ঢাকাই সিনেমায় মান্না একজনই ছিলেন

ঢাকাই সিনেমার যুবরাজ বলা হত মান্নাকে। অসম্ভব সফল ও জনপ্রিয় নায়ক ছিলেন তিনি। ফোক, সামাজিক, রোমান্টিক, অ্যাকশন- সব ঘরানার সিনেমায় নিজেকে তিনি অন্যতম প্রধান নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন।
Manna.jpg-1.jpg
নায়ক মান্না। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাই সিনেমার যুবরাজ বলা হত মান্নাকে। অসম্ভব সফল ও জনপ্রিয় নায়ক ছিলেন তিনি। ফোক, সামাজিক, রোমান্টিক, অ্যাকশন- সব ঘরানার সিনেমায় নিজেকে তিনি অন্যতম প্রধান নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন।

ক্ষণজন্মা নায়ক মান্না কয়েকশ সিনেমায় অভিনয় করে গেছেন। তার অভিনীত ‘কাশেম মালার প্রেম’ ব্যাপক সাড়া জাগানো সিনেমা।

মান্না অভিনীত ‘আম্মাজান’ সিনেমার আবেদন এখনও রয়ে গেছে। প্রচুর হিট সিনেমা উপহার দিয়েছিলেন তিনি।

আজ বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) নায়ক মান্নার প্রয়াণ দিবস।

মান্নাকে স্মরণ করে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক কাজী হায়াত, মান্নার সিনেমার তিন নায়িকা চম্পা, মৌসুমী ও পূর্ণিমা।

Mannas Friend.jpg
কাজী হায়াত, চম্পা, মৌসুমী ও পূর্ণিমা: ছবি: সংগৃহীত

কাজী হায়াত: মান্নার অভাব কোনোদিন পূরণ হবে না

মান্নার সঙ্গে আমার সবটুকুই স্মৃতি। কোনটা রেখে কোনটা বলব? মান্না ছিল জাত শিল্পী। মফস্বল থেকে রাজধানীতে এসে মান্না নায়ক হিসেবে সবচেয়ে শীর্ষ স্থানটি দখলে নিতে পেরেছিল।

মান্না মারা যাবার পর অনেকেই তার স্থানে আসতে চেয়েছে। পেরেছে কি? পারেনি, এটা এতো সহজ নয়। কেউ কেউ মান্নার মতো অভিনয়ও করতে চেয়েছে। তাও পারেনি।

আমার কাছে অনেকে এসেছে। এসে বলেছে, আমার ভয়েস ও চেহারা মান্নার মত, আমাকে নিন। আমি তাদের বলেছি একজন মান্না একদিনে বা কয়েক বছরে হওয়া সম্ভব না। ঢাকাই সিনেমায় মান্না একজনই ছিল। মান্না আর হবে না।

আমার পরিচালিত মান্নাকে নিয়ে করা সবকটি সিনেমাই দর্শকরা দারুণভাবে নিয়েছিলেন। মান্নার অভাব কোনোদিন পূরণ হবে না।

রাজনৈতিক নেতৃত্ব শূন্য হলে তা পূরণ করা যায়। কিন্তু শিল্পী চলে গেলে সেই জায়গা আর পূরণ করা যায় না। মান্নার জায়গাও আর পূরণ করা সম্ভব হয়নি।

মান্না আমাকে বাবার মত শ্রদ্ধা করতো, সম্মান করতো, ভালোবাসতো। আমিও মান্নাকে ছেলের মতো ভালোবাসতাম। ছেলে হারালে যেমন লাগে মান্নাকে হারিয়ে আমারও তাই লাগছে।

মান্নার সঙ্গে আমার পরিচালিত শেষ সিনেমা ‘মিনিস্টার’। ওটাও সফল একটি সিনেমা। মান্নাকে নিয়ে কোনো সিনেমা অসফল হয়নি।

চম্পা: সহশিল্পী হিসেবে মান্না ছিলেন অসাধারণ

মান্নার সঙ্গে আমি অনেক সিনেমা করেছি। মান্না ও আমি প্রায় কাছাকাছি সময়ে সিনেমায় এসেছি। সহশিল্পী হিসেবে মান্না ছিলেন অসাধারণ। কেননা সহশিল্পী ভালো না হলে অভিনয়ে শতভাগ মনোযোগী হওয়া যায় না। সেই হিসেবে মান্না ছিলেন প্রিয় সহশিল্পী।

মান্না একজন সত্যিকারের শিল্পী ছিলেন। তার সব ভাবনায় ছিল সিনেমা, সিনেমা এবং সিনেমা। আগাগোড়া সিনেমার মানুষ ছিলেন মান্না।

আমার একটাই আফসোস, একটাই দু:খ- বড় অসময়ে মান্না চলে গেলেন। বড় তাড়াতাড়ি মান্না চলে গেলেন। আমাদের সিনেমার জন্য আরও অনেককিছু দেওয়ার ছিল তার।

