আদালতেও নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন কিশোর
আদালতে হাজির হয়ে হেফাজতে থাকাকালে নির্যাতনের শিকার হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মামলার আসামি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকার মহানগর দায়রা ও জজ আদালতে তিনি এ বর্ণনা দেন।
ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ কিশোরের বক্তব্য রেকর্ড করেন এবং দু-একদিন পর আদেশ দেবেন বলে জানান।
কিশোরের বক্তব্য রেকর্ডের পর তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে দু-একদিন পর আদেশ দেওয়া হবে এবং আদেশটি একটু বড় হবে।’
আদালত থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানান, আজ দুপুর দেড়টার দিকে কিশোর আদালতে আসেন। এরপর প্রায় আধাঘণ্টা ধরে তিনি আদলতে নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন।
আদালতকে আর্জিতে কিশোর বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক। প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গত ৫ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আমাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। কিন্তু, ২ মে আনুমানিক পৌনে ৬টার সময় ১৬ থেকে ১৭ জন সাদা পোশাকধারী লোক আমার কাকরাইলের বাসা থেকে জোর করে হাতকড়াসহ মুখোশ পরিয়ে অচেনা নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়।’
‘২ মে থেকে ৪ মে পর্যন্ত’ নির্যাতনের কথা আদালতকে জানিয়ে কিশোর বলেন, ‘করোনা নিয়ে আমার আঁকা কিছু কার্টুন দেখিয়ে কেন এঁকেছি এবং কার্টুনের চরিত্রগুলো কারা প্রশ্ন করে। এক পর্যায়ে প্রচণ্ড জোরে আমার কানে থাপ্পর মারে। কিছুক্ষণের জন্যে আমি বোধশক্তিহীন হয়ে পড়ি। বুঝতে পারছিলাম আমার কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তারপর স্টিলের পাত বসানো লাঠি দিয়ে পায়ে পেটাতে থাকে। যন্ত্রণা ও ব্যথায় সজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘২ মে থেকে ৪ মে পর্যন্ত আমার ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালানো হয়। পরবর্তীতে আমি নিজেকে র্যাবের কার্যালয়ে দেখতে পাই। র্যাবের কার্যালয়ে (লেখক) মুশতাক আহমেদের সঙ্গে দেখা হয়। মুশতাক আহমেদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় সে আমাকে জানায় তাকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল।’
‘বর্তমানে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ, কান দিয়ে পুঁজ পড়ে, হাঁটতে পারি না, হঠাৎ করে পড়ে যাই। এবং শরীরে আরও নানাবিধ রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
এরপর কিশোর তার বক্তব্য আমলে নিয়ে ন্যায়বিচারের স্বার্থে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আদেশ দিতে আদালতের কাছে আর্জি করেন।
আরও পড়ুন:
কিশোরকে নির্যাতনের অভিযোগ: সেশন কোর্টে আবেদন করার নির্দেশ
কিশোর-মুশতাকের সামনে অসহায় এক সাংবাদিক
নির্যাতন করা হয়েছে, এখন হাসপাতালে যাচ্ছি: কিশোর
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা নয়, বাতিল করতে হবে’
১০ মাস পর মুক্তি পেলেন কার্টুনিস্ট কিশোর
কিশোরের ক্ষোভ, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা
‘কিশোরের সঙ্গে আজ মুশতাকেরও মুক্ত হওয়ার কথা ছিল’
যা ঘটেছিল মুশতাককে ধরে নিয়ে যাওয়া সেই রাতে
কিশোর ভালো আছেন, এখনো কানের বিশেষ উন্নতি হয়নি
কার্টুনিস্ট কিশোরের রিমান্ড নামঞ্জুর
কারাবন্দি কার্টুনিস্ট কিশোর পেলেন রবার্ট রাসেল কারেজ অ্যাওয়ার্ড
Comments