যা ঘটেছিল মুশতাককে ধরে নিয়ে যাওয়া সেই রাতে

‘সাধারণ পোশাক এবং ইউনিফর্ম পরিহিত কয়েকজন র‌্যাব সদস্য যখন মুশতাক আহমেদকে তার লালমাটিয়ার বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তার স্ত্রী ও বৃদ্ধ মা-বাবা জিজ্ঞেস করেছিলেন, তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? তখন র‌্যাব সদস্যরা বলেছিলেন, আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি, কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেব। ওই যে কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেবে বলে বাসা থেকে নিয়ে গেল, এর নয় মাস পর তিনি ফিরলেন লাশ হয়ে।’
Mushtaq Ahmed.jpg
লেখক মুশতাক আহমেদ। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

‘সাধারণ পোশাক এবং ইউনিফর্ম পরিহিত কয়েকজন র‌্যাব সদস্য যখন মুশতাক আহমেদকে তার লালমাটিয়ার বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তার স্ত্রী ও বৃদ্ধ মা-বাবা জিজ্ঞেস করেছিলেন, তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? তখন র‌্যাব সদস্যরা বলেছিলেন, আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি, কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেব। ওই যে কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেবে বলে বাসা থেকে নিয়ে গেল, এর নয় মাস পর তিনি ফিরলেন লাশ হয়ে।’

দ্য ডেইলি স্টারের কাছে কথাগুলো বলেছেন লেখক মুশতাক আহমেদের বাসার নিরাপত্তারক্ষী মো. চান মিয়া, যিনি সেসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

গত বছরের মে মাসে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার কর্মী দিদারুল ইসলাম ও লেখক মুশতাক আহমেদকে বাসা থেকে আটক করে র‌্যাব। পরে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে কারাবন্দী মুশতাক মারা যান। দিদারুল জামিনে ও কিশোর কারাগারে আছেন।

তাদের বিরুদ্ধে মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র অনুযায়ী, র‌্যাব, পুলিশ ও সিআইডির সদস্য ছাড়াও ছয় জন সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে দৈনিক ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এই ছয় জনের সাক্ষ্যের ভাষা হুবহু এক। এমনকি তাদের পাঁচ জনই বলেছেন, এ ধরনের কোনো সাক্ষ্য তারা পুলিশকে দেননি।

ওই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, মামলার তিন সাক্ষী মুশতাক আহমেদের বাসার নিরাপত্তারক্ষী মো. চান মিয়া (৩৫), মো. জব্বার খান (৬২) ও মুশতাকের আত্মীয় চিকিৎসক রিয়াসাত আলম (৪৭) বলেছেন, তারা কোনো জবানবন্দি দেননি। যে রাতে মুশতাক আহমেদকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই রাতে তার মুঠোফোন ও ডিজিটাল ডিভাইস নেওয়া হয়েছিল। র‌্যাবের কথামতো তারা শুধু জব্দ তালিকায় সই করেছেন।

সেই ছয় সাক্ষীর একজন মো. চান মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘গত বছর মে মাসের এক রাতে আনুমানিক ১টার পর বাসার সামনে চার-পাঁচটি গাড়ি এসে দাঁড়ায়, গাড়ি থেকে কয়েকজন সাধারণ পোশাকের লোক বের হয়ে গেটে নক করেন। আমি জিজ্ঞেস করি- আপনারা কারা, কোথায় যাবেন? তারা বলেন- বাড়ির ভেতরে যাব দরজা খোল। আমি বললাম- আপনাদের পরিচয় দেন, কার কাছে যাবেন, কেন যাবেন বলেন, তা না হলে আমি গেট খুলব না। এভাবে প্রায় আধাঘণ্টা তাদের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। এর মধ্যে আমার আরেক সহকর্মী নিরাপত্তারক্ষী ও মুশতাক আহমেদের মামা আসেন।’

‘মুশতাক আহমেদের মামা নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা। গেটের বাইরে অপেক্ষমাণ লোকদের তিনি জিজ্ঞেস করেন- আপনারা কারা, কার কাছে যাবেন? তারা বলেন- গেট খুলুন, বলছি। তারপর গেট খুলে দিলে তারা বাসায় ঢুকে নিচতলায় গাড়ি পার্কিংয়ে অপেক্ষা করেন। এর মধ্যে মুশতাক আহমেদ একবার নিচে এসে জিজ্ঞেস করেন- আপনারা কারা, কার কাছে এসেছেন? তখনো তারা উত্তর দেননি যে, তারা কার কাছে এসেছেন, তারা কারা?’, যোগ করেন তিনি।

চান মিয়া বলেন, ‘এরপর মুশতাক আহমেদ তার ফ্ল্যাটে চলে যান। কিছুক্ষণ পর বাইরে অপেক্ষমাণ পোশাক পরিহিত কয়েকজন র‌্যাব সদস্য বাসায় প্রবেশ করেন। তারা বলেন- আমরা মুশতাক আহমেদের কাছে এসেছি, তার ফ্ল্যাটে যাব। পরে মুশতাক আহমেদের মামা তাদেরকে সে ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। প্রায় আধাঘণ্টা পর মুশতাক আহমেদকে নিয়ে তারা নিচে নেমে আসেন। র‌্যাব সদস্যরা সঙ্গে করে একটা ল্যাপটপ নিয়ে আসেন এবং আমাদের বলেন- কাগজ একটা সই দিন। তখন আমরা দুজন নিরাপত্তারক্ষী এবং মুশতাক আহমেদের পরিচিত একজন ডাক্তারকে কাগজে সই দিতে বললে, আমরা জানতে চাই- কেন? তারা বলেন- এই যে আমরা ল্যাপটপ নিয়ে গেলাম, আর আপনারা দেখলেন, এর জন্য সই নিলাম।’

চান মিয়া জানান, ওই ঘটনার পর থেকে মুশতাক আহমেদের স্ত্রী এবং আত্মীয়স্বজন অনেক দৌড়ঝাঁপ করেছেন, কিন্তু কোনোভাবেই মুশতাক আহমেদের মুক্তি মেলেনি। এরপর ধীরে ধীরে মুশতাক আহমেদের স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তিনি বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে মুশতাক আহমেদের স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে তাকে অসুস্থ অবস্থায় আত্মীয়স্বজনরা বাসায় নিয়ে এসেছেন।’

আরও পড়ুন:

মুশতাকের মৃত্যু: গাজীপুর জেলা প্রশাসনের ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি

মুশতাকের মৃত্যুর ‘দ্রুত, স্বচ্ছ, স্বাধীন ও পূর্ণাঙ্গ’ তদন্তের আহ্বান ১৩ দেশের রাষ্ট্রদূতের

মুশতাকের ‘গায়েবানা জানাজা’য় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago