নোয়াখালীতে পৌর নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা, আহত অন্তত ৫
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী পৌরসভার নির্বাচনে পরাজিত দুই কাউন্সিলর প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকদের হামলায় অন্তত পাঁচ জনের আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল রোববার চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত সোনাইমুড়ী পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর রাতেই ৪ নম্বর ওয়ার্ডে নবনির্বাচিত কাউন্সিলর জহির ভূঁইয়ার বানুয়াই মহল্লার ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সোনাইমুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মমিনুল ইসলাম বাকের চেয়ারম্যানের নাওতলা মহল্লার বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনায় অন্তত পাঁচ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর ও খড়ের গাদায় অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে।
সোনাইমুড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
জানা যায়, গতকাল নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী পৌরসভার নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ড বানুয়াই মহল্লায় উটপাখি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হন জহির উদ্দিন ভূঁইয়া।
তিনি জানান, রাতে ফলাফল ঘোষণার পর তার কর্মী-সমর্থকরা আনন্দ মিছিল বের করে। এসময় তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পরাজিত প্রার্থী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল উদ্দিন ও তার কর্মী-সমর্থকরা মিছিলে ও তার বানুয়াই মহল্লার বাড়িতে অতর্কিত হামলা করে।
হামলাকারীরা ককটেল বোমা বিস্ফোরণ ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
হামলাকারীরা একটি দোকান ও অপর একটি বাড়ির জানালা ভাঙচুর করে এবং খড়ের গাদায় অগ্নি সংযোগ করে জানিয়ে নির্বাচিত কাউন্সিলর জহির উদ্দিন বলেন, ‘বিনা উস্কানিতে শ্যামল উদ্দিন তার লোকজন নিয়ে এই হামলা করেছে। আমি সোনাইমুড়ী থানায় বিষয়টি জানিয়েছে। অগ্নি সংযোগের খবর পেয়ে সোনাইমুড়ী ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।’
এ অভিযোগ অস্বীকার করে শ্যামল উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনী কাজে সারাদিন ব্যস্ত সময় পার করেছি। সারাদিনের দৌড়াদৌড়িতে আমি ভীষণ ক্লান্ত ছিলাম। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর আমি বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। জহির উদ্দিন পুনরায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর তার ছেলে বাবু লোকজন নিয়ে এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে। এখন সেই দোষ আমার ওপর চাপানোর অপচেষ্টা করছে। কারা হামলা করেছে সেটা এলাকাবাসী দেখেছে। আমি অবশ্যই আইনের আশ্রয় নিব।’
পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন রনি তার ভাই মনিরুল ইসলাম মনু ও পলাশের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল নিয়ে সোনাইমুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মমিনুল ইসলাম বাকেরের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মমিনুল ইসলাম বাকের বলেন, ‘রনি, মনু ও পলাশের নেতৃত্বে রোববার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে আমার বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। পৌরসভা নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কেন্দ্র আহ্বায়ক ছিলো আমার বড় ছেলে আরিফুর রহমান সুজন। সুজনকে হত্যার উদ্দেশ্যেই তারা আমার বাড়িতে ঢুকে হামলা চালায়। কিন্তু স্থানীয়দের বাধার মুখে তারা তা করতে পারেনি।’
বিষয়টি তিনি থানায় অবহিত করেছেন বলে যোগ করেন।
হামলার শিকার আরিফুর রহমান সুজন বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনে পানির বোতল প্রতীক নিয়ে মোতাহের হোসেন রনি পরাজিত হন। তার ধারণা আমার কারণেই তিনি পরাজিত হয়েছেন। তাই আমাকে হত্যা করতে রাতের আঁধারে আমার বাড়িতে হামলা চালায় রনি, মনু ও পলাশের নেতৃত্বে একটি দল।’
এছাড়াও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মাইন উদ্দিনের বাড়িতেও হামলা হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সোনাইমুড়ী থানার ওসি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘হামলা ও সংঘর্ষের খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে এসব হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত কেউই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Comments