সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা।
Noakhali.jpg
নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: স্টার

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা।

এ সময়ের মধ্যে মুজাক্কিরের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে প্রশাসন ব্যর্থ হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন তারা।

আজ রোববার দুপুর ১২টায় নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় জেলার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ছাড়াও আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী ও উন্নয়নকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় তারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান।

এ ছাড়াও, মুজাক্কিরের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে কোম্পানীগঞ্জ ও চাটখিল প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।

গত শুক্রবার বিকালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চাপরাশিরহাট পূর্ব বাজারে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ চলাকালে সংবাদ সংগ্রহের সময় গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুমূর্ষু অবস্থায় শুক্রবার রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহত মুজাক্কির ‘দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার’ ও অনলাইন পোর্টাল ‘বার্তা বাজার’র স্থানীয় প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের নোয়াব আলী মাস্টারের ছেলে। নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে সম্প্রতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষ করে সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়েছিলেন মুজাক্কির। তার মৃত্যুতে কোম্পানীগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারে বইছে শোকের মাতম।

এদিকে, শুক্রবার রাতে মুজাক্কিরের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে কোম্পানীগঞ্জে উত্তেজনা দেখা দেয়। আবদুল কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকরা রাতেই পাল্টা-পাল্টি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।

আবদুল কাদের মির্জা নিহত সাংবাদিক মুজাক্কিরকে তার অনুসারী দাবি করে বলেন, ‘শুক্রবার বিকালে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল তার নেতা-কর্মীদের ওপর চাপরাশিরহাট বাজারে গুলি হামলা করেছে। এসময় বাদলের লোকজন গুলি করে ও পিটিয়ে তার ৫০ জন নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। নিহত মুজাক্কিরকে বাদলের লোকজনই গুলি করেছে। সেই গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে।’

এ মৃত্যুর জন্য মিজানুর রহমান বাদলকে দায়ী করেছেন কাদের মির্জা।

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ দুই মাস ধরে তিনি ফেনী ও নোয়াখালীর অপরাজনীতি এবং সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ও সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম, টেন্ডারবাজি ও চাকরি বাণিজ্য নিয়ে কথা বলে আসছেন। তার অহরহ সত্যবচনে কোথাও কোনো হট্টগোল হয়নি। একরামুল করিম চৌধুরীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাদল ও তার লোকজন শুক্রবার মাঠে নামে এবং সেদিনই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। মিজানুর রহমান বাদলের সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলিতে মুজাক্কির মারা গেছেন। বাদল যে অবৈধ অস্ত্রের রাজনীতি করেন তার প্রমাণ গুলিতে মুজাক্কিরের মৃত্যু।’

বাদল ও তার সমর্থকদের গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন কাদের মির্জা।

এ অভিযোগ অস্বীকার করে মিজানুর রহমান বাদল বলেন, ‘শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় তার সমর্থকদের চাপরাশিরহাট দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হতে বলেন। কিন্তু তার আগে কাদের মির্জার অনুসারী চর ফকিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন লিটনের নেতৃত্বে তার সমর্থকরা ওই কার্যালয়ে এসে উপস্থিত হন। নির্ধারিত সময়ে বাদলের কর্মী-সমর্থকরা কার্যালয়ে আসলে চেয়ারম্যানের সমর্থকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। ওই সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন মুজাক্কির।’

তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মুজাক্কির তার অনুসারী ছিলেন বলে তাকে মামলায় ফাঁসিয়েছিলেন কাদের মির্জা। ওই মামলা থেকে মুজাক্কিরকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আদালতের সব খরচ আমি বহন করেছি।’

তিনি জানান, ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দিবাগত রাতে কাদের মির্জা বাহিনীর শতাধিক সদস্য তার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও গুলি করেছে। এতেই প্রমাণিত হয় কাদের মির্জার লালিত-পালিত সন্ত্রাসীরাই মুজাক্কিরকে গুলি করে হত্যা করেছে।

মুজাক্কির নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। আজ সন্ধ্যায় তার মরদেহ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি কোম্পানীগঞ্জে নিয়ে আসার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন:

কোম্পানীগঞ্জে গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক মুজাক্কির মারা গেছেন

কোম্পানীগঞ্জে কাদের মির্জা-বাদল গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ, আহত অর্ধশত

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago