সাঁওতাল বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যাম মুর্মু

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম জলাহার। এই গ্রামেই বসবাস করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যাম মুর্মু। ২০ বছর বয়সে দেশকে হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করার প্রত্যয়ে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যাম মুর্মু। ছবি: স্টার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম জলাহার। এই গ্রামেই বসবাস করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যাম মুর্মু। ২০ বছর বয়সে দেশকে হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করার প্রত্যয়ে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে।

তবে, দেশকে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে মুক্ত করলেও চরম দারিদ্রতার মধ্যে বাস করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

ছিমছাম গড়নের শ্যাম মুর্মুর বয়স এখন বয়স ৬৯ বছর। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৫২ সালের ২৭ ডিসেম্বর। বসবাস করেন মাটির তৈরি টিনের একটি বাড়িতে।  বাড়িটিও তার মতোই জীর্ণ-শীর্ণ।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়িতে বসে দ্য ডেইলি স্টারকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

তিনি জানান, যুদ্ধ শুরু হলে গ্রামের অন্যান্যদের মতো পরিবারের সঙ্গে চলে যান ভারতের মালদহ জেলার সিংগাবাদে। যাওয়ার আগে তিনি দেখেছিলেন- তার গ্রামের দুই সাঁওতাল তরুণীকে লাঞ্ছিত করেছিল রাজাকাররা। তখন থেকেই প্রতিশোধের বারুদ জন্মেছিল তার মনের মধ্যে। বুকের সেই বারুদ দাবানলের মত জ্বলে ওঠে সিংগাবাদ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া শ্যাম মুর্মুর। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতারা শরণার্থী শিবির যান তাদের দেখতে। তখনই তাদের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার আগ্রহের কথা জানান শ্যাম মুর্মু। তারা শ্যাম মুর্মুকে মালদহ ডাক বাংলোয় দেখা করতে বলেন। এরপর তিনি প্রথমে মালদহের গৌড় বাগান তারপর শিলিগুড়িতে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে সাত নং সেক্টরের অধীনে সীমান্তসংলগ্ন মহদীপুর ক্যাম্পে যোগ দেন। মহদীপুর ঠিক সোনামসজিদ স্থল বন্দরের বিপরীতে। সেই ক্যাম্পে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার আড়গাড়াহাট, সদর উপজেলার পোড়াগাঁ, আমনুরা এবং ভোলাহাট উপজেলার দলদলিসহ কয়েকটি স্থানে বিজয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মুখোমুখি লড়াই করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

দেশ স্বাধীন হলেও ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি শ্যাম মুর্মুর। দিনমজুর হিসেবে অন্যের জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন আর শারীরিক সক্ষমতা আগের মতো নেই। বেশ কিছুদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, কানেও কম শোনেন এখন। তার সন্তানদের মধ্যে- ছোট ছেলে পলিটেকনিক থেকে পাশ করেছেন। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। অন্য দুই ছেলেও দিনমজুরের কাজ করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পেলেও সংসার চালাতে তা যথেষ্ট নয়। তাই কোনো রকমে দিন চলে যায় তার। নিজে কষ্টে থেকেও স্বপ্ন দেখেন দেশ যেন ভালো থাকে। মানুষের মধ্যে যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকে।

সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের প্রাক্তন প্রচার সম্পাদক সেরাজুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শ্যাম মুর্মুকে যুদ্ধের সময় থেকেই চিনি। তিনি সাহসিকতার সঙ্গে বেশ কয়েকটি বড় লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন।’

উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হিংগু মুর্মু বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শ্যাম মুর্মু  শুধু সাঁওতাল সম্প্রদায়ের জন্য নয়, এই এলাকার সব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য গর্বের। তিনি আমাদের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে পাশে থেকেছেন এবং পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।’

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago