প্যাটেল-অশ্বিনে ধসে যাওয়ার পর ইংল্যান্ডকে রোহিতের হুমকি
আচমকা বাউন্স মিলল প্রথম সেশন থেকেই, স্পিনারদের বল ঘুরল চর্কির মতো। এমনকি প্রথম দুই ঘণ্টার পর উইকেটে উড়তে শুরু করল ধুলোও। স্পিনারদের জন্য লোভনীয় এমন কন্ডিশনে টস জিতে ব্যাট করতে যাওয়া ইংল্যান্ডের ব্যাটিং হলো যাচ্ছেতাই। আক্সার প্যাটেল, রবীচন্দ্রন অশ্বিনরা হয়ে গেলে মূর্তিমান আতঙ্ক। তাদের ঘূর্ণিতে অল্প রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর বোলিংয়ে গিয়েও ম্যাচে ফেরার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি জো রুটের দল।
বুধবার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডকে ১১২ রানে আটকে দেওয়ার পর ব্যাট করতে নেমে ৩ উইকেটে ৯৯ রান করেছে ভারত। ৫৭ রান নিয়ে ক্রিজে আছেন রোহিত শর্মা। ২৭ রান করে অধিনায়ক বিরাট কোহলি শেষ ওভারে আউট হওয়ার পর ১ রান করে অপরাজিত আজিঙ্কা রাহানে।
এর আগে ভারতকে চালকের আসনে বসার অবস্থা করেন দেন তাদের দুই স্পিনার। মাত্র ৩৮ রানে ৬ উইকেট তুলেন বাঁহাতি স্পিনার প্যাটেল। অশ্বিন নেন ২৬ রানে ৩ উইকেট।
আগের দুই টেস্টে দুদলেরই একটি করে জয়। আহমেদাবাদে গোলাপি বলের দিবারাত্রির টেস্ট দুদলের জন্যই বাঁচা মরার। যারা জিতবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পড়বে তাদের এক পা। ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বহু প্রত্যাশিত টসটা জিতেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু দিনের বাকি সব কিছুই গেছে তাদের বিপক্ষে।
হাতে ৭ উইকেট নিয়ে মাত্র ১৩ রানে পিছিয়ে আছে স্বাগতিকরা। দুই সেশনের মধ্যে ইংল্যান্ডকে অলআউট করে দুই ওপেনার রোহিত ও শুভমান গিল এনেছিলেন সতর্ক শুরু। স্ট্রুয়ার্ট ব্রড আর জ্যাক লিচের বলে দুবার আউটের কাছাকাছি গিয়েছিলেন ধুঁকতে থাকা গিল। রান বের করতে হাঁসফাঁস করা এই তরুণ জোফরা আর্চারের বাউন্সারে চাপ সরাতে গিয়ে তুলে দেন সহজ ক্যাচ। পরে তিনে নামা চেতশ্বর পূজারা টিকেছেন মাত্র ৪ বল। লিচের ভেতরে ঢোকা বল এলবিডব্লিউ বানিয়েছে তাকে।
এরপর রোহিতের সঙ্গে ৬৪ রানের এক জুটি গড়ে উঠে কোহলির। নিজের চরিত্রের বিরুদ্ধে ফিফটি পেরিয়ে যান রোহিত। সেই জুটিতেই দিন পার হওয়ার আভাস থাকলেও একদম শেষ ওভারে লিচের দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড হন কোহলি। রোহিতকে নিয়েই এখন বড় ভাবনা থাকবে সফরকারীদের। স্পিনিং উইকেটে বরাবরই সফল এই ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় দিনে প্রথম সেশন টিকে গেলে ভারতের বড় রান নিশ্চিত।
গোলাপি বলে সাধারণ পেসারদের থাকে বাড়তি সুবিধা। তা মাথায় রেখে চার পেসারের সঙ্গে একাদশে মাত্র একজন স্পিনার নিয়ে নামে ইংল্যান্ড। ভারতের একাদশে দেখা যায় ভিন্ন অবস্থা। দুই পেসারের সঙ্গী তিন স্পিনার।
প্রথম উইকেটটা অবশ্য নিয়েছিলেন একজন পেসারই। শততম টেস্ট খেলতে নামা ইশান্ত শর্মা ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই। ওপেনার ডম সিবলি ইশান্তের লাফানো বল ব্যাটের ফেস ওপেন করে ঠেকাতে গিয় স্পিলে দেন ক্যাচ।
ধুলো উড়তে থাকায় ডাক পড়ে স্পিনারদের। প্যাটেল এসে প্রথম বলেই তুলে নেন জনি বেয়ারস্টোর উইকেট। ভেতরে ঢোকা বল একদম বুঝতে না পেরে ব্যাট-প্যাডে গ্যাপ রেখে দেন বেয়ারস্টো। রিভিউ নিয়েও বাঁচা সম্ভব হয়নি তার।
২৭ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে একমাত্র আলো দেখাচ্ছিলেন জ্যাক ক্রাউলি। পায়ের ব্যাবহার তার ছিল দারুণ। বাউন্ডারি বের করতে পারছিলেন। অধিনায়ক জো রুটের সঙ্গে প্রাথমিক বিপর্যয়ও কাটান তিনি।
১৫ ওভারের পর বল হাতে নিয়ে অশ্বিন ফেরান রুটকে। টার্ন করে ভেতরে ঢোকা বল ব্যাকফুটে গিয়ে সামলাতে চেয়েছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। হয়নি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। ফিফটি করা ক্রাউলিও শিকার প্যাটেলের। ৮৪ বলে ৫৩ করে তিনিইও থামেন এলবিডব্লিউতে।
চা-বিরতির পর নেমে ওলি পোপ অশ্বিনের বলে বোল্ড হয়ে যান। ক্ষণিকের মধ্যে টপাটপ পড়তে থাকে উইকেট। ৯৮ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। একমাত্র বেন ফোকস চেষ্টা চালাচ্ছিলেন একপ্রান্তে। স্টুয়ার্ট ব্রডকে আউট করে প্যাটেল তার পঞ্চম শিকার তুলার পর বেশি সময় নেননি। ফোকসকেও তিনি ছেঁটে মুড়ে দেন ইংল্যান্ডের ইনিংস।
প্রথম ইনিংসের এই অল্প রান নিয়ে এই টেস্টে ফেরা এখন ভীষণ কঠিন ইংল্যান্ডের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
(প্রথম দিন শেষে)
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৪৮.৪ ওভারে ১১২ (ক্রাউলি ৫৩, সিবলি ০, বেয়ারস্টো ০, রুট ১৭, স্টোকস ৬, পোপ ১, ফোকস ১২, আর্চার ১১, লিচ ৩, ব্রড ৩, অ্যান্ডারসন ০* ; ইশান্ত ১/২৬, বুমরাহ ০/১৯, প্যাটেল ৬/৩৮, অশ্বিন ৩/২৬)
ভারত প্রথম ইনিংস: ৩৩ ওভারে ৯৯/৩ (রোহিত ৫৭*, গিল ১১, পূজারা ০, কোহলি ২৭, রাহানে ১*; অ্যান্ডারসন ০/১১ , ব্রড ০/১৬, আর্চার ১/২৪, লিচ ২/২৭, স্টোকস ০/১৯ )
Comments