কোন ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কেমন
বিশ্বব্যাপী চলমান কোভিড-১৯ মহামারিতে এখন পর্যন্ত ৮৬টি দেশে ১৯৩ মিলিয়নেরও বেশি ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনই অধিকাংশ দেশে অনুমোদন পেয়েছে।
এর বাইরে আছে যুক্তরাষ্ট্রের নোভাভ্যাক্স, বেথ ইসরায়েল ডিকননেস মেডিকেল সেন্টারের সহযোগিতায় বেলজিয়াম ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের তৈরি জনসন অ্যান্ড জনসন, চীনের তৈরি সিনোভ্যাক, ক্যানসিনো বায়োলজিকস, সিনোফার্ম এবং রাশিয়ার তৈরি গ্যামালিয়া (স্পুটনিক ফাইভ) ভ্যাকসিন।
ভ্যাকসিনগুলো নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে ব্লুমবার্গ।
ফাইজার ও বায়োএনটেক
ফাইজার ও বায়োএনটেকের তৈরি কোভিড ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল শুরু হয় গত বছর এপ্রিলের শেষ দিকে। প্রায় ৪৪ হাজারের মানুষের ওপর ট্রায়াল চালিয়েছে ফাইজার। ট্রায়ালের ফলাফলে ভ্যাকসিনটি ৯০ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করা হলেও, পরে এটি ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।
ডিসেম্বরে ভ্যাকসিনটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডায় অনুমোদন পায়। করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিনটির দুই ডোজ নিতে হবে। ফাইজারের ভ্যাকসিনকে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়।
ফাইজারই প্রথম প্রতিষ্ঠান যেটি তিন ধাপের ক্লিনিকাল ট্রায়ালেই ইতিবাচক ফল পেয়েছে। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে।
মডার্না
মডার্নার তৈরি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল গত বছর জুলাই থেকে শুরু হয়। ৩০ হাজার মানুষের ওপর ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল চালানো হয়। ট্রায়ালের ফলে ভ্যাকসিনটি ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করা হয়েছে।
জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডায় মডার্নার ভ্যাকসিন অনুমোদন পায়। ভ্যাকসিনটির দুই ডোজ নিতে হবে। ভ্যাকসিনটি ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়।
মডার্না ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে ২০ মিলিয়ন ও বিশ্বব্যাপী ১০০ মিলিয়ন ডোজ সরবরাহের পরিকল্পনা করেছে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড
অ্যাস্ট্রাজেনেকার সহযোগিতায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তৈরি করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল গত বছর আগস্ট ২৮ থেকে শুরু হয়। প্রায় ৬৫ হাজার মানুষের ওপর ট্রায়াল চালানো হয়েছে। ট্রায়ালের ফলে ভ্যাকসিনটি ৭০ শতাংশ কার্যকর বলে জানা গেছে। জানুয়ারিতে ভারত, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ভ্যাকসিনটি অনুমোদন পায়। এটিও দুই ডোজ নিতে হবে। ভ্যাকসিনটি ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা ট্রায়ালে পূর্ণাঙ্গ ফল পাওয়ার আগেই ৩ বিলিয়ন ডোজ সরবরাহের চুক্তি করেছিল। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সংগ্রহ করা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করা হয়েছে।
নোভাভ্যাক্স
যুক্তরাষ্ট্রের নোভাভ্যাক্স ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হয়েছিল গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে। ৪৫ হাজার মানুষের ওপর ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল চালানো হয়। এটিও দুই ডোজ নিতে হবে। ট্রায়ালের ফলাফলে ভ্যাকসিনটি ৮৯ শতাংশ কার্যকর বলে জানা গেছে। ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এটিকে সংরক্ষণ করতে হয়। ভ্যাকসিনটি এখনো অনুমোদন পায়নি।
জনসন অ্যান্ড জনসন
বেথ ইসরায়েল ডিকননেস মেডিকেল সেন্টারের সহযোগিতায় বেলজিয়াম ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন জনসন অ্যান্ড জনসনের ট্রায়াল শুরু হয়েছিল গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে। প্রায় ৭০ হাজার মানুষের ওপর ট্রায়াল চালানো হয়। ট্রায়ালের ফলাফলে ভ্যাকসিনটি ৬৬ শতাংশ কার্যকর বলে জানা গেছে। এই ভ্যাকসিনটির এক ডোজেই করোনা প্রতিরোধ করা যাবে। এটিকে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়।
ভ্যাকসিনটি এখনো অনুমোদন পায়নি। এক ডোজেই কার্যকর হওয়ায় এই ভ্যাকসিন বিতরণ করা অন্যদের তুলনায় সহজ হবে।
সিনোভ্যাক বায়োটেক
গত বছর জুলাই থেকে চীনের বিজ্ঞানীদের তৈরি সিনোভ্যাক বায়োটেকের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হয়। প্রায় ২৬ হাজার মানুষের ওপর ট্রায়াল চালানো হয়েছে। ট্রায়ালের ফলাফলে ভ্যাকসিনটি ৫০ শতাংশ কার্যকর বলে জানা গেছে। ভ্যাকসিনটি দুই ডোজ নিতে হয় এবং ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়।
চীনে গত ২৮ আগস্ট থেকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ফেব্রুয়ারিতে এটি সাধারণের ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিয়েছে চীন।
গ্যামালিয়া
গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের তৈরি ভ্যাকসিন গ্যামালিয়ার ট্রায়াল শুরু হয়। প্রায় ৪০ হাজার মানুষের ওপর ট্রায়াল চালানো হয়েছে। ট্রায়ালের ফলাফলে ভ্যাকসিনটি ৯২ শতাংশ কার্যকর বলে জানা গেছে।
রাশিয়ায় ট্রায়ালের ফল পর্যালোচনার আগেই ভ্যাকসিনটিকে প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটির দুই ডোজ নিতে হবে এবং মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ হবে। ভ্যাকসিনটি ‘স্পুটনিক ফাইভ’ নামেও পরিচিত।
ক্যানসিনো বায়োলজিকস
গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে চীনা বিজ্ঞানীদের তৈরি ক্যানসিনো বায়োলজিকস ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল শুরু হয়। প্রায় ৪০ হাজার মানুষের ওপর ট্রায়াল চালানো হয়েছে। ট্রায়ালের ফলে ভ্যাকসিনটি ৬৬ শতাংশ কার্যকর বলে জানা গেছে।
ভ্যাকসিনটির এক ডোজই নিতে হবে। এটিকে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে।
চীনা সামরিক কর্মকর্তাদের জন্য ট্রায়ালের আগেই ভ্যাকসিনটির প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়।
সিনোফার্ম
চীনের আরেক ভ্যাকসিন সিনোফার্মের ট্রায়াল শুরু হয়েছিল গত বছর জুলাই মাসে। ২৮ আগস্ট থেকে ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের জন্য প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়। ডিসেম্বরে চীনে সাধারণের ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।
৫০ হাজার মানুষের ওপর ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল চালানো হয়েছিল। ট্রায়ালে এটি ৭৯ শতাংশ কার্যকর বলে জানা গেছে। ভ্যাকসিনটি দুই ডোজ নিতে হবে। ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে।
Comments