কাল্পনিক তথ্যের মামলায় গ্রেপ্তার ৭ আন্দোলনকারী, অভিযোগ ছাত্র ইউনিয়নের

কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদ মিছিল থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের নামে হওয়া মামলার এজাহারে কাল্পনিক তথ্য দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে ছাত্র ইউনিয়ন।

ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সরকার এখন ছাত্রসমাজকে ভয় পাচ্ছে। তারা ছাত্র আন্দোলনকে দমনের জন্য সব রকমের চেষ্টা করছে। কাল্পনিক কিছু ঘটনা মামলার এজাহারে লেখা হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’

গতকাল শুক্রবার ঢাকায় বিক্ষোভকালে গ্রেপ্তার সাত জনের জামিন ও রিমান্ড আবেদন বাতিল করে আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়ার পর এমন মন্তব্য করেন দীপক শীল।

মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়া আজ শনিবার এই আদেশ দেন।

পুলিশের রিমান্ড আবেদন নাকোচ করে দিয়ে কারাফটকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে যেকোনো একদিন জেলগেটে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে পুলিশ।

আদালতের এই রায়ের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী মেঘমল্লার বসু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার পরেও যদি হত্যাচেষ্টার মতো ধারায় মামলা দেওয়া হয়, অপরাধ না করেও যদি অপরাধের দায় নিতে হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের আন্দোলনের যে ঐতিহাসিক অ্যাপ্রোচ সেটা বদলানোর কথাও আমাদের মাথায় আসতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘এ দেশে ধর্ষণ, খুন, লুটপাট যারা করে তাদের জামিন দ্রুত হয়ে যায়, পাঁচ-ছয় ঘণ্টার মধ্যেই হয়ে যায়। আর যারা একজন লেখক হত্যার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে রাস্তায় নামে তাদের জামিন দেওয়া হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শক্তিমত্তা কম হতে পারে, কিন্তু আমাদের সহযোদ্ধাদের মুক্তির ব্যাপারে আমরা কোনো আপোষ করবো না। আইনি লড়াই তো চলবেই, রাজনৈতিকভাবেও এ ধরনের হামলা-মামলার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই চালিয়ে যাবো, আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’

গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীরা জামিন না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটাই আসলে আমাদের আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেয়। তবুও আমরা আইনি ব্যবস্থায় এখনও আস্থা রাখতে চাই, দ্রুত যেন তাদের মুক্তি দেওয়া হয় সেই দাবি জানাচ্ছি।’

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের এএসআই মো. বাবুল মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, পুলিশকে হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার সাত জনকে আজ আদালতে হাজির করে প্রত্যেককে সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে শাহবাগ থানা পুলিশ। অপরদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাদের জামিন আবেদন করেন।

আদালত জামিন ও রিমান্ড আবেদন বাতিল করে আসামিদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভের ঘটনায় তামজিদ হায়দার, নজির আমিন চৌধুরী, এ এস এম তানজিমুর রহমান, আকিব আহম্মেদ, আরাফাত সাদ, নাজিফা জান্নাত ও জয়তী চক্রবর্তীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিয়ে পুলিশের কাজে বাধা দেন ও হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করেন।

গত বছর মে মাসে র‍্যাব ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে লেখক মুশতাক, কার্টুনিস্ট কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তা সংগঠনের দিদার, মিনহাজসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। তাদের মধ্যে মিনহাজ ও দিদার গত সেপ্টেম্বরে আদালত থেকে জামিন পেলেও কিশোর ও মুশতাক পাননি। নয় মাস কারাবন্দি থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে কারাগারেই মারা যান মুশতাক।

এ ঘটনায় লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী এবং ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল সন্ধ্যার দিকে জাতীয় জাদুঘর, প্রেসক্লাব এলাকা এবং শাহবাগে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মশাল মিছিল বের করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।

Comments

The Daily Star  | English

Sheikh clan’s lust for duty-free cars

With an almost decimated opposition and farcical elections, a party nomination from the ruling Awami League was as good as a seat in the parliament.

7h ago