আপনার মন্ত্রণালয়ের সব খবর জানি, সব বলে দেব: ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে কাদের মির্জা
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে হুমকি দিয়ে তার ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, আপনার মন্ত্রণালয়ের সব খবর জানি। কে কী করে। কে কে কালেকশন করে কোথায় নিয়ে যায়, কার বাসায় নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘আমি সব কথা বলব। মৃত্যুর আগে সব বলে যাব। আমি জানি আমাকে হত্যা করা হবে। আর আপনি (ওবায়দুল কাদের) ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী ও নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরাম চৌধুরীকে সেই আদেশ দিয়েছেন।’
কাদের মির্জার একজন ঘনিষ্ঠ সহকারী নিজের নাম প্রকাশ না করে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আজ মঙ্গলবার বসুরহাট পৌরসভার রূপালী চত্বরে সভা করার কথা ছিল। কিন্তু, পুলিশ সেটা করতে দেয়নি। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বসে নিজের ফেসবুক আইডিতে লাইভে আসেন কাদের মির্জা।’
৮ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ভিডিওতে কাদের মির্জা বলেন, ‘আপনি (ওবায়দুল কাদের) আমার মনের খবর রাখেন না। ৪৭ বছর রাজনীতি করেছি। ওবায়দুল কাদেরের জন্য কী না করেছি?’
তিনি বলেন, ‘আজ তার (ওবায়দুল কাদের) কাছে স্ত্রী, নিজাম হাজারী ও তথাকথিত রাজনীতিবিদ খুনি, চাঁদাবাজ, চাকরি ও টেন্ডার বাণিজ্যকারী একরামুল করিম চৌধুরী আমার চেয়ে বেশী আপন।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের প্রসঙ্গ টেনে কাদের মির্জা বলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জের চরের ভূমিদস্যু মাদক সম্রাটকে আপনি (ওবায়দুল কাদের) শেল্টার দিয়েছেন। এর খেসারত আপনাকে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর আদালতে আপনার (ওবায়দুল কাদের) বিচার হবে। এতো অপমান? আমি একজন মেয়র। আপনি বড় নেতা। আপনার পর্যায়ে আপনি আমার পর্যায়ে আমি। আজকে আমাকে লাঞ্ছিত করছেন। পুলিশ দিয়ে পেটাচ্ছেন।’
কাদের মির্জার ভাষায়, ‘বাদশা, শাহিন্ন্যা, আরিফ্যা, সবুজ্জ্যাকে দিয়ে আমাকে অপমান করছেন। আপনার (ওবায়দুল কাদের) মন্ত্রণালয়ের সব খবর জানি। নিজাম হাজারী আমার সঙ্গে আপোষ করতে চায়। একজন খুনির সঙ্গে কীসের আপোষ। নিজাম হাজারী দাগনভূঁইয়ার জনপ্রিয় সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি একরামকে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে গুলি করে গাড়িতে ঢুকিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। যারা খুনের সঙ্গে জড়িত তারা কেউ মামলায় পড়েনি। মামলার পড়েছে জজ মিয়ারা।’
তিনি বলেন, ‘নোয়াখালীতে আজকে সাংবাদিক মুজাক্কিরসহ ২৫ জনকে হত্যা করেছে একরাম চৌধুরী। এতো খুন করেও তারা আজ রাজত্ব করছে। দেশ কি এভাবে চলবে? বঙ্গবন্ধু কি এজন্য দেশের জন্য স্বাধীনতা এনেছিলেন? এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। এদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় কে দিচ্ছে? কারা এসব চালাচ্ছে? ওবায়দুল কাদের এসব চালাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কাদের মির্জা বলেন, ‘নেত্রী এসব বন্ধ করার জন্য আপনার প্রতি অনুরোধ করব।’
সেতুমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে সব খবর আছে। তিনি তার স্ত্রীকে প্রতিষ্ঠার জন্য এসব করছেন। আমি এমপি পদে মনোনয়ন কিংবা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ বা জেলা আওয়ামী লীগের কোনো পদের জন্য লালায়িত নই। ১/১১ এর পর একরাম চৌধুরী সেনাপ্রধান মইন ইউ আহম্মদের ছোট ভাই জাবেদের সঙ্গে আঁতাত করে নিজের চামড়া বাঁচিয়েছিলেন। এরপর জাবেদকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে বসিয়েছিলেন এবং একরাম চৌধুরী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কাদের মির্জা বলেন, ‘এরা ১০ শতাংশ হাইব্রিড নেতা আপনার সব অর্জন ম্লান ও ধ্বংস করেছে। এরা দলের সাইনবোর্ড বিক্রি করে ধান্ধাবাজি করে। আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। ৪৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি। কোনোদিন ওবায়দুল কাদেরের কাছে ১০ টাকার জন্যও যাইনি। তার স্ত্রী বাসার দোতলা থেকে আমাকে ধমক দিয়ে বের করে দিয়েছেন। আর তার ডাইনিং টেবিলে ভাত খান নিজাম হাজারী ও একরাম চৌধুরী।’
ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি অসুস্থ হওয়ার পর সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে যখন ভর্তি ছিলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী আপনার চিকিৎসার জন্য টাকা দিয়েছিলেন। আর সেই টাকা নিয়ে একরাম চৌধুরী, নিজাম হাজারীসহ একদল ধান্ধা করেছিল। এসব নিয়ে আমি অচিরেই কথা বলব।’
সেতুমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পিতা মারা যাওয়ার পর খন্দকার মোস্তাক আহমেদ মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে কান্নাকাটি করেছিলেন। দাফনের সময় কবরেও নেমেছিলেন। সেই মোস্তাক ১৯৭৫ সারের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করেছিলেন।’
তাই এদের ব্যাপারে সাবধান থাকার পরামর্শ দেন কাদের মির্জা।
ফেসবুক লাইভের বিষয়ে আবদুল কাদের মির্জার বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বর্তমানে আবদুল কাদের মির্জা মানসিকভাবে একটু ক্লান্ত। তাই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন না।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরাম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার দুটি মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
Comments