মুশতাকের ‘গায়েবানা জানাজা’য় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

Gayebana Janaja.jpg
শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে লেখক মুশতাক আহমেদের গায়েবানা জানাজায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। ছবি: স্টার

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কেবল মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নেয়নি, এটি এখন মানুষের প্রাণও কেড়ে নিচ্ছে। এই আইনে কারাবন্দী লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে এ ধরনের মন্তব্য করেছেন বক্তারা।

তারা অনতিবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

আজ শুক্রবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের উদ্যোগে ‘গায়েবানা জানাজা’ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে উপস্থিত হয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘লেখক মুশতাককে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের খোঁজ কি পাওয়া যায়নি? পাওয়া গেছে। তার হত্যাকারী হলো সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অধ্যাদেশ। সিকিউরিটি আইনের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা প্রত্যেকে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত।’

তিনি বলেন, ‘আজকে বিচারপতিদের দায়িত্ব পরিষ্কারভাবে বলা যে, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। আমি যদি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানিকর কিছু বলি, তাহলে প্রধানমন্ত্রীকেই আমার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে হবে, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে নয়।’

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড যেমন মর্মান্তিক, আমি মনে করি- মুশতাকের হত্যাকাণ্ড তেমনি মর্মান্তিক। শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করলেই হবে না, এই হত্যাকাণ্ডের জন্য যারা দায়ী তাদেরও বিচার করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে কোনো সরকার টিকে থাকতে পারে না।’

বিচারপতিদের উদ্দেশে ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আপনাদেরও দায়িত্ব আছে। আমরা আশা করছি- মুশতাককে হত্যার জন্য দায়ী কারা আগামী সপ্তাহে আপনারা সেটি উন্মোচন করবেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘লেখক মুশতাক তরুণদের স্বপ্ন দেখাতেন। তার স্বপ্নকে শুধু হত্যা করা হয়নি, মানুষটাকেই হত্যা করে ফেলা হয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে দায়ী করছি। অবশ্যই এটা একটা জঘন্যতম আইন। গুম-খুন যারা করে, জুডিশিয়াল কিলিং যারা করে, রাতের আঁধারে ভোট যারা করে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে এই আইনের মাধ্যমে একজনকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে দিনের পর দিন জেলে রাখা যায়। এই আইনকে অবশ্যই কুখ্যাত আইন বলতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন শুধু আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নেয়নি, মানুষের প্রাণও কেড়ে নিয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্র একটি নিরীহ প্রাণ কেড়ে নিলো। সরকারের অধীনস্থ যে বিচারালয়, সেখানেও লেখক মুশতাকের জামিন হয়নি। জামিন পাওয়া একজন আসামির ন্যায়সঙ্গত অধিকার। কিন্তু রাষ্ট্র খুনি এবং হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটকারীদের রাতারাতি ব্যাংককে পাঠিয়ে দেয়। যারা ন্যায় এবং দেশের মানুষের পক্ষে কথা বলে, রাষ্ট্র তাদেরকে ধারণ করে না। এ অবস্থায় যাদের কথা বলার প্রয়োজন ছিল, তারা এখন কথা বলছেন না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তাদের চুপ থাকতে বাধ্য করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিচারালয় সবই এখন দালালে পরিণত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক এবং লেখকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।’

সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারকৃত লেখক মুশতাককে ছয় বার জামিন না দিয়ে তাকে এ সরকার হত্যা করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে এ সরকার নাগরিকদের কথা বলার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। মুশতাকের হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয়, এ সরকার জনগণের সরকার না। এ রাষ্ট্র খুনি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রের স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণকে নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।’

ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক বলেন, ‘আজ আমরা যদি সংগঠিত হতে না পারি, একত্রিত হতে না পারি, তাহলে আমাদের অবস্থাও লেখক মুশতাকের মতো হবে। যা অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। বিএনপি-জামায়াতের দোহাই দিয়ে সরকার সবাইকে নির্যাতন করছে। এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাংবাদিক এবং লেখকরা। আমি ছাত্র ভাইদের ব্যানারে দেখেছি লেখা আছে, মুশতাকের হত্যাকারী রাষ্ট্র। তবে আমি সে কথা বলব না, কারণ রাষ্ট্র আমাদের সবার। মুশতাকের হত্যাকারী হলো সরকার।’

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ, অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি (বর্তমানে জামিনে মুক্ত) ও রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়ুন:

আজিমপুরে চিরনিদ্রায় শায়িত লেখক মুশতাক

লালমাটিয়ায় মুশতাকের জানাজা, আজিমপুরে দাফন

মুশতাকের মৃত্যুর পর কিশোরের জীবন নিয়ে শঙ্কা

লেখক মুশতাক আহমেদের ময়না তদন্ত সম্পন্ন

মুশতাকের মৃত্যুতে রাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

লেখক মুশতাকের মৃত্যুর পর মধ্যরাতে ঢাবিতে বিক্ষোভ

মুশতাক গতকালও জামিন পাননি, আজ কারাগারে মারা গেলেন

Comments

The Daily Star  | English

Is the govt backing the wrongdoers?

BNP acting Chairman Tarique Rahman yesterday questioned whether the government is being lenient on the killers of a scrap trader in front of Mitford hospital due to what he said its silent support for such incidents of mob violence.

3h ago