প্রবাস

প্রতারণার শিকার ক্রোয়েশিয়াগামী বাংলাদেশিরা

ক্রোয়েশিয়া | রয়টার্স ফাইল ফটো

পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের মতো ধীরে ধীরে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতেও বাংলাদেশিদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশের অনেকে পছন্দের তালিকায় ওঠে এসেছে বলকান উপদ্বীপের সবচেয়ে পশ্চিমের দেশ ক্রোয়েশিয়া। সম্প্রতি, জীবিকার খোঁজে বাংলাদেশ দেশে অনেকে ক্রোয়েশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ক্রোয়েশিয়া সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে ২০১৮ সালে। রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত সে বারের বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ হিসেবে রানার্স আপ দল হিসেবে ফাইনালে নেমেছিল ক্রোয়েশিয়া। লুকা মডরিচ, ইভান রাকিটিচ, মারিও মানজুকিচ ও ইভান পেরেচিচের মতো ফুটবলাররা টুর্নামেন্ট জুড়ে আলো ছড়িয়েছিলেন।

এছাড়াও, জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ গেইম অব থ্রোনসের শুটিং হয়েছিল ক্রোয়েশিয়ায়।

পর্যটনশিল্পে অপার সম্ভাবনাময়ী দেশ ক্রোয়েশিয়া। ২০১৩ সালে দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য হয়। বর্তমানে এটি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে গঠিত কমন বর্ডার ফ্রেম নেটওয়ার্কখ্যাত সেনজেনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।

ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় ক্রোয়েশিয়ার ভিসা প্রক্রিয়া কিছুটা আলাদা। বিশেষ করে, স্টুডেন্ট কিংবা ওয়ার্ক পারমিটের আওতায় দীর্ঘমেয়াদী ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে ইইউয়ের বেশিরভাগ দেশেই ডি ক্যাটাগরিতে ভিসা দেয়। এই ক্যাটাগরির ভিসার মেয়াদ ছয় মাস থেকে এক বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি হতে পারে। কোনো কোনো দেশ সরাসরি স্টিকার ভিসার পরিবর্তে টেম্পোরারি রেসিডেন্ট পারমিট দিয়ে থাকে।

তবে ক্রোয়েশিয়ায় যেকোনো ক্ষেত্রে ভিসার আবেদনের সময় ডি এর পরিবর্তে সি ক্যাটাগরিতে শর্ট টার্ম ভিসা দেওয়া হয়। এ ভিসার মেয়াদ এক মাস থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের হয়।

ক্রোয়েশিয়ায় পৌঁছনোর পর ক্যাটাগরি ভিত্তিতে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী অ্যাপ্লিক্যান্ট রেসিডেন্ট পারমিটের জন্য আবেদন করেন।

ক্রোয়েশিয়ায় বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। যেকোনো প্রয়োজনে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়।

গত ৪ জানুয়ারি নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের বরাত দিয়ে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল— ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে প্রাইভেট রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে কন্সট্রাকশন খাতে কর্মসংস্থানের জন্য ক্রোয়েশিয়া যাওয়া ১৩ কর্মীর সবাই কর্মস্থল থেকে পালিয়েছেন।

এছাড়াও, প্রয়োজনীয় কর্মদক্ষতার অভাবে অনেক কর্মীকে তাদের প্রতিষ্ঠান ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে তারা কোথায় রয়েছেন কিংবা আদৌতে তারা ক্রোয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন কিনা সে বিষয়ে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসকে নিশ্চিতভাবে কোনো কিছু জানাতে পারেনি দেশটির সরকার।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে ক্রোয়েশিয়া সরকারের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে ব্যুরো আরও জানিয়েছে, এখন থেকে কর্মী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে যারা ক্রোয়েশিয়ায় যাবেন তাদের সবাইকে দেশ ছাড়ার আগে বাধ্যতামূলকভাবে ম্যান-পাওয়ার হিসেবে নিবন্ধন করতে হবে।

পাশাপাশি তাদের সবাইকে নিকটস্থ অভিভাবকের কাছ থেকে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়ারি স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে এবং দক্ষিণ কোরিয়াগামী ইপিএস কর্মীদের মতো তাদেরকে বিএমইটির অনুকূলে এক লাখ টাকা নিরাপত্তা জামানত দিতে হবে।

এছাড়াও, বহির্গমন ছাড়পত্র কিংবা স্মার্টকার্ডপ্রাপ্ত ক্রোয়েশিয়াগামী কর্মীদের তালিকা ও ফ্লাইটের সময়সূচি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো।

ক্রোয়েশিয়া পৌঁছানোর পর সব কর্মীকে সাত দিনের মধ্যে নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের বাধ্যবাধকতা জারি করেছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

তবে সঠিক নিয়ম জানা না থাকায় ক্রোয়েশিয়াগামী অনেক কর্মী বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও সে দেশে যেতে পারছেন না। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন থেকে অনেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। কিছু এজেন্সি এবং একই সঙ্গে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এ সুযোগে এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্টের কথা বলে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ করেছেন দেশটিতে পাড়ি জমানো অনেক বাংলাদেশি।

ক্রোয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি উল্লাহ আহম্মেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ও ক্রোয়েশিয়া সরকারের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ফলে আমাদের দেশ থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেকে কন্সট্রাকশনসহ বেশকিছু খাতে এ দেশে আসার সুযোগ পেয়েছেন। তবে আশানুরূপভাবে কর্মদক্ষতা না থাকায় অনেক কোম্পানি তাদেরকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হচ্ছে।’

‘এছাড়াও, অনেক বাংলাদেশি সেনজেনভুক্ত কোনো দেশে অনুপ্রবেশের রুট হিসেবে ক্রোয়েশিয়াকে বেছে নিচ্ছেন। তাই ক্রোয়েশিয়াতে আসতে না আসতে তাদের সবার লক্ষ্য হয়ে ওঠে কিভাবে সীমানা পাড়ি দিয়ে স্লোভেনিয়া কিংবা হাঙ্গেরির ভেতর দিয়ে ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন কিংবা পর্তুগালে চলে যাওয়া যায়।’

‘অনেকে এ যাত্রায় সফল হন,’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেছেন, ‘অনেকে আবার পুলিশের হাতে ধরাও পড়েন।’

আহম্মেদ মনে করেন, ‘আগামী দিনগুলোতে যদি সত্যি আমাদের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা থাকে তাহলে ক্রোয়েশিয়াতে আমাদের জন্য সব সম্ভাবনার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে।’

তিনি ক্রোয়েশিয়াতে আসার আগে সবাইকে নির্ধারিত কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো ঘোষিত নীতিমালা অনুসরণের আহবান জানিয়েছেন এবং অবৈধ পথে সীমানা পাড়ি দিয়ে সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে যাওয়ার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসার পরামর্শ দেন।

রাকিব হাসান রাফি: শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া

Comments

The Daily Star  | English

Mob violence now alarmingly routine

Rights groups say the state's failure to act swiftly and decisively has to some extent emboldened mobs and contributed to a climate where vigilante justice is becoming commonplace.

9h ago