুৎবিহীন রাত কাটাতে হয়।
কাতো আরও জানিয়েছেন, নাগাওয়া পারমাণবিক ফ্যাসিলিটিতে কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। কিন্তু, ভূমিধ্বসে ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
ফুকুশিমা ১ নং ও ২ নং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বা কহিওয়াজাকি-কারিওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও কোনো সমস্যা দেখা যায়নি জানিয়েছেন মালিক টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোং (টেপকো)।
ভূমিকম্পের পরপরই মিয়াগি প্রিফেকচারের সেনদাই বিমানবন্দর অন্ধকারে ডুবে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, গতকালের ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল উপকূলীয় শহর নামি থেকে ৭৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫৭ কিলোমিটার গভীরে।
ফুকুশিমা প্রিফেকচারের উপকূলে ভূত্বকের ৫৭ কিলোমিটার গভীরে হলেও কোনো সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়নি।
ভূমিকম্পে রাজধানী এবং আশপাশের প্রিফেকচারগুলো রিখটার স্কেলে ৫.১ মাত্রায় কেঁপে ওঠে এবং এক মিনিটেরও বেশি সময় স্থায়ী হয়। কিছু জায়গায় রাস্তায় ফাটল ধরেছে, বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়েছে, দূরপাল্লার বুলেট ট্রেন বন্ধ রাখা হয়েছে। মোট ১২৪ জনের আহত হওয়ার খবর জানিয়েছে জাপান মিডিয়া। তবে, তাদের মধ্যে কারো অবস্থা গুরুতর নয় এবং অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছেন।
এ ছাড়া, কিছু এলাকার পানি সরবরাহ পাইপলাইন ফেটে যায়। এতে পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় গাড়িতে করে পানি সরবরাহ করা হয়। অনেক এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস এবং বাড়িঘরের জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। বিঘ্নিত হয়ে পড়ে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। তবে, মোবাইল কোম্পানিগুলো একযোগে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস প্রচার করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে একই মাত্রার শক্তিশালী আফটার শকস হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ভূমিকম্পের খবর জানার পরপরই নিজ কার্যালয়ে যান প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি সংকট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন সুগা।
আজ রোববার ভোরে সুগা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সবকিছুর আহে আগে মানুষের জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করব।’
একটি সেল গঠন করে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পের আঘাতে এবং এর কারণে সৃষ্টি সুনামিতে ২০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত অথবা নিখোঁজ হন। এ ছাড়া, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লাখো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন। ওই ভূমিকম্পের কারণে জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক কেন্দ্রের তিনটি চুল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। তখন ওই এলাকা থেকে এক লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
তার দশ বছরের মাত্র ৪ সপ্তাহ পূর্বে গতকাল ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টা ৮ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৭.৩ (প্রথমে ৭.১ ম্যাগনিচ্যুড বলা হলেও পরে ৭.৩ এ উন্নীত করা হয় যা জাপানি স্কেলে ৬+) মাত্রার ভূমিকম্পে জাপানের অধিকাংশ এলাকা কেঁপে উঠে। বিশ্বের সবচেয়ে কম্পনপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত জাপানে প্রায়ই ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। বিশ্বের ৬ বা ততোধিক মাত্রার ভূমিকম্পের প্রায় ২০ শতাংশ জাপানে হয়ে থাকে।
Comments