শেবাগ-ঝড়ে এলোমেলো বাংলাদেশ লিজেন্ডস
খালেদ মাহমুদ সুজনকে ছক্কা হাঁকিয়ে যখন বীরেন্দর শেবাগ জয় নিশ্চিত করেন, তখনও ইনিংসের ৫৯ বল বাকি! অপর প্রান্তে থাকা শচীন টেন্ডুলকার কার্যত দর্শক হয়েই ছিলেন। তা হবেন না-ই বা কেন? শেবাগ যে রীতিমতো ঝড় বইয়ে দেন বাংলাদেশ লিজেন্ডসের বোলারদের ওপর। তার ব্যাটে চড়ে ১০ উইকেটে ম্যাচ জিতেছে ভারত লিজেন্ডস।
শুক্রবার রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজের ২০২১ সালের প্রথম ম্যাচ গড়ায় মাঠে। মহারাষ্ট্রের রায়পুরে সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে এই আয়োজনে দেখা মেলে পুরনো চেহারার শেবাগের। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৩৫ বলে ৮০ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। ১০ চারের সঙ্গে মারেন ৫ ছক্কা। ওপেনিংয়ে তার সঙ্গী টেন্ডুলকার সে তুলনায় বেশ রয়েসয়ে খেলেন। ২৬ বলে ৫ চারে ৩৩ রান আসে লিটল মাস্টারের ব্যাট থেকে।
টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১১০ রান কোনো আহামরি লক্ষ্য নয়। শেবাগ তেতে ওঠায় তা আরও মামুলি হয়ে পড়ে। মাত্র ১০.১ ওভারে ভারত পেয়ে যায় জয়ের স্বাদ। দ্রুত ম্যাচ শেষ হওয়ায় বাংলাদেশের কেবল চারজনের বল হাতে নেওয়ার সুযোগ ঘটে। অধিনায়ক মোহাম্মদ রফিক ছাড়া বাকিরা রান দেন ওভারপ্রতি ১০ বা এর চেয়ে বেশি।
লক্ষ্য তাড়ায় একদম প্রথম বল থেকেই চড়াও হন শেবাগ। রফিককে টানা ২ চারের পর হাঁকান ছক্কা। পরে আবারও মারেন চার। সবমিলিয়ে ওই ওভার থেকে আসে ১৯ রান। স্পিনের পর আক্রমণে পেস এনেও লাভ হয়নি। মোহাম্মদ শরীফের করা পরের ওভারে চার-ছয়ে শেবাগ নেন ১০ রান। তার এই বেধড়ক পিটুনি চলতেই থাকে। পঞ্চম ওভারে আলমগীর কবিরকে টানা ২ চারের পর ছক্কায় সীমানাছাড়া করেন। ফলে মাত্র ২০ বলে ফিফটি ছোঁয়া হয়ে যায় তার।
চতুর্থ ওভারে ভারতের দলীয় সংগ্রহ পৌঁছায় পঞ্চাশে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষে তা দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৭৪ রান। এরপর ৩০ গজের বৃত্তের বাইরে বাংলাদেশ বেশি ফিল্ডার রাখার সুযোগ পেলেও একই ধাঁচে চলতে থাকে শেবাগের ব্যাট। তার ধ্বংসযজ্ঞের কোনো জবাব জানা ছিল না রফিক-সুজনদের।
শেবাগের ঝলকানির মাঝে টেন্ডুলকারও দেখান নিজের কারিশমা। তৃতীয় ওভারে প্রথমবার বল মোকাবিলার সুযোগ মেলে তার। আলমগীরের প্রথম ডেলিভারিতেই চার। ওই ওভারে আরেকটি চার মারেন তিনি। অতীতের মতোই চোখ জুড়ানো আরও কিছু শট বেরোয় তার ব্যাট থেকে।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দারুণ। পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫০ রান তুলেছিল তারা। নাজিমউদ্দিন ছিলেন মারমুখী মেজাজে। জাভেদ ওমর বেলিম তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন বেশ। কিন্তু অষ্টম ওভারে এই জুটি ভাঙার পর হুড়মুড় করে ভেঙে পরে ব্যাটিং লাইনআপ। আর ৫০ রান যোগ করতে ১০ উইকেটের সবগুলো হারায় বাংলাদেশ।
নাজিমউদ্দিন ৩৩ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় করেন ৪৯ রান। বেলিম ১২ রান করেন ১৯ বল খেলে। এছাড়া, দুই অঙ্কে পৌঁছান কেবল রাজিন সালেহ। ২৪ বলে ১২ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। ভারতের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন যুবরাজ সিং, প্রজ্ঞান ওঝা ও বিনয় কুমার।
মহৎ এক উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়েছে এই ওয়ার্ল্ড সিরিজ। তা হলো নিরাপদ সড়ক নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো। বাংলাদেশ ও স্বাগতিক ভারতের পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার সাবেক ক্রিকেটাররা এতে অংশ নিচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ার খেলার কথা থাকলেও তারা সরে দাঁড়ায় আগেই। আয়োজন চলবে আগামী ২১ মার্চ পর্যন্ত।
গত বছর মার্চে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওয়ার্ল্ড সিরিজের চারটি ম্যাচ। এরপর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে তা স্থগিত করা হয়। নতুন করে শুরু করার বদলে পুরনো ম্যাচগুলোকে বিবেচনায় নিয়েই এক বছর বাদে ফের আসরটি মাঠ নামিয়েছেন আয়োজকরা।
Comments