নগরবাড়ি ঘাট আধুনিকায়ন ও নদীবন্দর: আড়াই বছরে কাজ হয়েছে ২৫ শতাংশ

উত্তরাঞ্চলে নৌপথে পণ্য পরিবহন সুবিধা বাড়াতে পাবনার নগরবাড়িতে দেশের সবচেয়ে আধুনিক নদীবন্দর নির্মাণে ২০১৮ সালে ৫১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর পাড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করে সরকার। তিন বছর মেয়াদী এই মেগা প্রকল্পের আড়াই বছর পার হলেও কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ।
প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। ছবি: স্টার

উত্তরাঞ্চলে নৌপথে পণ্য পরিবহন সুবিধা বাড়াতে পাবনার নগরবাড়িতে দেশের সবচেয়ে আধুনিক নদীবন্দর নির্মাণে ২০১৮ সালে ৫১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর পাড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করে সরকার। তিন বছর মেয়াদী এই মেগা প্রকল্পের আড়াই বছর পার হলেও কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ।

প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে প্রকল্প সূত্রে।

ফরে ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের সময়কাল এক বছর বৃদ্ধি করেছে সরকার। সেই সঙ্গে বেড়েছে ব্যয়ও। আগের বাজেটের সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ৩৯ কোটি পাঁচ লাখ টাকা।

সর্বশেষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হলে আগামী বছর জুনের মধ্যে দেশের সর্বাধুনিক এই নদীবন্দরটি কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)।

এক নজরে প্রকল্পের বিবরণ। ছবি: স্টার

বিআইডাব্লিউটিএ নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন পাঠান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘৫১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে “নগরবাড়িতে আধুনিক সুবিধাদিসহ নদীবন্দর নির্মাণ” শীর্ষক তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জুলাই মাসে। এর কাজ ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো।’

তিনি জানান, প্রকল্পের প্রধান কাজের মধ্যে রয়েছে আরসিসি জেটি নির্মাণ, নদী তীর সংরক্ষণ, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, আরসিসি ওপেন স্টোরেজ নির্মাণ, পার্কিং লট ও আন্তর্জাতিক পোর্ট রোড নির্মাণ, ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন, বন্দর ভবন, প্রশাসনিক ভবন, পরিদর্শন বাংলো, ডরমিটরি নির্মাণ, পাইলট হাউজ নির্মাণ, শ্রমিক বিশ্রামাগার ও টয়লেট নির্মাণ, গুদাম নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ড্রেনেজ, পানি সরবরাহ ও স্যুয়ারেজ নির্মাণ, মোবাইল হারবার ক্রেন, ফর্ক লিফট স্থাপন, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ও ১১-কেভি বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ।

প্রকল্পের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে আরসিসি জেটি নির্মাণ, নদী তীর সংরক্ষণ ও অফিস স্থাপনার কাজ এগিয়ে চলেছে। তবে, বাকি কাজগুলো এখনও শুরু করা যায়নি বলে জানান নিজাম উদ্দিন পাঠান।

এই প্রকল্পের তিনটি টেন্ডারের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং আরও সাতটি কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে বলেও জানান তিনি।

প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হতে দেরি হওয়ায় প্রকল্প এলাকার অধিকাংশ কাজ সময়মত শুরু করা যায়নি বলে যোগ করেছেন এই বিআইডাব্লিউটিএ কর্মকর্তা।

নগরবাড়িতে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত নদীবন্দর নির্মাণের জন্য নদী তীরবর্তী ৩৬ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ কাজের জন্য প্রথমে প্রকল্প ব্যয়ের ৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও ঐ দামে জমি অধিগ্রহণ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি। এর জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা।’

জমি অধিগ্রহণের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় ও সময় লাগার কারণে প্রকল্পের সময়সীমা এক বছর বৃদ্ধি এবং প্রকল্প ব্যয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের সংশোধনী বাজেট অনুমোদন করা হয় গত বছরের ২৪ নভেম্বর। বর্তমানে এর বাজেট দাঁড়িয়েছে ৫৫২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

জমি অধিগ্রহণে কোনো অতিরিক্ত ব্যয় হয়নি দাবি করে পাবনা জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও পাবনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুন্নি ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাজার মূল্য অনুসারে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।’

অধিগ্রহণের নিয়ম মেনেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে এবং বিআইডাব্লিউটিএ নিয়মানুযায়ী জমির মূল্য পরিশোধ করার পর গত মাসে প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত জমি তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি করা হয়নি বলেও যোগ করেন মুন্নি ইসলাম।

নগরবাড়ি ঘাট বনিক সমিতির সভাপতি মো. রফিকুল্লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নগরবাড়ি ঘাট দিয়ে উত্তরবঙ্গে নৌপথে পণ্য পরিবহন সহজ হওয়ায় অধিকাংশ আমদানিকারকরা বর্তমানে কোনো পোর্ট সুবিধা না থাকলেও নগরবাড়ি ঘাট দিয়ে পণ্য পরিবহন করে। নগরবাড়িতে আধুনিক নদীবন্দর নির্মাণ কাজ শেষ হলে এই পথে আমদানি-রপ্তানি আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।’

তবে প্রকল্পের কাজে ধীরগতি দেখে ঠিক কবে নাগাদ এই নদী বন্দরের সুবিধা পেতে পারেন সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নগরবাড়ি ঘাট দিয়ে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা।

নগরবাড়ি ঘাট আধুনিক নদীবন্দর নির্মাণ প্রকল্প দ্বায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন পাঠান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হওয়ার পর প্রকল্প এলাকার বাকি কাজগুলো শেষ করতে বেশি সময় লাগবে না। নবনির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago