সাহিত্যে নারী-পুরুষ বলে আলাদা কোনো ভেদ নেই: সেলিনা হোসেন
সেলিনা হোসেন বাংলাদেশের অন্যতম কথাসাহিত্যিক। তার জন্ম ১৪ই জুন ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে, রাজশাহীতে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ডিগ্রি লাভের পর তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি দীর্ঘকাল বাংলা একাডেমিতে চাকরি করেছেন। একাডেমির পরিচালক পদে থাকা অবস্থায় তিনি অবসর নেন।
সেলিনা হোসেন বহু ছোটগল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধের রচয়িতা। তিনি ছোটদের জন্যেও অনেক লিখেছেন। তার লেখার জগত বাংলাদেশের মানুষ, তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। জীবনের গভীর উপলব্ধির প্রকাশকে তিনি শুধু কথাসাহিত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, শাণিত ও শক্তিশালী গদ্যের নির্মাণে প্রবন্ধের আকারেও উপস্থাপন করেছেন। বাঙালির অহংকার ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তার লেখায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তার গল্প উপন্যাস ইংরেজি, রুশ, মেলে এবং কানাডী ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কারসহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার যাপিত জীবন এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরন্তর ঘন্টাধ্বনি উপন্যাস পাঠ্যসূচিভুক্ত। শিলচরে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি উপন্যাস এমফিল গবেষণাভুক্ত। ২০০৫ সাল থেকে শিকাগোর ওকটন কলেজের সাহিত্য বিভাগ দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্য কোর্সে তার হাঙ্গর নদী গ্রেনেড উপন্যাসটি পাঠ্যসূচিভুক্ত হয়। ছিটমহল নিয়ে বাংলা সাহিত্যে প্রথম তার উপন্যাস ভূমি ও কুসুম। নারী দিবস, দেশের অবস্থা, সাহিত্য সংস্কৃতি; এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে। আলাপ করেন ইমরান মাহফুজ।
৮ মার্চ, আজ নারী দিবস। দেশে দৃশ্যমান নারীদের ক্ষমতায়ন হলেও সাহিত্যে পরিবর্তন লক্ষণীয় নয় কেন?
সাহিত্যে নারী লেখকরা অনেক এগিয়ে এসেছেন। বিচিত্রধর্মী লেখাও লিখছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা সাহিত্য ক্ষমতায়নের জায়গা নয়। সাহিত্য সৃজনশীলতার জায়গা। সৃজনশীলতা শক্তির নিজস্ব বিকাশ। এখানে নারী-পুরুষ বলে আলাদা কোনো ভেদ নেই।
আপনার লেখায় জীবনের কথা যেভাবে আসছে সেভাবে আসেনি নারী-পুরুষ, প্রেম-ভালোবাসা, সেটা কেন?
প্রেমতো জীবনেরই অংশ। কখনো আসেনি তা নয়। খুঁজে দেখুন পাবেন। তবে কাহিনীর প্রয়োজনে প্রেম না এলে অকারণে তো আনতে পারা যায় না।
একজন লেখক কতটা সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যে থাকেন? আর কতটা তিনি পালন করতে পারেন?
শিল্পের জন্য শিল্প, এই সংজ্ঞা তো কতকাল আগেই বর্জিত হয়েছে। শিল্পে সামগ্রিক দায়বদ্ধতা সৃজনশীল মানুষের গভীরতম বোধ, তাকে রূপায়িত করা দরকার। কেউ যদি এড়াতে চান তো এড়াবেন। সেটা তার স্বাধীনতা।
সৃজনশীল চর্চা নারীদের জন্য খুব কঠিন বলে প্রায় শোনা যায়, সে ক্ষেত্রে আপনার সফলতায় পরিবারের ভূমিকা কেমন ছিল?
পরিবারের কাছ থেকে আমি বাধা পাইনি। লেখালেখির শুরু থেকে পরিবারের সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি বলেই এই ৫৫ বছর ধরে লেখালেখির সঙ্গে আছি। সেজন্য বলতে পারি, আমার এক হাতে লেখালেখি, অন্য হাতে বাকি জীবন। সকলের সহযোগিতা পেয়েছি বলে এভাবে নিতে পারা আমার জন্য সহজ হয়েছিল।
সাহিত্য সংস্কৃতিতে সমাজের বহুমাত্রিক সংকট কতটা ফুটে উঠছে বলে মনে করেন? সমাজ গতিশীল রাখতে শিল্পের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত? তা কি হচ্ছে?
সমাজের বহুমাত্রিক সংকট সাহিত্যের প্রধান দিক। বাংলাদেশের সাহিত্য এমন নানামুখী ধারায় রচিত হচ্ছে। নবীন-প্রবীণ লেখকরা শিল্পের ভূমিকায় সমাজের সৃষ্টিশীলতায় প্রধান করে দেখেন। লেখকরা এই মৌলিক বিবেচনা থেকে দূরে থাকেন না।
আপনার সৃষ্ট চরিত্ররা নিম্নবিত্ত হলেও যথেষ্ট প্রতিবাদী। এ প্রতিবাদ সরকারের প্রতি না নিয়ম-কানুনের উপর?
প্রতিবাদী হওয়া ব্যক্তির কণ্ঠস্বর। জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিবাদী হতে হয়। যে ব্যক্তি নতজানু মনোভাব নিয়ে দিনযাপন করে সে তার ব্যক্তিত্বের বোধকে হারায়। নিম্নবিত্ত মানুষরা মানুষ হিসেবে গল্পে মর্যাদা পায়। তাদের প্রতিবাদের জায়গা অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সেটা সরকারই করুক বা সিস্টেমের মাধ্যমে হোক, দুটো ক্ষেত্র তাদের কাছে সমান।
উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের জন্য যেকোনো ধরনের মৌলবাদ বা ধর্মান্ধতা অত্যন্ত ক্ষতিকর। কিন্তু সরকার যেভাবে তাদের সামলাচ্ছে তা সাহিত্য সংস্কৃতির দিক থেকে কতটা যৌক্তিক বলে মনে করেন?
রাষ্ট্রের জন্য ধর্মান্ধতা ক্ষতিকর। ধর্মান্ধতা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সামাজিক মূল্যবোধের মানবিক চেতনা ধ্বংস করে। বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারির ভাষণে বলেছিলেন, আমি স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই যে, আমাদের দেশ হবে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক দেশ। এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, হিন্দু, মুসলমান সবাই সুখে থাকবে, শান্তিতে থাকবে। তিনি আরও বলেছেন ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’ কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের দীর্ঘ সময়ে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আমরা এই দর্শনের জায়গাটি ঠিকমত পাইনি। না পাওয়ার ব্যর্থতায় দেশ ও জাতি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাহিত্য সংস্কৃতির দিক থেকে মনে করি এই ব্যবস্থা থাকছে না বলে মৌলবাদীরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার মতো জঘন্য কাজ করতে দ্বিধা করেনি।
সাম্প্রতিক সময়ে ভাস্কর্য ও মূর্তি নিয়ে যে বিতর্ক উঠেছে সে বিষয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গা থেকে আপনার মতামত জানাবেন।
ভাস্কর্য ভাঙা একটি জঘন্যতম অপরাধ। শিল্প-সংস্কৃতির জায়গা থেকে নির্মিত হয় ভাস্কর্য। ইতিহাস ঐতিহ্যের পটভূমিতে নির্মিত ভাস্কর্য জাতির শিল্প সাধনার বড় দিক। তাদেরকে ভাস্কর্যের মাধ্যমে স্মরণ রাখা হয়। যারা সমকালীন জাতির সামনে দিকনির্দেশনার চিন্তা জাগিয়ে তুলেন। আবার অনেক সংস্কৃতির চর্চার বিভিন্ন মাধ্যমে মানবিকবোধের পরিসর বিস্তৃত করেন। এভাবে জাতির কাছে বড় অবদানের স্বীকৃতি পেলে তাদের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। পৃথিবীর সব দেশে ভাস্কর্যের এই মূল্যায়ন প্রচলিত আছে। ইসলাম ধর্মের দেশেও ভাস্কর্য আছে। তারাও ভাস্কর্যকে শিল্পের মাধ্যমে চিন্তার বলয়ে রেখেছে। বড় মানুষের প্রেরণার উৎস হিসেবে ভাস্কর্য একটি প্রতীকী দিক। ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্ক মূর্খতার সামিল। ধর্মান্ধরা ভাস্কর্যকে মূর্তি বলেন। তারা শিল্পের সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করেন।
দেশে সামাজিক মুক্তি না হলে মানবিক মূল্যবোধের দশা কী হতে পারে, একজন জীবন শিল্পী হিসেবে বলবেন।
সামাজিক মুক্তি না হলে মানবিক মূল্যবোধের দশা কি হতে পারে তার বড় প্রকাশ ব্যাপকভাবে নারী ও শিশু ধর্ষণের ব্যাপকতা। সরকার ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের আইন পাশ করেছে। কিন্তু বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় ভুক্তভোগী ন্যায় বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তায় থেকে যাচ্ছে। আইন পাশ হওয়ার পরও আমরা পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় দেখছি দেশজুড়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধের এ এক চরম অবক্ষয়।
রাষ্ট্রের ৫০ বছর হয়ে গেলো। বছর ঘুরে বছর আসে কিন্তু জনগণের ভাগ্যের বদল হয় না। মৌলিক অধিকার অর্জিত হয়নি এখনো। কারণ কী মনে হয়?
বিশাল জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই ছোট দেশে অর্থনৈতিক কারণে মৌলিক অধিকার মেটানো খুব দ্রুত সম্ভব নয়। তারপরও বলতে হবে, যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তাদের আন্তরিক শাসন থাকলে পরিস্থিতি বদলাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসন আমলে এগিয়েছে দেশ।
এক সময়ের আলোচিত ছিটমহল বিষয়টি নিয়ে প্রথম উপন্যাস আপনার। প্রকাশিত হয়েছে ২০০৫ সালে ভূমি ও কুসুম শিরোনামে। ছিটমহল সমস্যার সমাধানও হয়েছে। এত আগে কীভাবে ভাবলেন?
ছিটমহলের বিষয়টি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ২০০৫ সালে প্রথমে পেয়েছি এবং সে সময় নেদারল্যান্ডের একজন অধ্যাপক ইউলিয়াম ভ্যান সেন্ডেল একটি গবেষণা প্রকাশ করে। সেটি পড়ে আমি খুবই আন্দোলিত হয়েছি। তখন আমি ভাবলাম যে এটি একটি সুন্দর উপন্যাসের বিষয় হতে পারে। সে সময় আমি ঘুরে আসি দহগ্রাম, পঞ্চগ্রাম, নীলফামারী থেকে। সেখানে বসবাসরত মানুষের যাপিত জীবন, সুখ, দুঃখ, কারো কারো অবরুদ্ধ জীবন, সীমান্তরক্ষীদের হাতে নারীদের উপর নির্যাতন এসব আমাকে খুব ভাবায়। ক্রমে এই বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠি এবং লিখি ‘ভূমি ও কুসুম’ উপন্যাস।
আপনার জীবনকালে দেশ স্বাধীনতা, দুর্ভিক্ষ, স্বৈরাচারী শাসনসহ অনেক ঘটনার সাক্ষী। কথাসাহিত্যের সংসারে যেভাবে নিত্যদিনের ঘটনাগুলো প্রবেশ করেন।
আমি মনে করেছি যা কিছু আমাদের সামাজিক সাংস্কৃতিক জীবনের ঘটনা তাকে সাহিত্যের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মকে জানানো উচিত। সাহিত্য একটি শিল্প-মাধ্যম। প্রত্যেক দেশের মানুষই তার শিল্প মাধ্যমে নিজের জাতিসত্তার আইডেনটিটি খুঁজে পেতে চায়। প্রজন্মকে নিজের ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার ধারণা থেকে এই চিন্তাটি আমার মাথায় আসে। অন্যদিকে উপন্যাসের বিষয় বৈচিত্র্য নানামুখী করে তোলার দিক থেকেও আমি এভাবে বিষয় নির্বাচন করি।
হাঙ্গর নদী গ্রেনেড উপন্যাসের চরিত্ররা আপনার খুব কাছ থেকে দেখা অভিজ্ঞতা, না নির্মিত?
হাঙ্গর নদী গ্রেনেড উপন্যাসের শেষ ঘটনা, যেখানে সে তার ছেলেকে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দিয়েছেন সেটি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের একটি সত্যি ঘটনা। ঘটনাটি আমাকে বলেছিলেন আমার শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল হাফিজ। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় রণাঙ্গনে সাংবাদিকতার কাজ করেছেন। সেই সূত্রে যশোরের কালীগঞ্জের এই ঘটনাটি তিনি জানতে পারেন। ১৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর সঙ্গে প্রথম ঢাকায় ঢোকার পরে আমার বাড়িতে এসেছিলেন। ঘটনাটি বলে বলেছিলেন, একটি গল্প লিখো। উপন্যাসের বাকি চরিত্র এবং অন্যান্য ঘটনা আমার বানানো। আমি শৈশব থেকে বুড়ি চরিত্রটি সৃষ্টি করি এমনভাবে, যার সিদ্ধান্ত গ্রহণে একটি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। যে কারণে স্বাধীনতার জন্য এমন একটি সিদ্ধান্ত সে নিতে পেরেছিল। আমাদের চারপাশের মানুষের মধ্য থেকেই আমি উপন্যাসের চরিত্র খুঁজি। তাকে নিজের কল্পনার আলোকে পূর্ণ করি।
মনে হয় আপনার লেখা গল্প-উপন্যাসগুলোর চরিত্রদের একটা বিশেষ ভূমিকায় উপস্থাপিত। সে সম্পর্কে কিছু বলুন।
একটি বিশেষ ভূমিকা বলতে কি বোঝাতে চেয়েছেন তার ব্যাখ্যা করবেন কি আপনি? লেখক তার গল্পের চরিত্র নির্মাণ করেন বাস্তব দেখে। তার সঙ্গে সঙ্গে নিজের কল্পনা, অনুভব, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি। গল্প বা উপন্যাসে বাস্তব জীবনকে নিয়ে ভিন্ন চরিত্র নির্মাণ করেন লেখক। যদি সেসব ইতিহাসের মানুষ হয় তাহলে তার সৃষ্টিতো সেই পরিপ্রেক্ষিতেই হবে। নইলে লেখক তার প্রতিটি চরিত্রকেই বিশেষ বৈশিষ্ট্যে নির্মাণ করতে চান, যার মধ্যে পাঠক তার স্বকীয় সত্তা খুঁজে পাবে।
কখনো কখনো আপনার লেখা পড়ে মনে হয়, কথকের বুকে কবিত্ব শক্তি বিদ্যমান, আসলে কি তাই?
আমি গদ্য লিখি। কবিতাতো লিখিই না, গদ্যের আঙ্গিকেও না। গদ্য যদি কারো কাছে কবিতা মনে হয় সেটা পাঠকের গ্রহণ করার ইচ্ছা-অনিচ্ছা। লেখকের দায় সেখানে নাই। আমি পাঠক হিসেবে গদ্যের মধ্যে কবিতা খুঁজি না।
ভাষা আন্দোলন নিয়ে লিখা মুগ্ধকর ভাষায় যাপিত জীবন। বিষয়টা আপনার অভিব্যক্তি জানতে চাই।
যাপিত জীবন ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত উপন্যাস। এই উপন্যাসে পাঠক হয়তো নিজের ঐতিহ্যের দিকে তাকাতে পারেন একটি গল্পের মাধ্যমে, সে জন্য হয়তো ভালো লাগে পাঠকের।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে আপনার উপন্যাস ‘পূর্ণ ছবির মগ্নতা’। এমন বড় মানুষকে নিয়ে উপন্যাস লিখা একটি কঠিন কাজ, কিভাবে শেষ করলেন?
রবীন্দ্রনাথ আমাদের ভূখণ্ডে যে কয় বছর স্থায়ীভাবে বাস করেছিলেন, সেই পটভূমিতে লিখছি ‘পূর্ণ ছবির মগ্নতা’। রবীন্দ্রনাথের জীবনের পূর্ণতায় আমি দেখাতে চেয়েছি এখনকার পূর্ববঙ্গের নদী ও দরিদ্র মানুষের জীবন। আমাদের ভূখণ্ডে না এলে জনজীবন দেখার অভিজ্ঞতা তিনি পেতেন না। হৃদয়-জোড়া প্রকৃতিও দেখা হতো না। এখানে বসে তিনি যে গল্পগুলো লিখেছিলেন আমি সেই গল্পের কাহিনী জড়িয়েই গল্পের চরিত্রের নামও নিয়েছি। এভাবে আমি রবীন্দ্রনাথের সময় ও জীবনকে নতুন আঙ্গিকে দেখার চেষ্টা করেছি।
সাহিত্য জীবনে প্রথম যে বইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং পরবর্তী সময়ে যে বইগুলো সেরা মনে হয়?
অনেক বই। আমি খুব পড়ুয়া ছিলাম। দু-একটি বইয়ের নাম করতে পারব না। এই মুহূর্তে আমার হাতে আছে ইসমাইল কাদারের ‘দ্য জেনারেল অব দ্য ডেড আর্মি’। বইটি ফরাসি ভাষা থেকে অনূদিত। ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। ইসমাইল এখন প্যারিসে থাকেন। তার নিজের দেশ আলবেনিয়া।
বিশ্বায়নের চাপে জাতীয় সাহিত্যচর্চা প্রচণ্ড চাপের মুখে আছে বলে মনে করেন অনেকে। আপনি কতটা আছে বলে মনে করেন?
জাতীয় সাহিত্য দেশের সম্পদ। বিশ্বায়নের চাপের মুখে আছে বলে আমি মনে করি না। এটি একটি কাজে চিন্তা। পাঠাভ্যাস কমে গেছে, বর্তমানে এমন একটি কথা চালু হয়েছে। তার মানে এই নয় যে তারা বিদেশি সাহিত্য পড়ে। তারা কিছুই পড়ে না। জাতীয় সাহিত্য জাতির অস্তিত্বের অংশ। একে চাপের মুখে ফেলা সচেতন মানুষের কাজ নয়। যারা এসব কথা প্রচার করে তারা হীনমন্যতায় ভোগে।
সমকালীন বাংলাভাষার অন্যতম কথাসাহিত্যিক আপনি। এখনো পাঠকের জায়গায় কতটা অবস্থান করেন?
আমি আগেই বলেছি লেখালেখির শুরু থেকেই আমি পড়ুয়া স্বভাবের। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে যখন অন্যরা আড্ডা দিয়েছে, তখন আমি লাইব্রেরিতে গিয়ে ঢুকেছি। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অন্য বইও পড়ছি একই মনোযোগে। তাহলে কি বলবো? পাঠক হিসেবে আমি খারাপ না।
মা মাটি মানুষ একজন লেখকের হৃদয়ে কতটা জায়গা জুড়ে মিশে থাকে?
পুরোপুরি মিশে আছে। এসব থেকে বিচ্ছিন্ন হয় কোনো লেখকই তার সাহিত্যকর্ম করতে পারে না। একটি মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসের জন্যও দেশ ও মানুষের পটভূমির প্রয়োজন হয়।
সাহিত্যে এসে কি পেলেন, আর কি হারালেন?
পেয়েছি পাঠকের ভালোবাসা। অনেক, অনেক ভালোবাসা। হারাইনি কিছুই।
Comments