কুষ্টিয়ায় এনআইডি জালিয়াতি: ৫ নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা

কুষ্টিয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চার নির্বাচন কর্মকর্তা ও এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কুষ্টিয়ার জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি ও জেলার কুমারখালী থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। দুটি মামলাতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিনটি ধারা ব্যবহার করা হয়েছে।
কুষ্টিয়ার নির্বাচন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান আজ সোমবার সকালে বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানায় বাংলাদেশ ভোটার তালিকা আইন-২০১৯’র ২০ ধারা, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০’র ১৭ ধারা, ১৮৬০ সালের পেনাল কোডের ৪২০, ৪৬৮ ও ১০৯ ধারা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ সালের ২৪, ৩৩ ও ৩৫ ধারায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করা হয়। দায়ের হওয়া মামলার আসামিরা হলেন— ঢাকার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব (সাবেক জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা) নওয়াবুল ইসলাম, ফরিদপুরের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা (সাবেক কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা) জিয়াউর রহমান, মাগুরা সদরের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (সাবেক কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা) অমিত কুমার দাস ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক জিএম সাদিক।
কুমারখালী থানায় দায়ের হওয়া মামলার একমাত্র আসামি হলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (সাবেক কুমারখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা) ছামিউল আলম। ভোটার তালিকা আইন-২০১৯’র ১৮ ধারা, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০’র ধারা ১৭ ও পেনাল কোডের ধারা ৪২০, ৪৬৮ ও ১০৯ এবং ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৪ ও ৩৫ ধারায় এ মামলা করা হয়।
মামলার তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় পরিচপত্র জালিয়াতি করে কুষ্টিয়া শহরে প্রায় শত কোটি টাকার একটি সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে একটি চক্র। শহরের ১১০ এনএস রোডের বাসিন্দা এমএমএ ওয়াদুদ ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের নাম-তথ্য ব্যবহার করে ছয় ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে এ সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
ঘটনা জানাজানি হলে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে ঘটনা তদন্তে নামে নির্বাচন কমিশন। তদন্তে কুষ্টিয়া জেলা নির্বাচন অফিসের তৎকালীন কর্মরত পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়।
মামলার বাদী জানান, ২৬ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন থেকে মামলা দায়েরের জন্য কুষ্টিয়ার জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ নির্দেশনার পর তিনি জেলার সরকারি আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ করে আদালতের স্মরণাপন্ন হন। আদালত গত ১ মার্চ এ বিষয়ে নির্দেশনা দেন। মামলার আসামিরা বর্তমানে কর্মস্থলে কোনো দাপ্তরিক কাজ করতে পারবেন না।
জমি জালিয়াতির ঘটনায় এমএমএ ওয়াদুদের করা মামলায় মোট ছয় আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। গত বছরের মার্চের এই জালিয়াতির বিষয়টি সামনে এলে ওই মাসেরই বিভিন্ন সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মূলহোতা হলেন কুষ্টিয়া শহর যুবলীগের আহ্বায়ক আশরাফুজ্জামান সুজন ও জমির ক্রেতা মহিবুল ইসলাম।
যাদেরকে দিয়ে জালিয়াতি করা হয়েছে তারা হলেন— শহরের আড়ুয়াপাড়া এলাকার খন্দকার আবুল হোসেনের ছেলে ওয়াদুদ ওরফে মিন্টু খন্দকার, কুমারখালী উপজেলার শালঘর মধুয়ার আতিয়ারের ছেলে মিলন হোসেন ও তার দুই বোন ছোনোয়ারা খাতুন ও জাহানারা খাতুন।
Comments