ভেঙে ফেলা হলো পবিপ্রবি’র সেই ‘স্মারক যুদ্ধবিমান’

বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের ইউনিভার্সিটি স্কয়ারে স্থাপিত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) দিক নির্দেশক স্মারক যুদ্ধবিমানটি (মনুমেন্ট) ভেঙে ফেলা হয়েছে।
বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের ইউনিভার্সিটি স্কয়ারে ভেঙে ফেলা স্মারক যুদ্ধবিমানটি। ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের ইউনিভার্সিটি স্কয়ারে স্থাপিত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) দিক নির্দেশক স্মারক যুদ্ধবিমানটি (মনুমেন্ট) ভেঙে ফেলা হয়েছে।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নির্মাণাধীন পায়রা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণে নিয়োজিত মাটি কাটার যন্ত্র (এক্সাভেটর) এটি ভেঙে ফেলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা এ বিষয়ে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় পরস্পরকে দোষারোপ করছেন পবিপ্রবি ও লেবুখালী এলাকায় পায়রা নদীর ওপর চলমান পায়রা সেতু প্রকল্প কর্মকর্তারা।

আজ রোববার দুপুরে পবিপ্রবি ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. স্বদেশ সামন্ত ও জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

পবিপ্রবি সূত্র জানিয়েছে, ২০০৩ সালে বিমান বাহিনী অকেজো এফ-৬ বিমানটি পবিপ্রবি কর্তৃপক্ষকে উপহার হিসেবে দেয়। সেটি বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাগলার মোড় এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক নির্দেশক হিসেবে স্থাপন করা হয়। এই মোড় থেকে পবিপ্রবি মূল ক্যাম্পাস পাঁচ কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত। বিমানটি স্থাপনের পর এই মোড়ের নাম দেওয়া হয় ইউনিভার্সিটি স্কয়ার।

বিমান বাহিনীর নিজস্ব খরচে ও জনবল দিয়ে বিমান বাহিনীর সদর দপ্তর থেকে এই বিমানটি ইউনিভার্সিটি স্কয়ারে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল বলে জানান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘বিমানের সঙ্গে পরিচিতি করার জন্য বিজ্ঞান মনস্ক শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর জন্য স্থাপিত এই বিমানটি অন্য কোথাও স্থাপন করা হলে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ উপকৃত হতেন।’

লেবুখালী সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুল হালিম বলেন, ‘পায়রা সেতুর পটুয়াখালী প্রান্তের এপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্য ইউনিভার্সিটি স্কয়ার থেকে স্মারক যুদ্ধবিমানটি অপসারণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ২০২০ সালের অক্টোবর মাস থেকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে তিন বার কথা বলেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটি সরানোর কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করার সময় ঠিকাদারি কাজে নিয়োজিত লোকজনের দ্বারা এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

পবিপ্রবি ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, ‘ইউনিভার্সিটি স্কয়ারে স্থাপিত যুদ্ধবিমানটি সরানোর জন্য আমাদেরকে একাধিকার চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি অপসারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সক্ষমতা না থাকায় আমরা এ বিষয়ে বিমান বাহিনীর সদর দপ্তর চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনার দিন না জানিয়েই হঠাৎ করে সেটি ভেঙে ফেলায় তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত মনুমেন্টটি মেরামত করে পুনঃস্থাপন করা যায় কিনা তা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘নির্দেশক স্তম্ভটিতে থাকা স্মারক যুদ্ধবিমানটি ভেঙে না ফেলে যদি সংরক্ষণ করা হতো তাহলে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধনে আবার ব্যবহার করা যেত। বিশ্ববিদ্যালয় ও সেতু কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালি এবং অব্যবস্থাপনার কারণে যুদ্ধবিমানটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’

আরেফিন মহীদ নামের একজন ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘দেশের অধিকাংশ মানুষ এ ধরনের স্থাপনা চোখে দেখে বিমান ভ্রমণের স্বাদ মেটান। বিশেষ করে এই যুদ্ধবিমানটি দেখে শিশু মনে বৈমানিক হওয়ার স্বপ্ন তৈরি হয়। দৃষ্টি নন্দন পটুয়াখালী ইউনিভার্সিটি নির্দেশকের ওপরে থাকা যুদ্ধবিমানটি ভেঙে ফেলার নিন্দা প্রকাশের ভাষা নেই।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago