কলাপাড়ায় মুজিববর্ষে গৃহহীনদের ঘর বিতরণে টাকা নেওয়ার অভিযোগ

মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের ঘর বিতরণে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। কলাপাড়ার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, বিনামূল্যের এ ঘর পেতে তাদের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যকে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে।
ছবি: সোহরাব হোসেন

মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের ঘর বিতরণে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। কলাপাড়ার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন,  বিনামূল্যের এ ঘর পেতে তাদের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যকে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে।

প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গত ২ ফেব্রুয়ারি ৭৬ জনের পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে তারিকাটা গ্রামের বাসিন্দা বাদল খান জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ এর আওতায় চলতি অর্থবছরে কলাপাড়ায় ৪০০টি ভূমিহীন পরিবারকে ৩৯৪ বর্গফুটের একটি করে সেমি পাকা ঘর বরাদ্দ দিতে ধুলাসার ইউনিয়নে ৭৬ জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। ঘর দেওয়ার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তাক হাওলাদার তার কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। তারপরও ঘর নির্মাণের সময় অতিরিক্ত সিমেন্ট, ইট কেনানো হয়েছে।

অভিযোগ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ইউপি সদস্য মোস্তাক হাওলাদার এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়,  ওই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মান্নান শরীফ একটি ঘর পেয়েছেন। তবে তার ঘরটির কাজ অসমাপ্ত।

তিনি অভিযোগ করেন, ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন ইউপি সদস্য মোস্তফা ব্যাপারিকে। ১৫ হাজার টাকা না দেয়ার কারণে তার ঘরটির কাজ এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সব টাকা দিতে পারিনি তাই ঘরের কাজ বন্ধ আছে। টাকা দিয়েছি এ কথা কাউকে জানালে আমাকে আর কোন সুবিধা দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ইউপি মেম্বার।’

মান্নানের প্রতিবেশী মনোয়ার জানান, তিনিও পুরো টাকা পরিশোধ করতে পারেননি বলে তার ঘরটির কাজও বন্ধ রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। বাকি ১৫ হাজার টাকা না দিলে ঘরের বাকি কাজ করা হবে না বলে ইউপি মেম্বর বলে গেছেন।

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মোস্তফা ব্যাপারি জানান, ঘরের বিনিময়ে কারো কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা নেয়া হয়নি। তবে মালামাল পরিবহনের জন্য কিছু টাকা নেয়া হয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জানান, এ ইউনিয়নে ৭৬টি ঘর পাওয়া গেছে এবং নিয়মানুযায়ী তা গৃহহীনদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এলাকাটি দুর্গম বিধায় তাদের কাছ থেকে পরিবহন বাবদ কিছু টাকা নেয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব ঘরের কাজ সম্পন্ন করে তা মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. শহিদুল হক জানান, সরকারি এসব ঘর বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে এবং কাউকে এ জন্য টাকা-পয়সা না দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমার কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে কেউ যদি টাকা নিয়ে থাকেন তবে তার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে অভিযোগের প্রমাণ পেলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পটুয়াখালী জেলা ত্রান ও পূর্নবাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালী জেলায় মোট ২,১৩১টি ঘর গৃহহীনদের মধ্যে বরাদ্দ করা হয়েছে এবং এসব ঘর নির্মাণে মোট ৩৬ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এছাড়াও মালামাল পরিবহন ও আনুসঙ্গিক খাতে ৮ দশমিক.২৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago