বাইশরশি জমিদার বাড়ি সংরক্ষণের দাবিতে মানববন্ধন
ফরিদপুরের সদরপুরে অবস্থিত বাইশরশি জমিদার বাড়ি প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং বাইশরশি জমিদার বাড়িটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করার দাবিতে রাস্তায় নেমেছে ফরিদপুরের তরুণ সমাজ।
আজ মঙ্গলবার এ দাবিতে সকাল ১০টার দিকে সদরপুরে পুখরিয়া-সদরপুর সড়কের বাইশরশিতে জমিদার বাড়ির সামনের সড়কে প্রথমে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। ৩৪টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে ‘বাইশরশি জমিদার বাড়ি রক্ষা ও সংরক্ষণ আন্দোলন’-এর অংশ হিসেবে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ‘ফরিদপুরের সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যপ্রেমি সংগঠন’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
‘বাইশরশি জমিদার বাড়ি, সবাই মিলে রক্ষা করি’- শ্লোগানে দিনব্যাপী এ কর্মসূচি পালন করে ফরিদপুরের তরুণ সমাজ।
এরপর আন্দোলনকারীরা জমিদার বাড়ির চত্বরে ঢুকে মানব বলয় রচনা করে দীপ্ত কণ্ঠে শপথ নেয়, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। আন্দোলন যতদিন চলবে, ততদিন রাস্তায় থাকব। আন্দোলনের বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।’
বাইশরশি জমিদার বাড়ির সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে এ আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন সদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বাইশরশি জমিদার বাড়ী শুধু সদরপুরের নয় সারা দেশের একটি ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য রক্ষা করতে যা যা প্রয়োজন তা আমরা করব।
আরো বক্তব্য দেন ভাঙ্গা কে এম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোশায়েদ হোসেন ঢালী, বাইশ রশি উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এনামুল হক ফকির, কাশিয়ানীর ইয়ার আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম, ভাঙ্গা সিপিবির সদস্য প্রভাষ মালো প্রমুখ।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে সেপটোস ফোর এর সভাপতি হাওলাদার শামীম আহমেদ বলেন, এ ঐতিহ্য আজ একটি হিংস্র থাবার মুখে পড়েছে। মাটি খুঁড়ে ৫০ থেকে ১০০ বছরের একটি পুতুল পাওয়া গেলে তা নিয়ে গবেষণা চলে অথচ দুইশ বছরের পুরনো এই বাড়িটি রক্ষা না করে আজ বিক্রি করে দেওয়ার পায়তারা চলছে।
বাইশরশি জমিদার বাড়ির সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে আন্দোলনকারীরা সদরপুর উপজেরা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে ইউএনও পূরবী গোলদারের হাতে একটি স্মারকলিপি তুলে দেন।
এদিকে গত সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে এ আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কয়েকটি ভ্রমণ ও পরিবেশবাদী সংগঠনের সদস্য বাইশরশি জমিদার বাড়িতে আসেন। তারা জমিদার বাড়ির বিভিন্ন ঘর পরিস্কার করেন এবং বাড়ির চত্বরে মশাল প্রজ্জ্বালন করেন।
ফরিদপুর শহর থেকে ৩৪ কিলোমিটার দূরে সদরপুরের বাইশরশিতে এ জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। ১২৭০ বঙ্গাব্দে এ বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৭১ সালের পর এ বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হয়ে যায়। প্রায় ৩০ একর জমির উপর স্থাপিত এ জমিদার বাড়িতে ছোট-বড় কারুকার্যময় ১৪টি ভবন রয়েছে। এছাড়া রয়েছে পাঁচটি সান বাধানো পুকুর ও বাগান বাড়ি।
জাতীয় সংসদে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যাবর্তন আইন পাশ হলে এ বাড়ির উত্তরসুরী হিসেবে মালিকানা চেয়ে আবেদন করেন অমরেশ রায় চৌধুরী। বর্তমানে তিনি রাজশাহীতে বসবাস করছেন। মামলায় তিনি রায় পান। সরকার আপিল করলেও পূর্বের রায় বলবৎ থাকে। বর্তমানে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ‘বিশেষ আইন দ্বারা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষা আইনে’ ওই জমি পুনরায় সরকারের তত্বাবধানে আনার জন্য বাংলাদেশ সুপ্রডম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ২০১৮ সালে রিট পিটিশন করেন। এটি এখনও বিচারাধীন রয়েছে।
সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূরবী গোলদার বলেন, ওই সম্পত্তি ‘ক’ তালিকাভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি। এটি এ অঞ্চলের জমিদারদের সর্বশেষ নিদর্শন। এটি বেহাত হয়ে গেলে এ এলাকায় বাইশরশি জমিদারদের কোন অস্তিত্ব থাকবে না।
Comments