পাপুলের এমপি পদ শূন্য: লক্ষ্মীপুর-২ আসনে নির্বাচনী হাওয়া

Laxmipur
ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী: নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, হারুনুর রশিদ, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মোহাম্মদ আলী খোকন, বোরহান আহমেদ মিঠু, এম আর মাসুদ, শামছুল ইসলাম পাটওয়ারী ও ডা. এহসানুল কবির জগলুল। ছবি: সংগৃহীত

কুয়েতে সাজাপ্রাপ্ত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুলের সদস্য-পদ শূন্য ঘোষণার পরপরই ওই আসনে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া।

নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির অর্ধডজন নেতার অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আগাম প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে যাদের নাম আসছে তাদের মধ্যে আছেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক এহসানুল কবির জগলুল, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ আলী খোকন, বর্তমান কমিটির উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সামছুল ইসলাম পাটওয়ারী, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হারুনের রশীদ।

বিএনপির নেতাকর্মীরা সাবেক এমপি আবুল খায়ের ভূঁইয়ার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। গত নির্বাচনেও তিনি এ আসনে ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সাবেক দুই বারের এমপি খায়ের ভূঁইয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি।

এছাড়াও, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক এম আর মাসুদ ও নোয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন মিঠুর নামও শোনা যাচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, তিনি আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। ২০১৮ সালে তিনি এ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। পরে জোটের সিদ্ধান্তে জাতীয় পার্টির নেতা মো. নোমানকে জোটের প্রার্থী করা হয়।

নয়ন অভিযোগ করে বলেন, ‘নোমান তার মনোনয়ন পাপুলের কাছে অনেক টাকায় বিক্রি করে দেন।’

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, তিনিও এই আসনে প্রার্থী হতে চান। বলেন, ‘দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত আছি। তাই মনোনয়ন চাইবো।

তবে রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক বাকি বিল্লাহর দাবি, পাপুলকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে। যারা পাপুলকে বাদ দিয়ে এই আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারাই পাপুলের সংসদ সদস্য পদ হারানোর সংবাদে খুশি হয়েছেন বলেও মনে করেন তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. গোলাম ফারুক পিংকু ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনে সদর আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলাম। পরে সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান কামাল ও দলের অনুরোধে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করি। এবার লক্ষ্মীপুর-২ আসনে মনোনয়ন চাইবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘নেত্রী যদি আমাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি নির্বাচন করব। যদিও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসনটি মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থী তা বিক্রি করে দিয়েছিলেন। আশা করি, নেত্রী এবার এ আসনে আমাদের দলীয় মনোনয়ন দেবেন।’

রায়পুরের বাসিন্দা নোয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন মিঠু ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘রায়পুরে জনগণ বরাবরই উন্নয়নবঞ্চিত। এখন উপ-নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আমি দল থেকে মনোনয়ন চাইবো।’

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, পাপুলের এমপি পদ শূন্য ও উপ-নির্বাচনকে ঘিরে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী এলাকায় আসা-যাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রায়পুর উপজেলার তিন ইউপি চেয়ারম্যান ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ ডজনখানেক নেতা এমপি পদে উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে অনুসারীদের দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন।

লক্ষ্মীপুর আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আগামীতে আমরা অপরাজনীতিমুক্ত, কালো টাকার মালিক ও জনবিচ্ছিন্ন কাউকে এমপি পদে দেখতে চাই না। পরীক্ষিত ও তৃণমূল  নেতা আওয়ামী লীগের এমপি মনোনয়ন পাবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’

কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-পরিবেশ বিষয়ক সামছুল ইসলাম পাটওয়ারী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পাপুলের কারণে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে লজ্জিত হয়েছি। এ আসনে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও যোগ্যদের একজনকে এমপি পদে প্রত্যাশা করছি।’

লক্ষ্মীপুর-২ আসনে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল এমপি নির্বাচিত হন। স্থানীয় অনেকের অভিযোগ, রাজনীতির বাইরে থাকা পাপুল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর ভর করে তখন স্বতন্ত্র এমপি হয়েছিলেন।

কুয়েতে পাপুলের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের শুরুতে মানবপাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠে। পরে ওই মামলায় তিনি কুয়েতে গ্রেপ্তার হন। গত ২৮ জানুয়ারি কুয়েতের আদালত পাপুলকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার জরিমানা করা হয়। তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম কুমিল্লার সংরক্ষিত আসনের স্বতন্ত্র এমপি।

গত সোমবার জাতীয় সংসদ পাপুলের এমপি পদ শূন্য ঘোষণা করে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi migrants workers rights in Malaysia

Migrants in Malaysia: Worker faces deportation after speaking up

Nearly 200 workers then began a strike on Friday, he said, requesting not to be named for fear of backlash.

7h ago