নায়ক হিসেবে মান্নার প্রথম হিট সিনেমা ছিল ‘কাশেম মালার প্রেম’। ওই সিনেমায় মান্না আমার হিরো ছিল। এরপর জুটি হিসেবে আমরা আরও অনেক ব্যবসাসফল সিনেমা করেছিলাম। শেষের দিকে যদিও তার সঙ্গে কম কাজ করেছি।

স্টার বলব না, মান্না ছিল প্রকৃত একজন শিল্পী। মান্না এখনও ভক্তদের মাঝে, আমাদের সবার মাঝে ভালোবাসার মানুষ হয়ে আছেন। সহশিল্পীকে সহযোগিতা করার মন ছিল তার।

একটি সিনেমার গানে কী ধরনের পোশাক পরলে নায়ক-নায়িকাকে বেশি সুন্দর দেখাবে, তা নিয়ে আমি ও মান্না সবসময় আলোচনা করতাম। আলোচনা করে পোশাক সংগ্রহ করতাম। তারপর সিনেমা মুক্তির পর অনেকেই সেসব পোশাকের প্রশংসা করতেন।

আমি সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি মান্না ও ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে। মান্নার অকাল প্রয়াণ মেনে নিতে পারি না। খারাপ লাগে। মান্নার স্ত্রী শেলীর সঙ্গে এখনও সুন্দর সম্পর্ক আছে।

মান্নাকে মনে পড়ে। দূর থেকে তাকে খুব মনে পড়ে।

মৌসুমী: মান্নার সঙ্গে ছিল আত্মার সম্পর্ক

মান্নার সঙ্গে শুধু সহশিল্পীর সম্পর্ক ছিল না। মান্নার সঙ্গে ছিল আত্মার একটা সম্পর্ক। সুন্দর একটা সম্পর্ক। পারিবারিক সম্পর্ক বলতে যা বোঝায় তাই ছিল। তাকে আমি সবসময় আমার পরিবারের সদস্য মনে করতাম। তিনিও আমাকে তার পরিবারের সদস্য মনে করতেন।

মান্না মারা যাবার পর তার স্ত্রী শেলী ভাবীর সঙ্গেও আমার পরিবারের সুসম্পর্ক রয়ে গেছে। এটা সারাজীবন থাকবে।

নায়ক হিসেবে মান্না ছিলেন অসম্ভব সফল। আবার সিনেমা প্রযোজনা করেও সফলতা পেয়েছিলেন। শিল্পী হিসেবে সংগঠন করেও সফলতা পেয়েছিলেন।

ঢাকাই সিনেমার জন্য অনেক কিছু দিয়ে গেছেন মান্না। সিনেমার উন্নয়ন নিয়ে সব সময় ভাবতেন। সেই প্রিয় মানুষটি বড় অকালে চলে গেলেন।

মান্না ভক্তদের একটি কথাই বলব, একটি অনুরোধই করব, তার আত্মার জন্য আপনারা দোয়া করবেন। তাকে যেন সৃষ্টিকর্তা জান্নাত নসিব করেন।

আমার বিশ্বাস মান্না বেঁচে থাকলে আমাদের সিনেমা শিল্পের আরও উন্নয়ন হতো। আমরা আরও ভালো ভালো সিনেমা পেতাম।

একটি কথাই জোর দিয়ে বলব, অনেক বেশি মিস করি মান্নাকে।

পূর্ণিমা: মন খারাপ হলে মান্না ও আমার অভিনীত গানগুলো দেখি

মান্নার সঙ্গে আমি অনেকগুলো সিনেমায় অভিনয় করেছি। সেইসব সিনেমা দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। সুপারডুপার ব্যবসাও করেছিল অনেক সিনেমা। কাজেই মান্নাকে মনে পড়াটাই স্বাভাবিক। আমি বলব অনেক বেশি মনে পড়ে মান্না ভাইকে।

মিস করার কথা যদি বলি তাহলে বলব মান্নাকে খুব করে মিস করি। দুজন নায়ককে খুব করে মিস করি। প্রথমজন মান্না, দ্বিতীয়জন সালমান শাহ।

মন খারাপ হলে মান্না ও আমার অভিনীত সিনেমাগুলোর গান ইউটিউবে দেখি। অনেক গান আছে। অনেক সিনেমা করেছি দুজনে। এমন কোনো গান নেই যা শোনা হয়নি মান্না মারা যাবার পর। বিশেষ করে মন খারাপ থাকলে বেশি বেশি শুনি।

মান্নার সঙ্গে আমার শেষ সিনেমা ‘পিতা মাতার আমানত’। এই সিনেমাটিও ব্যাপক ব্যবসাসফল একটি সিনেমা। মান্নার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সিনেমা এটি।

আসলে স্মৃতির শেষ নেই। অনেকবছর একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে প্রচুর স্মৃতি আছে। ঢাকাই সিনেমায় শক্ত একটা অবস্থান গড়েছিলেন তিনি। সেসব সুন্দর স্মৃতিগুলো মনে পড়ে।

প্রয়াণ দিবসে তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

14h ago