‘কত লাশ দরকার’
মৃত্যুর একদিন আগে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার নেই নেই অং হটেট নাইং তার ফেসবুকে মিয়ানমারে গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর দেশটির সামরিক বাহিনীর ক্রমবর্ধমান নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছিলেন।
জাতিসংঘকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘কত লাশ দরকার?’ মূলত সামরিক জান্তাদের উদ্দেশে তিনি এ কথা লিখেছিলেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল রোববার মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াংগুনে নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে হটেট নাইং প্রথম নিহত হয়েছিলেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে নির্বাচিত অং সান সু চি’র সরকারকে সরিয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের পর গতকাল ছিল সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন।
জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস অফিস জানিয়েছে, গতকাল অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। এ নিয়ে দেশটিতে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে অন্তত ২১ জন নিহত হলেন।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।
গতকালকের রক্তক্ষয়ী সংঘাত সম্পর্কে মিয়ানমার সরকার রয়টার্সের কাছে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার বলেছে, সেনারা প্রথমে ধৈর্য দেখিয়েছে। কিন্তু, ‘বিশৃঙ্খল জনতা’তে নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি। ‘বিক্ষুব্ধ জনতা’র বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি’ বলেও জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমটি।
নেই নেই অং হটেট নাইং-কে ইয়াংগুনের হ্লেডান জংশনে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়। পাশের এক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে করা ভিডিওতে দেখা যায় গুলির শব্দ হওয়ার পর হটেট নাইং কামারুত স্কুলের গেটে নুইয়ে পড়েন। তার গায়ে ছিল চেক শার্ট, মাথায় সাদা টুপি। হাতে ছিল ফোন।
হটেট নাইং এর করুণ মৃত্যু বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে যুগে যুগে দেশে দেশে সামরিক জান্তাদের পতনের দৃশ্য। তারা প্রথমে ‘ধৈর্যের পরিচয়’ দেয়, তারপর গুলি চালায়। এবং সবশেষে জনতার লাশের ওপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে তারা হোচঁট খায়। তাদের পতন হয় জনতার দুর্বার আন্দোলনের মুখে।
গতকাল মিয়ানমারে সেনা শাসকদের সহিংসতায় গণতন্ত্রকামী মানুষের মৃত্যুতে নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
Comments