আগুনে পুড়ল দুর্গম চরের ৫ কৃষকের বাড়িঘর

রাজশাহীর গোদাগাড়ী শহরের মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অন্তর্গত সীমান্তবর্তী দুর্গম চর আলাতুলিতে আগুনে পুড়ে গেছে পাঁচ কৃষকের ঘরবাড়ি।
মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ছবি ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর গোদাগাড়ী শহরের মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অন্তর্গত সীমান্তবর্তী দুর্গম চর আলাতুলিতে আগুনে পুড়ে গেছে পাঁচ কৃষকের ঘরবাড়ি।

গতকাল মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে বলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক নাসির দ্য ডেইলি স্টারকে জানান।

পদ্মা নদী আলাতুলি চর থেকে গোদাগাড়ী শহরকে বিচ্ছিন্ন করেছে। আগুন নেভাতে গোদাগাড়ী বা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফায়ার সার্ভিস কাউকেই ডাকা হয়নি বলে কর্মকর্তারা জানান।

গত মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে এই প্রতিবেদক পুলিশের উপপরিদর্শক নাসিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

নাসির এই প্রতিবেদককে জানান, সকাল ১১টার কিছু পর কৃষক গোলাম মোস্তফার বাড়িতে সৌরচালিত বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে প্রথম আগুন লাগে। বাড়িগুলো খড়ের তৈরি হওয়ায় সহজে অপর চার কৃষকের বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে যায়। পরে গ্রামবাসী নিজেদের চেষ্টায় আগুন নেভাতে নেভাতে বিকেল তিনটা পার হয়ে যায়।

আলাতুলি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও ওই গ্রামের বাসিন্দা মেসবাহুল হক বলেন, ‘আগুন নেভাতে অদক্ষ গ্রামবাসী নিজেরাই কোদাল দিয়ে মাটি কেটে, বালি তুলে, বালতি ও সেচযন্ত্র ব্যবহার করে পানি দিয়ে চার ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে, ততক্ষণে পাঁচ পরিবারের অন্তত ১২টি ঘরবাড়ি, ঘরে সদ্য তোলা ফসল, গরু বিক্রি করা অর্থ, পরিধেয় বস্ত্র, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পুড়ে ছাই হয়ে যায়।’

মেসবাহুল হক বলেন, ‘গ্রামের বেশিরভাগ পুরুষ তখন জমিতে কাজে গিয়েছিলেন। অনেকে গোদাগাড়ী হাটে গিয়েছিলেন। গ্রামে শুধু নারীরাই ছিল। আমি তখন দূরে মসুরের জমিতে কাজ করছিলাম। হঠাৎ পট পট শব্দ শুনতে পাই। তার পরপরই আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পাই। আমরা কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে কেউ বালতি করে পানি দিতে লাগল, কেউ মাটি, বালি কোদালে কেটে আগুনের দিকে ছুঁড়তে লাগল। কয়েকজন দূরের জমি থেকে পেট্রোলের সেচ পাম্প থেকে পাতলা পলিথিনের পাইপে (যেটা দিয়ে কৃষকরা জমিতে  পানি পরিবহন করে) পানি দিতে শুরু করে। কাউকে আমরা ডাকিনি। ডাকলেও কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারত না।’

ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ পরিবারের একজন গোলাম মোস্তফার ছেলে আরিফ আলী আজ সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে মুঠোফোনে বলেন, ‘কারো ঘরে ছিল সদ্য তোলা সরিষা, কালাই ও মসুরির ডাল। কারো কারো ঘরে ধানও ছিল। আমাদের সবাই গরু পালে। তাই আমাদের ঘরে গরু বিক্রি করা টাকাও ছিল। সব শেষ। পোশাক, খাট, আলমারি, টিন সব পুড়ে শেষ।’

‘হাত পা ছাড়া এখন আমাদের আর কিছুই অবশিষ্ট নাই। রাত কাটাতে হয়েছে অন্যদের আশ্রয়ে। কী করে আবার ঘুরে দাঁড়ানো যায় সে চিন্তার কোনো কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছি না,’ তিনি বলেন।

গতকাল বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল ইসলাম সরকার আলাতুলি গ্রাম পরিদর্শন করেন। তিনি পাঁচ পরিবারের প্রত্যেককে তাৎক্ষণিকভাবে চাল, ডাল, তেলসহ শুকনো খাবার, কম্বল ও নগদ তিন হাজার টাকা সরকারি সহায়তা দেন।

যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রত্যেকেই তাদের সম্বলের সবই হারিয়েছেন। আমি তাদেরকে ঘরবাড়ি নতুন করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাতে বলে এসেছি।’

তিনি জানান, দুর্গম চরগুলোতে কোথাও আগুন নেভাতে সরকারি করণীয় উপায় সম্পর্কে তিনি খতিয়ে দেখবেন।

উল্লেখ্য, রাজশাহী অঞ্চলে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করার সঙ্গে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। গত মঙ্গলবার রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে দুটি পৃথক ঘটনায় দুই কৃষকের খড়ের বাড়ি পুড়ে গেছে। এই দুই বাড়ীতে রান্নার চুলা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল।

Comments

The Daily Star  | English

LPG tanker in Chattogram still burning after 13 hours

9-member probe body formed by Chittagong Port Authority

5h ago